দ্বিপদ,চতুষ্পদ জন্তু সহ সমস্ত জীব জন্তু উর্বর সময়ে মিলিত হলে সন্তান জন্ম নেওয়া একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। স্পার্ম আর ওভাম ফার্টিলাইজড হলে দ্বিতীয় প্রজন্মের জীবন সৃষ্টির প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়।

মানুষ এবং জন্তুর এই জন্মদান প্রক্রিয়া সমান যোগ্যতার পরিচয় বহন করে। মানুষের এখানে বাহাদুরীর কিছুই নেই।

পশুকে পশু হতে হয় না।  মানুষ কে মানুষ হয়ে উঠতে হয়।  সন্তানকে মানুষ করতে হয়।  এই জন্যই মা, এই জন্যই বাবা।

জন্ম দেওয়া জান্তব প্রক্রিয়া।  মাতা-পিত হওয়া এতো সহজ না। ভূমিষ্ঠ সন্তানকে যেভাবে মানুষ হিসেবে তৈরী করতে হয় তেমনই জন্মদানকারীদেরকেও  মাতা-পিতা হয়ে উঠতে হয়। এটাও একটা কঠিন সাধনা। জন্ম দেওয়ায় কোনো কৃতিত্ব নাই কিন্তু মাতা-পিতা হয়ে ওঠায়  কৃতিত্ব আছে।

আমরা সমাজের মানুষেরা অনেকেই অন্ধ হয়ে গেছি ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি আর ভোগবাদের লালুপ লালসায়।

অনেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর উঠে পড়ে লেগে যাই টাকা পয়সা সম্পদ জোগাড় করতে। সে সম্পদ হালাল না হারাম সেদিকে কোনো  নেই।

অহোরাত্র  সম্পদের মোহে ক্লান্ত হয়ে ভুলে যাই সন্তানের কথা। ভুলে যাই তাদেরকে নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর কথা। যেখানে নৈতিক মূল্যবোধ শেখার শ্রেষ্ঠ জায়গা হওয়ার কথা মা-বাবার উদাহরণ  সেখানে সন্তানেরা খুব কম সময়ই পায় মা-বাবার ঘনিষ্ঠ সাহচার্য্য। ফল হিসেবে সন্তান মানুষ হয়ে ওঠে না। একই সময় জন্ম নেওয়া পশুর সন্তানের সাথে সামান্যই পার্থক্য থাকে।  দৈহিক অবয়বই প্রধান পার্থক্য। মানবিক মূল্যবোধের অনুপাতে মানুষ হওয়ার অনুপাত।

সূরা তাকাসূর-এ আল্লাহ বলেন,”প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে। এমনকি তোমরা কবস্থানে পৌঁছে যাও”-আয়াত ১-২.

অর্থাৎ,লালসার কারণে সব কিছু ভুলে সম্পদ সংগ্রহে অন্ধ যতক্ষণ না মৃত্যু এসে কবরে নিয়ে যায়।

হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে শিকখীর (রাঃ) বলেন,  আমি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পৌঁছে দেখলাম তিনি সূরা তাকাসূর তেলাওয়াত করে বলছিলেন ,”মানুষ বলে,আমার ধন, আমার ধন, অথচ তোমার অংশ তো ততটুকুই যতটুকু তুমি খেয়ে শেষ করে ফেলো অথবা পরিধান করে ছিন্ন করে দাও অথবা সদকা করে সম্মুখে পাঠিয়ে দাও। এছাড়া যা আছে, তা তোমার হাত থেকে চলে যাবে- তুমি ওপরের জন্য তা ছেড়ে যাবে-” (ইব্নে কাছীর,তিরমিযী, আহমেদ )

আজকাল আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি একজন মানুষের সম্পদ-অর্থকড়ির ৭০% থেকে যায় তার মৃত্যুর পরে। অথচ আমরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কে কতো অর্জন করতে পারি, বৈধ বা অবৈধ ভাবে। শুধু নিজের জন্যই না, সন্তানদের জন্যও হাভাতের মতো গ্রাস করতে যেয়ে ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক তথা সর্বত্রই এক চরম অস্থিরতার মধ্যে  বসবাস করি।

কোথায় যেন এক শুন্যতা রয়ে যায় যার জন্য শান্তি বলতে যা বোঝায় তার নাগাল আর পাওয়া যায় না।

“শান্তি কোথা মোর তরে বিশ্ব ভুবন মাঝে,

অশান্তি যে আঘাত করে তাইতো বীণা বাজে। “-এ বীণা ব্যার্থতার, আত্মগ্লানির বেহাগ-বিধুর আকুল আকুতি। 

অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়া জীবনে শান্তি দিতে পারে নাই এবং পারবেও না, নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সন্তানদের জীবন গড়া জীবনে শান্তি আনতে পারে।

মওলানা জালালুদ্দীন রুমী সুন্দর ভাবে রূপক আশ্রয়ে অর্থের প্রয়োজনের পরিমাণ তুলে ধরেছেন, “নৌকা চলতে পানির দরকার আবার সেই পানি নৌকার মধ্যে  ঢুকে পড়লে নৌকাই ডুবে যাবে। সেই রকম জীবন-রূপ নৌকা চলতে অর্থের প্রয়োজন অবশ্যই আছে কিন্তু  অর্থ-রূপ পানি যদি জীবন-রূপ নৌকার মধ্যে ঢুকে পড়ে তাহলে সলিল সমাধীই হবে একমাত্র পরিণাম।

আমরা মনে হয় সেদিকেই ছুটছি। জীবনের দৈনন্দিন ছবি তো তাই বলে।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *