সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ দুটো বন্ধ করো। কল্পনা করো যে চোখের মতো এমন এক অবাক করা, বিস্ময়কর আশীর্বাদ ছাড়াই তুমি জন্ম নিয়েছ। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে চেষ্টা করো।
তোমার প্রিয় ঘর, প্রিয় জিনিসপত্র, প্রিয় মানুষের মুখ, বাইরের আকাশ, আলো, গাছপালা কিছুই দেখতে পারছো না। এমনকি তোমার স্মার্ট ফোনের পর্দাও তুমি দেখছ না। যেখানে তাকালে গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো এক নিমেষে দেখে নিতে পারতে সেখানে তুমি তোমার ফোনের দিকে তাকাতেই পারছ না। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা না!
এবার চোখ খোলো। তাকাও। আলোর প্লাবন চৌদিক প্লাবিত করে তোমার অনুভূতিগুলোতে, স্নায়ুতন্ত্রিতে তন্ত্রিতে আনন্দের তান-তারানা তাণ্ডবে মাতুক। এবার তোমার উচ্চতর অপার্থিব-অনুভূতি তোমার মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত সুন্দরের অর্গল-দ্বার তীব্র বেগে খুলে দিক।
প্রাণ ভরে প্রিয় জিনিস, প্রিয় মুখ, প্রিয় পরিবেশ দেখে নাও। তোমার কাল্পনিক-দৃষ্টিহীনতা নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে এক কৃতজ্ঞতাবোধের জোয়ারে আপ্লুত করবে। এবার মনে করো সৃষ্টিকর্তার কি অপূর্ব দানে তুমি পূর্ণ! যারা এই বিস্ময়কর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত তাদের কথা একবার ভাবো। তুমি তাদের থেকে কত ভাগ্যবান!!
এক মুহূর্তের কাল্পনিক অন্ধত্ব দূর হয়ে যাওয়ার তীব্র-আনন্দ, অশ্রু-ভেজা কৃতজ্ঞতা ধরে রাখার চেষ্টা করো নিয়মিত। এক স্বর্গীয় ভালোলাগার অনুভূতিতে মগ্ন থাকবে তুমি, নিমগ্ন থাকবে সেই অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তার প্রশংসায়।
কিছু ফিরিয়ে দিতে গুণগুণীয়ে গেয়ে ওঠোঃ
“আকাশ আমায় ভরলো আলোয়
আকাশ আমি ভরবো গানে।
সুরের আবীর হানবো হাওয়ায়
নাচের আবীর হাওয়ায় হানে।।
ওরে পলাশ ওরে পলাশ, রাঙ্গা রঙের শিখায় শিখায় দিকে দিকে আগুন জ্বলাস।
আমার মনের রাগ রাগিণী রাঙ্গা হল রঙিন তানে।।
দখিন হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপন থামে না যে
নীল আকাশে সোনার আলোয় কচি পাতার নুপুর বাজে-
ওরে শিরীষ ওরে শিরীষ মৃদু হাসির অন্তরালে গন্ধ জালে শূন্য ঘিরিস
তোমার গন্ধ আমার কণ্ঠে আমার হৃদয় টেনে আনে।“ রবীন্দ্রনাথ
0 Comments