জুম্মা, জামাত ও মাস্ক।

পেশাগত কাজ সেরে তাড়াতাড়ি মসজিদে।তিন তলায় জায়গা হোল।বাংলা খুতবা, আরবি খুতবা, সুন্নাত নামাজের পর জুম্মার ফরজ নামাজের কাতারে দাঁড়ানো আমি।

বামে সামান্য ফাঁকা ছিল। পিছন থেকে এক উঠতি বয়সের লিকলিকে, দাড়ি লেবাস শোভিত ১৮-২০ বছরের মাদ্রাসার ছাত্র গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। জায়গার অভাবে না, বেশী নেকির আসায়। কারণ যায়গার অভাব ছিল না।

আর আমরা দেরীতে মসজিদে এসে মানুষ ডিঙায়ে সামনের কাতারে যেয়ে অনেক বেশী নেকি হাসিলের “অসভ্য আচারণ”টা ভালোই রপ্ত করেছি!

ছেলেটা বলে উঠলো না বলে, বলা যায় আদেশ করলো, “আপনার মাস্কটা খোলেন”।

শুনলেও অবাক আমি আবার জানতে চাইলে আবারো একই কথা বললো। কেন খুলবো জানতে চাইলে সেই অতি উৎসাহী মাদ্রাসা ছাত্র বললো,” মাস্ককেই সেজদা করবেন নাকি?”

“নাকের উপর মাস্ক থাকায় সেজদা সম্পুর্ন হবে না।” এ বিধান শুনে বিধাতাকে স্মরণ করলাম। সর্ব দ্রষ্টা কি মাস্ক ভেদ করে আমার সেজদা গ্রহণ করতে পারবেন না!!

তার মতে “মাস্ককেই সেজদা করা হবে।” ভাবালাম, হাঁটুওতো পায়জামায় ঢাকা থাকে। ভাগ্য ভালো সে আমার হাটুর দিকে নজর দেয় নাই!!!

এলাকাটা ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা।মসজিদ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স। এমন জায়গার ছাত্ররা যদি এই ধরনের শিক্ষা রপ্ত করে তাহলে পরিণাম কত আশংকাজনক!

“আল উলামাউ ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া”-আখেরী নবীর পর উলামারাই নবীর ওয়ারেস অর্থাৎ উলামারাই নবীর হয়ে কেয়ামত পরযন্ত দ্বীনের কাজ করবেন।

জুম্মা বাদ লাঞ্চের পর আমার একটা প্রফেশনাল মিটিং ছিল একজন প্রিয় মানুষের সাথে। তাই ওই ছেলেটার সাথে কথা বলার অবসর পাই নাই।

এই যদি নমুনা হয় তাহলে কোথায় চলেছি আমরা?

নামাজান্তে এত দরদী বুলিতে আকুল হয়ে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দুনিয়ায় মুসলমানদের হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করি। আল্লাহ্‌কে সব সমস্যা, মুসিবত, জুলুমের সমাধান করে দিতে কাঙ্গালপনা করি। আর আমরা আলো থেকে ধীরে ধীরে মুখ সরায়ে নিচ্ছি।

ইংরেজি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লেখক টি এস এলিয়ট “দি ওয়েস্ট ল্যান্ড” লিখে নোবেল ও ভুবন জয় করলেন। তাকেও টি এস এলিয়ট হতে একজন মেন্টরের দরকার হয়েছিলো। এজরা পাউন্ড। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ হয়ে গেছে,” Eliot begot poetry and Ezra did the Caesarian.” টি এস এলিয়ট কবিতা ধারণ করেছিলেন আর এজরা পাউন্ড সিজারিয়ান করে “দি ওয়েস্ট ল্যান্ড” ‘এর জন্ম দিলেন। এলিয়টের কবিতায় কাঁচি চালাতেন এজরা পাউন্ড। ধীরে ধীরে জন্ম নিল “দি ওয়েস্ট ল্যান্ড।

এই “দি ওয়েস্ট ল্যান্ড” ‘এর কবি আধুনিক ভোগবাদী অসুস্থ সমাজ জীবনের চিকিৎসার জন্য খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস আনতে পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি তৈরি হচ্ছেন, বা হয়েছেন যিনি “সকলের দৃষ্টি কাড়া কোন সাহিত্য” সৃষ্টি করে আহ্বান জানাবেন জগতের এই অতি লোভী রুগ্ন সমাজের চিকিৎসার জন্য ইসলামই একমাত্র পথ, নাকি শুধু বিপথগামী-আত্মঘাতী হয়ে রক্তের অক্ষরে লিখবেন ইসলামের ক্রমাধপতনের ইতিহাস।

ইহুদী, নাছারাদের কবি সাহিত্যিকরাও মেন্টরের স্মরনাপন্ন হন। নিজেকে তিলে তিলে তৈরি করে, নিজেকে অতিক্রম করে এক অন্য নিজেকে আবিষ্কার করেন।

আর আমরা মোনাজাতে লিমিটেড থেকে নামাজের কাতারের প্রতিবেশীকে মাস্ক খোলার তাগিদ দেই!

এমনই এক অবস্থা দেখে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম খাম্বাজ রাগে চমৎকার একটা সঙ্গীত রচনা করেন। তার একাংশ এমনঃ

“গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরি যমুনা ঐ,

বহিয়া চলেছে আগের মতো কইরে আগের মানুষ কই?

………………………………………………………………………………………

আমরা জানিনা, জানেনা কেউ,

কুলে ব’সে কত গনিব ঢেউ

দেখিয়াছি কত দেখিব এও নিঠুর বিধির লীলা কতই।”

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *