আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে…
তাওবা অর্থ অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসা। রমজানে ক্ষমা পাওয়ার বিষয়ে আমাদের সাধারণ সমাজে, দুর্বল-ধর্ম-শিক্ষিত মানুষের মাঝে কিছু ভুল ধারণা আছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
জীবন চলার পথে ভুল হয়ে যেতে পারে। আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিষ্কলঙ্ক জীবন যাপন করা তাওবার অন্যতম পূর্বশর্ত।
“আমি তো মানুষ। আমার ভুল হতে পারে” এই বদ ধারণা পুষে পাপের পথ খোলা রাখা জঘন্য অপরাধ। এর ক্ষমা নাই। অজান্তে, অসতর্ক মুহূর্তে ভুল হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে তাওবা করে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেওয়া উচিৎ। ক্ষমা প্রাপ্ত মানুষের কিছু লক্ষণ দেখে বুঝা যায়। লক্ষণগুলো পরের কিস্তিতে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।
আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমার যত সুসংবাদ আছে, বিশেষ করে রমজানের রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দিনগুলোতে গোনাহ মাফের যত সুসংবাদ আছে সবগুলোর সাথে একটা শর্ত জড়িত আছে। ব্যাংকের ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের সাথে যেমন T /C (terms and condition) থাকে, তাওবার বেলায়ও শর্ত আছে আর তা হোল, অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবার প্রতিজ্ঞার উপর স্থির থাকার ওয়াদা করা যে “আর কোনদিনও এই ভুল করবোনা।” এবং অবশ্যই হক্কুল ইবাদ বা বান্দার কোনও হক থাকলে তা আদায় করতে হবে। বান্দার হক আল্লাহ্ ক্ষমা করতে পারবেন না। এই শর্ত মেনে আন্তরিকতার সাথে তাওবা করলে আল্লাহ্ হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আমরা সবাই যদি একবার আয়নায় তাকাই তাহলে দেখব জীবনের অনেক ওভার শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেকের স্লগ ওভার শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি জিন্দেগী নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে পরপারের প্রস্তূতিতে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এখনো প্রস্তূতি না নিলে পারঘাটাতে হাহাকার করতে হবে। এখনি উপযুক্ত সময় সচেতন হওয়ার। আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে।
রমজানেরও শেষ দশক। নাজাতের দশক। কেউ জানিনা সামনের রমজান পাব কি না। ভুল্ ধারনার থেকে বের হয়ে খালেস দিলে তাওবা করে পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন শুরুর এটাই শুভলগ্ন।
নবী করীম (সঃ)-এর চাচা হযরত আমীর হামযা (রাঃ)উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন । রসুলুল্লার অসম্ভব প্রিয় বাক্তি ছিলেন তিনি । চাচার মৃত্যুতে অবর্ণনীয় দুঃখ পেয়েছিলেন নবীজি । আমীর হামযার মৃতদেহ মদিনা নেওয়া শুরু করলে উহুদ পাহাড়ও সাথে সাথে চলতে শুরু করলে নবিজী চাচার দাফন উহুদের মাটিতেই সম্পন্ন করেন । এই প্রিয় চাচার হত্যাকারী ছিল হযরত ওহায়শি (রাঃ)।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওহায়শি (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) –কে লিখে পাঠালেন যে আমিতো ইসলাম গ্রহণ করতে চাই কিন্ত এই আয়াত পথের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়াতটার অর্থ হচ্ছে “যারা আল্লাহ্ ব্যাতিত অন্য কাউকে উপাস্য রুপে গ্রহণ করে না, কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে না এবং বাভিচারও করে না, যারা এসব কাজ করেছে তারা পাপী ।”ওহায়শি (রাঃ) লিখলেন যে আমি এই সব কাজ করেছি, তাহলে আমার জন্যে কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে?
এই প্রশ্নের জবাবে নিচের এই আয়াত নাজিল হোলঃ“ইন্না মান তাবা অয়া আমানা অয়া আমেলা সালেহান”- কিন্তু যারা তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে ও সৎকাজ সম্পাদন করে ।“নবী করীম (সঃ) ওহায়শি (রা)-কে এই আয়াত লিখে পাঠালে ওহায়শি (রাঃ) উত্তরে লিখে পাঠালেন, “এই আয়াতে সৎ কাজ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে । কিন্ত আমি জানিনা আমি সৎ কাজ করতে পারব কি না।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিচের এই আয়াত নাযিল হোলঃ“ইন্নাল্লাহা লা ইয়াগফিরু আইউশরিকা বিহি, অয়াগফিরু মা দুনা জালিকা লিমাইয়াশাউ।“- আল্লাহ্ শিরক ক্ষমা করবেন না , এছাড়া তিনি যাকে চাইবেন ক্ষমা করে দিবেন।”
এই আয়াত ওহায়শি (রা) পাঠায়ে দেয়া হলে তিনি উত্তরে লিখে পাঠালেন যে “এই আয়াতেও আল্লাহর ইচ্ছা বা এখতিয়ারের শর্ত রয়েছে । জানিনা আল্লাহর ইখতিয়ার আমার পক্ষে যাবে কি না ।“
এর পর নিম্নের আয়াত নাযিল হোলঃ“কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আশরাফু আলা আনফুছিকুম লাতাকনাতু মিররাহ মাতিল্লাহ, ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম।” -অর্থাৎ বলে দিন, হে আমার পাপী বান্দাগণ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।এর পর ওহায়শি (রাঃ) মদীনায় যেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন । …… (চলবে)
Categories: Uncategorized
0 Comments