আগের পোস্ট-এর পরের অংশ)

আজ মহা অষ্টমী।
কুমারী পূজা।
হিন্দু পূরণ অনুযায়ী দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গা পুত্র কন্যা সহ মাটির পৃথিবীতে পিত্রালয়ে এসেছেন।
দুর্গার সমস্ত রূপের “কুমারী” রূপটাই সবচেয়ে শক্তিশালী।সব সৃষ্টির মূল হিসেবে কুমারীকে গণ্য করা হয় মহাশক্তি।
এক থেকে ষোলো বৎসর বয়সী কুমারী কন্যার পূজা করা হয় দূর্গা মূর্তির সামনে।
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কুমারীকে দুর্গার ভিন্ন একটা রূপ হিসেবে মানতেন এবং নিজে মা সারদাকে কুমারী কল্পনা করে “কুমারী পূজা” করতেন। মহাভারতে অর্জুনও কুমারী পূজা করেছিলেন।

অনেক নিখুঁতভাবে কুমারী নির্বাচন করা হয়। তাকে অবিবাহিতা হতে হবে। তার পবিত্রতা, ব্যাক্তিত্বের শালীনতা, শুদ্ধতা,শান্ত সমাধিস্থ,কামনা বাসনার উর্ধে, পার্থিব আনন্দ উল্লাসে অনীহা ইত্যাদি নির্বাচিত কুমারীর বৈশিষ্ট্য হতে হবে।

এক বৎসরের কুমারীকে দুর্গার সান্ধ্য রূপকল্পে পূজা করা হয়।
দুই বৎসরের কুমারীকে দুর্গার স্বরসতী রূপকল্পে পূজা করা হয়।
তিন বৎসরের কুমারীকে দুর্গার ত্রিধা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
চার বৎসরের কুমারীকে দুর্গার কালিকা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
পাঁচ বৎসরের কুমারীকে দুর্গার সুভাগা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
ছয় বৎসরের কুমারীকে দুর্গার ঊমা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
সাত বৎসরের কুমারীকে দুর্গার মালিনী রূপকল্পে পূজা করা হয়।
আট বৎসরের কুমারীকে দুর্গার কুজ্যিকা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
নয় বৎসরের কুমারীকে দুর্গার কালসৌন্ধর্ব রূপকল্পে পূজা করা হয়।
দশ বৎসরের কুমারীকে দুর্গার অপরাজিতা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
এগারো বৎসরের কুমারীকে দুর্গার রুদ্রাণী রূপকল্পে পূজা করা হয়।
বারো বৎসরের কুমারীকে দুর্গার ভৈরবী রূপকল্পে পূজা করা হয়।
তেরো বৎসরের কুমারীকে দুর্গার মহালক্ষী রূপকল্পে পূজা করা হয়।
চৌদ্দ বৎসরের কুমারীকে দুর্গার পিতনায়িকা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
পনেরো বৎসরের কুমারীকে দুর্গার ক্ষেত্রজ্ঞা রূপকল্পে পূজা করা হয়।
ষোলো বৎসরের কুমারীকে দুর্গার অম্বিকা রূপকল্পে পূজা করা হয়।

কুমারী পূজা ছাড়া যজ্ঞ অসমাপ্ত থেকে যায়। অষ্টমী তিথিতে কুমারীকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে লাল বেনারসি শাড়ী পরানো হয়। ফুল, অলংকার, পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুর দিয়ে সাজানো হয় কুমারীকে। কুমারী সারাদিন উপবাস করবে যতক্ষণ না পূজা সমাপ্ত হয়। একটা অলংকৃত আসনে দেবী দুর্গার সামনে তাকে বসানো হয় ও দেবীর হাত থেকে একটা ফুল নিয়ে কুমারীর হাতে দেয়া হয়। পূজা সমাপনান্তে কুমারীর অবয়বে দেবী দুর্গার প্রতিভাস জেগে ওঠে। কুমারীকে সোনা, রুপা এবং অলংকারাদি উপহার দেওয়া একটা রেওয়াজ। কুমারীকে উপহার দেওয়া একটা পুণ্যকর্ম বলে মনে করা হয়।

১৯০২ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে কুমারী পূজা করেন। মা সরদার উপস্থিতিতে স্বামী বিবেকানন্দ ৯ জন কুমারীর পূজা করেন। তাদের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন এবং মিষ্টি ও উপহার দেন। স্বামীজী পূজা শেষে তাদের সবার পায়ে হাত দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
(চলবে)

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *