“তোমাকে মাতাল হতেই হবে, একটুও থামলে চলবে না।কিসে মাতাল হবে,সুরা, কবিতা অথবা উৎকর্ষ, যেটাতোমার পছন্দ। কিন্তু মাতাল হও।”-শার্ল বোদলেয়ার
জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতায় উৎকর্ষতা আনতে গেলে খ্যাপাটে না হলে, পাগল না হলে, মাতাল না হলে উৎকর্ষ আসবে না। যে কোন উন্নতির চরমে পৌঁছাতে গেলে ঐ কাজের জন্য চরম মাতাল হতে হবে।
হোক সে পেশা জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক বা সামাজিক জীবন, মানব কল্যাণ বা মাখলুকাতের কল্যাণ। আধ্যাত্মিক জীবনেও উৎকর্ষতা অর্জন করতে চাইলে চরম নিষ্ঠা ও একাগ্র-মাতলামি ছাড়া সম্ভব না।
বড় পীর গাউসুল আযম লিখেছেন, “চল্লিশ বছর এশার অজু দিয়ে ফজর পড়েছি।পনের বছর পর্যন্ত প্রতি রাতেই নামাজের মধ্যে এক খতম করে কোরআন পাঠ করেছি। এমনও সময় কেটেছে যে, তিন থেকে চল্লিশ দিন পর্যন্ত না কোন পানাহার করতে পেরেছিলাম না ঘুম বা বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ হয়েছে।”এই সাধনাই তাঁকে আউলিয়া কুল শিরোমণি করেছে। সাধনা দরকার।
এই জন্য আমি প্রায়ই বলে থাকি “সিদ্ধান্ত নেওয়া” কোন কেরামতি না। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্যক্তির জীবনাচারে যদি আমুল পরিবর্তন না আসে তাহলে ঐ সিদ্ধান্ত নেওয়া অর্থহীন।
সুতরাং, জীবনে যে কোন ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা অর্জন করতে চাইলে বাগাড়ম্বর বাদ দিয়ে সুন্দর পরিকল্পনা করে, সময় নিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যেতে হবে। সফলতাকে আসতেই হবে। যেমন করে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন,
“তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যেআর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
………………………………………
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা”
আমাদের সমস্যা হচ্ছে কাজ শুরু করেই আমরা ফলের চিন্তা করি। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ‘প্রতি মুহূর্তের কাজটাকে উৎকৃষ্ট কাজ’ হিসেবে ফলের চিন্তা না করে করে যাওয়া। নিষ্কাম কর্ম করে যাওয়া।
ধরুন, একজন একা একটা গাড়ী তৈরি করার পরিকল্পনা করলো। সে কি ইঞ্জিন বা চারটা চাকা বা গিয়ার বক্স বা ডিফারেন্সিয়াল বানানোর পর গাড়ী কেন চলে না বলে হাহাকার করবে? না কি গাড়ীর সমস্ত পার্টস নিখুঁত ভাবে তৈরি করে জ্বালানী ভরে দক্ষ হাতে গাড়ী চালাতে চাইবে?
তেমনি ভাবে, পেশা বা নেশা যেটাই বলি না কেন উৎকর্ষতা অর্জন করতে গেলে কাজের সাথে আবেগের, মমতার জ্বালানী ভরে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হলে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ আটকাতে পারবে না। দরকার শুধু ঐ কাজে মাতাল হওয়া।
“খোদার প্রেমের সরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে হায়,ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এলো যে ঐ পথ ধরে হায়!”-নজরুল
0 Comments