“The Mountain must not go to the Prophet, the Prophet must go to the Mountain.”ছোট বেলায় বাবার কাছে শেখা এই

কথার মর্ম সারাজীবন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। জেনেছি ও বুঝেছি যে এর উপর কোন সত্য নেই। এর চেয়ে কোন পরমানন্দ নেই। মাথা উঁচু করে আত্মসন্মান নিয়ে চলার এই একটাই তরিকা।

ভাল্যু অ্যাডিশানের কোন বিকল্পহীন ধরাধামে।

নিজেকে জ্ঞানে, অভিজ্ঞতায় ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করে তুললে এবং কিছু নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধে জারিত হলে, কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে পৃথিবী তোমার দুয়ারে ধর্না দেবে। তোমাকে দ্বারে দ্বারে কাঙ্গালের মতো ঘুরতে হবে না।

কিন্তু বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই এর বিপরীতটা দেখা যায়। ৫ বৎসর কামলাগীরি করলে যদি ৫০ বৎসর আত্মসন্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচা যায় তাহলে এই ৫ বৎসর দুনিয়াকে তালাক দিয়ে ধ্যানে বসে নিজেকে তৈরি করতে সমস্যাটা কথায়?

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ইংল্যান্ডে যান তখনই প্রস্তাব ছিল কেমব্রিজ বা অক্সফোর্ড থেকে কবিকে সন্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করার। উইলিয়াম রদেনস্টেইনের “মেন এন্ড মেমরিজ” এর ২৬৬ পৃষ্ঠায় দেখা যায় কবিকে সন্মানিত করার সেই প্রস্তাব কার্যকরী হয় নাই। এর পর বৎসর ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন!

এই সন্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত না করার পিছনে ছিল তৎকালীন অক্সফোর্ডের আচার্য ও পরে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের কারসাজী, চক্রান্ত। সম্রাজ্যবাদী উন্নাসিক ব্রিটিশদের ঘুম ভাঙ্গে আরও ২৬ বৎসর পর। ভারতের আর এক প্রাক্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড আরউইন রবীন্দ্রনাথকে সন্মানিত করার প্রস্তাবে রাজী হলেন।

১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে অক্সফোর্ড তাদের সিদ্ধান্ত রবীন্দ্রনাথকে জানালো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথও বিশেষ কারণ দেখায়ে বিনয়ের সাথে অক্সফোর্ডকে জানায়ে দিলেন যে তাঁর পক্ষে অক্সফোর্ডে যাওয়া সম্ভব না।

গোঁয়ার ব্রিটিশদের উচিৎ শিক্ষা হলো। অক্সফোর্ড সিদ্ধান্ত নিলো যে তারাই শান্তিনিকেতনে এসে কবিকে উপাধি অর্পণ করবে!! এবার প্রফেট মৌন স্তব্ধ পাহাড়ের কাছে আসার আকুতি জানালো।

৭ই আগস্ট, ১৯৪০ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। শান্তিনিকেতনের সিংহসদনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এক বিশেষ সমাবর্তন’ অনুষ্ঠিত হয়। অক্সফোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি স্যার মরিস গয়ার এবং স্যার সর্বপল্লি রাধা কৃষ্ণণ।

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে স্যার সর্বপল্লি রাধা কৃষ্ণণের লেখায় দেখি সেই অটল পাহাড়ের স্বরূপ,”In all his writings of great diversity and depth, he expressed the quality of the individual spirit, the spirit that is indestructible. In his best poems there are things which move the heart and fill the mind and which will live for long. As for each man’s work, ’everything will pass away, said Tolstoy, ‘Money, Great possessions, even kingdoms, all are doomed. But if in our work there remains one grain of true art, it will live for ever.”

সুতরাং বর্তমান যুব সম্প্রদায়, যারা নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছ, তাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ যে তোমরা ভ্যালু অ্যাড করো। জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কোন বিকল্প নাই। তুমি তৈরি হও। দুনিয়া তোমার দিকে ছুটে আসবে।

অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিল। শান্তিনিকেতন অক্সফোর্ডে যায় নাই, অক্সফোর্ড শান্তিনিকেতনে এসেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিলো ক্ষমতার দর্প বা গর্বে না, যোগ্যতার বিচারে।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *