“১৬ চাষে তুলা, তার অর্ধেকে মুলা, তার অর্ধেকে ধান, বিনা চাষে পান”-খনার বচন।

বচনের বিস্তার করলে এই দাঁড়ায় যে, তুলা চাষে সব চেয়ে বেশী শ্রম লাগে। এই শ্রম-জাত তুলা থেকে উৎপন্ন কাপড় আমাদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করে, আমাদেরকে মার্জিত ও অভিজাত করে।

শ্রম কমলে কাপড়ও কমবে। দিগম্বর হওয়াও অস্বাভাবিক না।

কর্ম জীবনে শ্রমের পরিমানের উপর নির্ভর করে অভিজাত বা দিগম্বর হওয়া। শ্রম না করে বিনা চাষে পান উৎপন্ন করলে তাম্বুল-রাগ-রঞ্জিত-ওষ্ঠ জাহির করা যাবে তবে জীবনের অভিষেকে বরমাল্য জুটবে না।

“The Prophet” নামে চটি মতো একটা বই লিখে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন লেবানিজ আমেরিকান লেখক খলিল জিব্রান। সেই বইয়ে এক জায়গায় তিনি লিখেন, ”Like sheaves of corn He gathers you unto Himself,

He threshes you to make you naked.

He sifts you to free you from your husks.

He grinds you to whiteness,

He kneads you until you are pliant;

And then He assigns you to His sacred fire, that you may become sacred bread for God’s sacred feast.”

সরলার্থে শানে-নযুল দাঁড়ায়, শস্যের আঁটির মতো সে (ঈশ্বর) তোমাকে কাছে টেনে নেয়, মাড়াই করে তোমাকে নগ্ন, অনাবৃত, প্রকাশিত করতে চায়।

এবার চালুনি দিয়ে টেলে তোমাকে তুষ থেকে আলাদা করতে চায়, তোমাকে পিষে উজ্জ্বল করতে চায়, তোমাকে নমনীয় না হওয়া পর্যন্ত পিষতে থাকে। এর পর তোমাকে তাঁর মহিমান্বিত কর্মভারে গৌরবান্বিত করে।

তাহলে, তোমার বাধা, বিপত্তি, সংগ্রামকে আশীর্বাদ মনে না করে অবহেলা করছ কেন? এটা তো তোমাকে তৈরি করার প্রাথমিক লক্ষণ! গর্ভযন্ত্রণার ভয়ে আশীর্বাদকে গর্ভপাত করো না।

অতএব, সব সংগ্রামকে, বাধাকে, যন্ত্রণাকে, নিজের বোঝাকে নিজের সামগ্রিক বিকাশের অনুঘটক হিসেবে বরণ করে নাও।

কর্মফল না, সংগ্রামই তৈরি করে চরিত্র। তুমি ঠিক থাকলে সারা পৃথিবী তোমার বিরুদ্ধে থাকলেও তুমি এগিয়ে যাও। সাফল্যের বরণডালায় তোমাকে অভিষিক্ত করবে একদিন সবাই।

ঘোর নিন্দুকেরাও নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার খবর জেনে তড়িঘড়ি করে কোলকাতা থেকে বোলপুরের ট্রেনে উঠেছিল শান্তিনিকেতনে যেয়ে গুরুদেবকে শুভসংবাদ দিতে আর বরমাল্য পরাতে।

তুমিও একদিন গেয়ে উঠবে,

“আমার অভিমানের বদলে আজ নেবো তোমার মালা

আজ নিশিশেষে শেষ করে দিই চোখের জলের পালা।

আমার কঠিন হৃদয়টারে ফেলে দিলেম পথের ধারে,

তোমার চরণ দেবে তারে মধুর পরশ পাষাণ-গালা।

ছিল আমার আঁধারখানি, তারে তুমিই নিলে টানি,

তোমার প্রেম এল যে আগুন হয়ে- করলো তারে আলা।

সেই যে আমার কাছে আমি ছিল সবার চেয়ে দামী,

তারে উজাড় করে সাজিয়ে দিলেম তোমার বরণডালা।“  

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *