“আল্লাহ পাক নিজ বন্ধুকে শাস্তি দেন না। তবে কখনো কখনো কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন।”-আল হাদিস
কষ্টে বা বিপদে মুমিন স্থির থাকে। সে বুঝতে পারে কেন তাকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। সে জানে প্রতিদান সে পাবে ইহজনমে বা পরজনমে। সে কোনো দোষারোপ করে না বা হা-হুতাশ করে না। মুমিন এমন এক স্তরে পৌঁছে যায় যখন সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় সে অটল থাকে। সে খেলা বুঝতে পারে। আরো উন্নত স্তরে পৌঁছালে সে মনে মনে বলে,”দেখি, কত কষ্ট তুমি দিতে পারো, দাও। সুখ এবং দুঃখ উভয়ইতো তোমার থেকে এসেছে। তোমার থেকে যা আসবে আমি তাকেই কবুল করে নেবো।”

এ এক অন্য জগতের অভাবনীয় খেলা। মুমিন এ অবস্থায় পৌঁছে এক অনবর্চনীয় আনন্দসাগরে অবগাহন করে। চরম দুঃখেও পরম নির্ভরতার অভয় সংগীত গায়।

“মরণ দোলায় ধরি রশি গাছি,
বসিব দুজনে বড়ো কাছাকাছি।
ঝঞ্ঝা আসিয়া অট্ট হাসিয়া মারিবে ঠেলা,
আমাতে প্রাণেতে খেলিব দুজনে ঝুলনখেলা
নিশীথবেলা।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সে দর্শণের এক ধারা প্রবর্তন করেছিলেন দার্শনিক জেনো।
ঐ মতবাদ শিক্ষা দিচ্ছিলো যে প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি ঐশ্বরিক বিধানের সাথে একাত্ব হয়ে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান করে। কি পরম তৃপ্তিতে, কি চরম দুঃখে সে স্থিতধী, নির্বাক। এটাই Stoicism নামে প্রচারিত ও প্রচলিত।

ধর্মে আস্থাহীনদের কথাও ঘুরে ফিরে একই। Uncontrollable variable আমি যেহেতু পরিবর্তিত করতে পারবো না, বাস্তবতা মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ঈশ্বরে পরম আস্থাশীল স্বামী বিবেকানন্দ অমঙ্গল আশংকায় বলেছেন,” When danger is inevitable it is good to give up something for nobble cause.” সেই অদৃশ্য স্রষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রণতি।

আমরা খালেক থেকে মুখ ফিরায়ে মাখলুকে মত্ত হয়ে উঠেছিলাম। ভোগ-বিলাসে শান্তি খুঁজতে উন্মাতাল প্রতিযোগিতায় মগ্ন হয়েছিলাম। ‘করোনা ভাইরাস’ আমাদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছে সেই মহান রব্বুল আলামিনের দিকে ফিরে আসার। তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া করার । বিধান অনুযায়ী সেজদা করার । বান্দার ‘হক’ আদায় করার। আল্লাহর কাছে তাওবা করে তওবায় স্থির থাকলে আল্লাহ ‘মাফ করে দিতে পারেন।’

‘মাফ করে দিতে পারেন’ আমরা এভাবে বলবো কিন্তু আল্লাহ বলেন,” কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজি আশরাফু আলা আনফুসিহেম লাতাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া। ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম। “সূরা জুমার, আয়াত ৫৩
বলা হচ্ছে,”বলুন, হে আমার বান্দাগণ,যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালূ।”

এখানে ‘লা লাতাকনাতু’ আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘আমর’ এর সিগা যাকে imperative mood বা আদেশমূলক বাক্য বলে। নিরাশ হতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং আশা করা যায়, তাওবা করে তাওবার উপর স্থির থাকলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। স্বস্তি ফিরে আসবে আবার জীবনে।

আল্লাহ আমাদেরকে এই বিপর্যয়ের সময়ে, এই বিপদের সময়ে হতাশ না হয়ে তাঁর দিকে ফিরে আসার তৌফিক দেন। আমাদেরকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে, নতুন ভাবে জীবন শুরু করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *