আজ ১৫ই জানুয়ারী।
এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার দিন। ১৭৮৪ সালের এই দিনে ভারতবর্ষের ডি ফ্যাক্টো গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগ হলেও এর প্রাণ পুরুষ ছিলেন ব্রিটিশ আইনবিদ, ও বিখ্যাত প্রাচ্য বিশারদ উইলিউম জোন্স। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তিনি ‘প্রাচীণ ভারত’-এর ছাত্র হয়ে ওঠেন এবং তার আগ্রহের চূড়ান্ত রূপ দেন এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

উইলিয়াম জোন্সের বিখ্যাত প্রস্তাবনা ছিল যে একটা ভাষা থেকে অনেক ভাষার উৎপত্তি।সংস্কৃত, গ্রিক, ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষা একই উৎস থেকে সৃষ্ঠ। বিভিন্ন উৎসের থেকে পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা, ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি অধ্যায়ন করা করাছিলো তাঁর প্ৰাথমিক লক্ষ্য।

উইলিউম জোন্স নদীয়ার হিন্দু বিশ্বাবিদ্যালয়ের পন্ডিত রামলোচনের কাছে সংস্কৃত শিখে একজন প্রথিতযশা সংস্কৃত পন্ডিতে পরিণত হন। ১০ বৎসর ধরে হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞান শেখেন, পন্ডিত জগন্নাথ তারক পঞ্চাননের কাছে হিন্দু আইন শিখেন।

তিনি প্রতিটা সমাজবিজ্ঞান শেখার আয়োজন করেন। প্রচুর লিখালিখি করেন আঞ্চলিক আইন, সংগীত, সাহিত্য, বোটানি, ভূগোল ইত্যাদির উপর। ভারতীয় সাহিত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম তিনি ইংরেজীতে অনুবাদ করেন। ইউনূস ছদ্মনামে তিনি ফার্সী ব্যাকরণ প্রকাশ করেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমে ভাষা ও সংস্কৃতিই শিখে নাই শুধু, তারা প্রাচীন ভারতকেও আবিষ্কার করেছিল। এই গবেষণার থেকেই জানা যায় ভারতবর্ষ কত সমৃদ্ধ, কত ঐতিহ্যমণ্ডিত। এশিয়াটিক সোসাইটি না হলে সম্রাট অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার কখনো হতো না, জানা যেত না অনেক গৌরবময় অতীতের ইতিহাস।

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ভারতীয়দের কোনো অবস্থান ছিল না এখানে। এমন কি, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকেও ঢুকতে দেওয়া হয় নাই সভাতে।

এশিয়াটিক সোসাইটির আবিষ্কারের পথ ধরে ইংরেজরা এদেশকে ভালোবাসতে শুরু করে। দেশে ফিরে গেলেও অনেকে ভারতের উপর অনেক তথ্যবহুল গ্রন্থ রচনা করেন। এই উপমহাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য তথা আত্মপরিচয়ের নিগূঢ় তথ্যগুলো অনাবিষ্কৃতই থেকে যেত যদি এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা না হতো। ইংরেজদের নিজ স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হলেও তার ‘by-product’ হিসেবে এই উপমহাদেশের মানুষেরা পায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া অনুপম রত্ন।

দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবী বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভারততত্ত্ববিদ আহমেদ হাসান দানী এশিয়াটিক সোসাইটি অফ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। অন্যান্যদের মধ্যে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ,এ বি এম হাবীবুল্লাহ,আব্দুল হালিম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

এই অল্প বয়সের মধ্যেই অন্যান্য বিষয়ের সাথে উইলিউম জোন্স কবিতাও রচনা করেছিলেন। আমেরিকান কবি ও গল্পকার Edgar Allan Poe তাঁর ছোটগল্প “Berenice” এ উইলিয়াম জোন্সের কবিতা আংশিক ব্যবহার করেছিলেন। বাকি অংশ ছিল এমন:
My companions said to me, if I would visit the grave of my friend, I might somewhat alleviate my worries.
I answered “could she be buried elsewhere than in my heart?”

মাত্র ৪৭ বৎসর বয়সে এই মহান ব্যাক্তিটি ১৭৯৪ সালের ২৭শে এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে উইলিয়াম জোন্সও কলকাতার কলিজ্বায়, দক্ষিণ পার্ক স্ট্রিটে ঘুমিয়ে আছেন।

এই দিনে তাঁর প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা !

Categories: Uncategorized

1 Comment

ExoRank · January 25, 2020 at 11:01 pm

Awesome post! Keep up the great work! 🙂

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *