আউজুবিল্লাহে মিনাশ শয়তানির রাজিম।    

অর্থাৎ, আমি আল্লাহ্‌র কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই ।

শয়তানের প্রসঙ্গ আসলে আমরা এই আয়াত পাঠ করি ।

কিন্তু সৃষ্টি কুলের মধ্যে আজাজিল শয়তান ইবলিস সব চেয়ে জ্ঞানী । (অন্য সময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখব ।)

সেই জ্ঞানীর প্রসঙ্গ আসলে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে ইবলিস থেকে পানাহ চাই। তার কারণ একটাই, তার জ্ঞান বা এলেম থাকলেও সেই এলেমের উপর তার কোন আমল নাই ।    

এলেম অর্জন করা ফরজ অবশ্যই ঠিক আছে কিন্তু এর সাথে আরও কিছু কিন্তু আছে। তা হোল, সেই এলেম অনুযায়ী আমল করা (Execution) এবং সম্পূর্ণ রুপে আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর করা, যাকে শরীয়তের ভাষায় (তাওাক্কুল) বলে । কর্মফলের প্রত্যাশী না হয়ে কর্ম করে যাওয়া ।

এখানেই আমাদের সমস্যা । আমাদের যাদের এই জ্ঞান (এখানে সব জ্ঞান নির্দেশ করা হয়েছে ) আছে অনেকেরই সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমল নাই । নিজে বাক্তিগত ভাবে সেই অনুযায়ী কাজ করি না বা কাজ  করার সুযোগ আসে নাই। জ্ঞানটা তাত্ত্বিক রয়ে গেছে । ফলিত বা applied হয় নাই । এমন অবস্থায় যদি কাউকে মুরিদ (সাগরেদ) করি তাহলে সমস্যা দ্বিবিধঃ এক, ওই মুরিদ বিতরিত জ্ঞান অনুযায়ী ফল লাভে সমর্থ নাও হতে পারে। দুই, দীর্ঘ মেয়াদে আমল বিহীন পীরের (পীর মানে অভিজ্ঞ জ্ঞানী ব্যাক্ত ) প্রতি মুরিদের আস্থায় চিড় ধরতে পারে ।

বর্তমান সময়টা জ্ঞানের আকালের সময় না । বরং জ্ঞানের প্রাচুর্যের স্বর্ণযুগ । সমগ্র বিশ্বটাই অতিরিক্ত জ্ঞানে জর্জরিত । এলেম আছে কিন্তু আমলে অনিহা । যার কারণে এলেমের পরিমাণ অনুযায়ী  বরকত পাওয়া যাচ্ছে না । আর তাওাক্কুল বা আল্লাহ্‌র উপর নির্ভরতাতো সুদুর পরাহত । সমাজের সামগ্রিক চিত্র তাই বলে । এর ফলে জ্ঞান-জাত কাঙ্ক্ষিত অবদান থেকে আমরা বঞ্চিত ।

অতিরিক্ত ভিটামিন খেলে একটা রোগ হয়, ডাক্তারি ভাষায় তাকে vitaminosis বলে। তারও লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় ।

তদ্রূপ, আমাদের সমাজে অতিরিক্ত জ্ঞান হোলেও কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় কিন্তু শুধু জ্ঞানীরই রোগ বা অসুখ হয় না, অসুখ হয় তাঁর radius-এর অনেক মানুষের ।

এই অতিরিক্ত জ্ঞান-রোগের সমস্যার মধ্যে নিচের সমস্যাগুলো অন্যতমঃ

১) যত্র-তত্র অবারিত জ্ঞানের কথা ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার কারণে অনেকেই ক্ষ্যাপার সাগরকুলে নুড়ি কুড়ানোর মতো  জ্ঞানের জিনিস দেখলেই তা সংগ্রহ করে বিভিন্ন folder-এ জমা করেন । পুনরায় পড়ে দেখার সময়ও অনেকের হয় না ।

২) কেউই নিজের প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু নিয়েই ক্ষান্ত হন না । লাগবে কি লাগবে না তা না ভেবে হাভাতের মতো সংগ্রহে ব্যাকুল । এক দিন কাজে লাগবে ভেবে সংগ্রহ করা, কিন্তু ব্যাস্ততার জন্য সেই এক দিন আর আসে না ।  

৩) যারা অনেক জ্ঞানে জ্ঞানী তাদের একটা অংশের দৌড় শুধু জ্ঞান পর্যন্তই । জ্ঞানের উপর আমলের কোন বালাই নেই । তারা জ্ঞান জাহির করতেই তৎপর বেশী । জাহিরের কারণে সমাজের কিছু অংশ জ্ঞান-জ্বরে জর্জরিত।

উত্তরণের পথ একটাই । যতটুকু জ্ঞান আছে তার উপর আমল করা বা চর্চা করা। এবং ধীরে ধীরে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা । জ্ঞান এবং আমল linear হলেই কেবল মঙ্গল নয়তো ‘আউজুবিল্লা …’ পড়ার মতো অবস্থার মুখমুখি হওয়া কাল্পনিক না ।

Do ye enjoin right conduct on the people, and forget (to practice it) yourselves, And yet ye study the Scripture? Will ye not understand? – Sura Bakara. Verse-44. Abdullah Yusuf Ali.

তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো । তবুও কি তোমরা চিন্তা করো না?”

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *