আল্লাহর দরবার তো ব্যাঙ্ক না যে ঋণ-খেলাফী হয়ে সুযোগ আদায় করে আবার পুরনো পাপের পথে ফিরে আসা যাবে।
আল্লাহ্‌র ঘোষিত রমজানের এই অসীম কল্যাণ লাভের শর্ত আছে সেটা কি আমরা জানি বা মানি ? নাকি এই মাসেই শুধু কোমর বেঁধে লেগে পড়েছি আল্লাহ্ ঘোষিত ত্রাণ নেওয়ার জন্য ।

শয়তানের প্ররোচনায়, নফ্সের তাড়নায়, দুনিয়ার ফেরেবে পড়ে আমরা পথ হারায়ে ভূল পথে পা দেই । আল্লাহ্ রহমানুর রাহিম আমাদেরকে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার সুযোগ হিসেবে ‘রমজান’ মাস নিদিষ্ট করে রেখেছেন যাতে আমরা তওবা করে আবার আল্লাহ্র পথে ফিরে আসতে পারি। একই ভূল একাদিক্রমে তিন বার হয়ে গেলেও আল্লাহ্ হয়তো আমাদেরকে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ দিবেন কিন্তু ক্ষমা পাওয়ার ঘোষণা শুনে “অপকর্ম করে নেই, সামনে রমজানে আবার ক্ষমা চেয়ে নেবো” এই মানসিকতা তৈরি করা যে কতো ঘৃণ্য ও ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং এর শাস্তি যে কতো ভয়ঙ্কর তা বোধ হয় আমরা উপলব্ধি করতে পারি নাই ।

আমরা কি করে বুঝব যে সামনের মুহূর্তে আমরা বাঁচব কি না ? তাহলে সামনের রমজানে ক্ষমা চেয়ে নেব, ঘুষের টাকা দিয়ে, চুরির টাকা দিয়ে দান-সদকা করে, ত্রাণ দিয়ে, ওমরাহ্ করে, হজ্জ করে দিগুণ উৎসাহে পাপ করার সাহস যোগায় কোন অদৃশ্য শক্তি, না আহাম্মকি ?

হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদিন রসূলে করিম (সঃ) এস্তেঞ্জার পরে তায়াম্মুম করছিলেন। ‘পানি আপনার নিকটে’ এই কথা বলার পরে নবীজি বললেন “কি জানি পানি পর্যন্ত পৌঁছানর অবকাশ নাও পাইতে পারি।” দীনের নবী যেখানে তায়াম্মুমের মাটি থেকে কাছের পানি পর্যন্ত যাওয়ার সময়ের সুযোগ নিতে সাহস করেন নাই সেখানে আমরা কোন সাহসে পরের রমজানে, শব-এ-বরাতে, শব-এ-মেরাজে, শব-এ-কদরে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার দুঃসাহস দেখাই ?

আর ওই ঘুষের টাকা দিয়ে, চুরির টাকা দিয়ে দান-সদকা করে, ত্রাণ দিয়ে, ওমরাহ্ করে, হজ্জ করে পার পাওয়ার স্বপ্ন দেখা যে কতো বড় মায়ামরীচিকা তা তো ওই বুদ্ধিমান রোমান্টিক হারাম উপার্জনকারীদের বুঝা উচিৎ!

“ও হুয়াল গফুরুল ওয়াদুদ”- তিনি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়য় যেমন সঠিক আবার “ইন্না বাদশা রব্বিকা লাশাদিদ”- নিশ্চয়ই তোমার প্রভুর পাকড়াও অত্যান্ত কঠিন’ একথাও আরও বেশী সঠিক । “অহুয়াল লাতিফুল খাবির”- অন্তরের নিভৃতে লুকানো সুপ্ত বিষয়ের খবরও আল্লাহ্ রাখেন । “কারে তুমি দিতে চাও ফাঁকি?” সুতরাং এখনো রমজানের মাগফেরাতের, নাজাতের দশক সামনে বিস্তৃত । অন্তরকে পবিত্র করে আল্লাহ্র কাছে তওবা করে জায়নামাজে দাঁড়ানোর সুযোগ এখনো চলে যায়নি ।

আল্লাহ্র সাথে ‘ফাজলামো’ করার ধৃষ্টটা দেখাতে গেলে পরিত্রাণ তো হবেই না বরং চাতুরীর জন্য অপরাধ দীগুণ হওয়ার সম্ভাবনা । একঃ কৃত পাপের জন্য, দুইঃ ‘ইয়ুমেনুনা বেল গায়েব’ এর বাইরে যেয়ে, পাপ করে নেই, সুযোগ মতো মাফ চেয়ে নেব, ওই পর্যন্ত হায়াৎ পাওয়ার এই মানসিকতা তৈরি করার জন্য যে গায়েব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

রমজানের রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত তো শুধু তাদের জন্য যারা খালেস দিলে, ‘তওবাতুননসুহা’ করে আবার পরিশুদ্ধ হতে পারে । আল্লাহ্‌র রহমত অশেষ, অগুনিত, বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে প্রকাশমান তাদের জন্য যারা অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসতে চায়। আল্লাহ্‌র সাথে তো প্রতারণা চলে না যে রমজানে ক্ষমা নিয়ে আবার সেই পুরাতন খেলায় লিপ্ত হয়ে গেলাম । হারাম খেয়ে, হারাম পরে, অন্তরে কু-বাসনা লালন করে রব্বুল ইজ্জতের ক্ষমা প্রত্যাশা করা উঁচু দরের বোকামি ছাড়া কিছুই না।

যত ভালো ভালো কোরআনের আয়াত ও হাদিস থাকুক না কেন শর্ত পূরণ না হলে কোনটাই কোনও কাজে লাগবে না । এক সাথে সব কিছু শুদ্ধ করতে যদি না পারা যায় তবে একটা KPI ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে যে সামনের রমজান পর্যন্ত আমার লক্ষ্য হবে হারাম খাবার ও হারাম পোশাক থেকে দূরে থাকা । সম্ভবত এইটুকু করতে পারলে ৮০% অপরাধ কমে যাওয়ার আশা করা যায় ।

হারাম খাবার সম্পর্কে হযরত ইবন ওমর (রাঃ) বলেনঃ যদি নামায পড়তে পড়তে পিঠ বাঁকা হয়ে যায় ও রোজা রাখতে রাখতে শরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায় তবুও হারাম ত্যাগ না করলে তা আল্লাহ্‌র নিকট তা কবুল হবে না ।”
এবং হারাম কাপড় সম্পর্কে হযরত ইবন ওমর (রাঃ) বলেনঃ “১০ দিরহাম মূল্যের কাপড়ে যদি ১ দিরহামও হারাম থাকে তবে আল্লাহ্ তার নামায কবুল করবেন না যে পর্যন্ত ওই কাপড় তার গায়ে থকে- (এহ্যিয়া উল উলুমুদ্দিন-ইমাম গাযযালি (রঃ)

এর পরে নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের জন্য আর বেশী কিছু লেখার প্রয়োজন নাই । এতো আয়োজন করে সেহরি খাওয়া, নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, দান সদকা করা, ইফতার করা ও ইফতার করানো, সব কিছুই কি তাহলে মাটি হয়ে যাবে একটু দৃষ্টিভঙ্গী না পালটানোর জন্য? অনুতপ্ত হয়ে ফিরে না আসার জন্য ?

কে নেবে জীবনের পাপের দায় ?? কেউ না । কিন্তু অনেক যত্ন করে, উদয়স্ত ঘর্মাক্ত কলেবরে শ্রান্ত হয়ে যা অন্যায় ভাবে ঘরে নিয়ে আসি তার কতো টুকুই বা আমরা ভোগ করতে পারি ! বাকিটুকু যাদের জন্য তারা তো কোনদিনও ইহকালের মর্মজ্বালা ও পরকালের অনন্ত শাস্তির ভাগি হবে না। “ভালবেসে যদি সুখ নাহি, তবে কেন,তবে কে মিছে ভালবাসা …।”

আমাদের বুঝের যদি ঘাটতি থাকে তাহলে পরিষ্কার হয়ে তারপর খালেস দিলে জায়নামাজে দাঁড়ায়ে সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ হয়তো ক্ষমা করতে পারেন। ক্ষমা প্রাপ্ত হলে রমজানের অসিলায় ওয়াদাকৃত অনেকগুন সওয়াব অবশই আশা করা যায়। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক ভাবে তওবা করার, তওবার উপর দৃঢ় থাকার তৌফিক এনায়েত করুণ । আমীন ।


“ চির-পিপাসিত বাসনা বেদনা, বাঁচাও তাহারে মারিয়া,
শেষ জয়ে যেন হয় সে বিজয়ী, তোমারই কাছেতে হারিয়া ।
বিকায়ে বিকায়ে দীন আপনারে, পারি না ফিরিতে দুয়ারে দুয়ারে-
তোমারি করিয়া নিয়ো গো আমারে, বরণের মালা পরায়ে ।
চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে ।
( চলবে…)

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *