সনাতন ধর্মানুসারে পিতা পুত্রের কথোপকথনে সত্যের অন্বেষণ।


পুত্রের লেখাপড়া শেষ হলে একদিন ঋষি আরুনি ছেলে স্বেতকেতুকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এত যে পড়াশুনা করলে, বেদচর্চা করলে, এখন তো শুনি তুমি অনেক বড় পণ্ডিত হয়েছ, তো সেই জ্ঞান কি অর্জন করেছ যা জানলে “অজানাকে জানা যায়, অননুভুতকে অনুভব করা যায়, অশ্রুতকে শ্রবণ করা যায়, অচেনাকে চেনা যায়?”

পণ্ডিত ছেলে এর কিছুই জানত না। জানত শুধু গাদা গাদা বই পুস্তক পড়া, মুখস্ত করা। এবার পণ্ডিত তাঁর বাবা ঋষি আরুনির কাছে জানতে চাইলো সেই জ্ঞান যার দ্বারা সত্ত্বার মূল স্বরুপ জানা যায়।

ঋষি আরুনি বল্লেন, ”ভাবের উৎপত্তি অ-ভাব থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। মৌলিক কোন উপাদান থেকেই মৌলিক সত্ত্বার উৎপত্তি সম্ভব।

আদি বস্তুটা বহু হতে চাইলো এবং তার ফলে তাপের সৃষ্টি হল।তাপ থেকে বাষ্প। বাষ্প থেকে জলরাশি। এবং জলরাশি থেকে মাটির উদ্ভব। এভাবেই এক থেকে বহুর উৎপত্তি।

এর পর ঋষি আরুনি বল্লেন, হে আমার পুত্র! সব নদীই সাগরে আত্ম-বিসর্জন দিয়ে একীভূত হয়। আবার বাষ্প হয়ে মেঘদল আকারে পাহাড়ে যেয়ে বরফ হয়ে জমে। জলধারা হয়ে ধরিত্রীকে সিঞ্চিত করে আবার সাগরে মিশে এক অনাদি অনন্ত চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে।

আমরা মানুষেরাও তেমনই আত্ম-বিস্মৃত হয়ে আছি। কিন্তু একদিন আমরাও সেই সত্যে প্রত্যাবর্তন করবো।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “সিন্ধু তৃতীয় তরঙ্গ” কবিতায় “পানি-বাষ্প-মেঘ’র বিজ্ঞানকে কাব্য সুষমায় নান্দনিক করে উপাস্থাপন করেছেন,
“ধরা তব আদরিনী মেয়ে,

তাহারে দেখিতে তুমি আস’ মেঘ বেয়ে!

হেসে ওঠে তৃণে-শস্যে দুলালী তোমার,

কালো চোখ বেয়ে ঝরে হিম-কণা আনন্দাশ্রু-ভরা!

জলধারা হ’য়ে নামো, দাও কত রঙিন যৌতুক,

ভাঙ’ গড়’ দোলাদাও,-কন্যারে লইয়া তব অনন্ত কৌতুক!”

এবার ঋষি পুত্র স্বেতকেতুর প্রশ্ন বাবার কাছেঃ কিন্তু বাবা, আমরা সেই অবিনশ্বর সত্ত্বা প্রত্যক্ষ করবো কিভাবে?
বিদগ্ধ বাবার উত্তর ছিল তথাকথিক পুঁথিগত বিদ্যার অতীত।

ঋষি আরুনি একটা পানি ভর্তি পাত্রে এক চিমটি লবণ ছুঁড়ে দিয়ে কিছুক্ষন পর ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, ”বলো দেখি লবণ কোথায় গেলো?”

লবণ পাওয়া গেলো না। কিন্তু পানিতে সর্বত্র লবনের স্বাদ পাওয়া গেলো।

ঠিক এভাবেই “সত্য” সর্বত্র বিরাজমান। সৃষ্টির কোথাও তাকে স্পর্শ করে পাওয়া যায় না তবে তা সর্বত্র উপস্থিত। সত্যকে কেবল ধ্যানে উপলব্ধি করা যায়।

ঋষি এবার সেই কঠিন সত্যটা উচ্চারন করলেন। “তত্তমণি” অর্থাৎ “তুমিই সে।“ সে সত্য তুমি।

গাদা গাদা বই পুস্তক পড়ে কোন লাভ নাই যতক্ষণ না তুমি সেই সত্যকে অর্জন ও ধারণ করতে পারবে।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *