ইসলামের প্রথম খলীফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁর গোলামের দেওয়া খাবার উৎস না জেনে খেয়ে ফেললে গোলাম জিজ্ঞেস করলো,”আপনি কি জানেন কোন অর্থের বিনিময়ে কেনা খাবার খেয়েছেন?”

গোলাম যখন বললেন যে তা ছিল জাহেলি যুগে ধোঁকা দিয়ে করা উপার্জন যা আজ পরিশোধ হয়েছিল, একথা শুনে হজরত আবু বকর (রাঃ) গলায় আঙ্গুল দিয়ে খাবার বমি করে বের করে দেন ।

এই উদাহরণই  প্রমাণ করে হালাল রুজি কেমন হওয়া উচিৎ এবং ওই উপার্জনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ ।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ-সম্ভারের বিলাসী মোহ যখন অন্তরে প্রবেশ করে তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে অর্থের প্রতি লালায়িত হয়ে পড়ে । খসে পড়ে সমস্ত নীতি- নৈতিকতা-আদর্শের শালীন আভরণ ।  মানুষ হয়ে যায় বেহায়া । হালাল পথের উপার্জন পছন্দ না হলে অবলীলায় হারাম পথে পা বাড়ায় ।

রাসুলুল্লাহ ( সঃ)  বলেন, “পৃথিবীতে কোনও বান্দাই তার ভাগ্যে  নির্ধারিত সর্বশেষ আয়ু ও রুজি পূর্ণ না করা পর্যন্ত মৃত্যু বরন করবে না …। আমরা দাবী করি আল্লাহ্‌র উপর ঈমানের কিন্তু কাজে তার প্রমাণ দিতে  অপরাগ হই । ইমান মজবুত থাকলে অস্থির না হয়ে, মধ্য পন্থা অবলম্বন করে সবর করতাম সচ্ছলতার জন্য। কিন্ত না । আমরা পারি না । এই না পারাই প্রমাণ করে আমাদের ঈমানের দুর্বলতা । মুখে দাবী করছি ঈমানের কিন্ত কাজ প্রমাণ করে বে- ঈমানের !! এই কপটতা যাকে আরবিতে ‘ নিফাক’ বলে, প্রমাণ করে যে আমরা মুনাফিক । রিজিকের এই আলোচনা প্রমাণ করলো আমরা ১) বে- ঈমান ২) মুনাফিক ।

অথচ আল্লাহ্‌ সূরা মায়েদার ৮৮ নং আয়াতে বলেন, “ আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছেন তা হতে বৈধ ও উৎকৃষ্ট বস্ত ভক্ষণ কর এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা সকলে বিশ্বাসী ।           

তওবা না করে, নিজেকে সংশোধন না করে আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌  বলে চিৎকার করে শব্দ-দূষণ ছাড়া আর কি ফল হবে ??

নবী করিম ( সঃ) বলেছেন হারাম দ্বারা  পরিপুষ্ট দেহের রক্ত মাংসও হারাম এবং তা বেহেস্তে প্রবেশ করবে না । এই বে হালাল বা হারাম উপার্জন যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য করি তাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই তো হারাম । সেই শিশুদের কি দোষ ছিল ? তারা তো মাতৃগর্ভে থেকে চিৎকার করে নি হারাম উপার্জন করে তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদের পরিবর্তে ধ্বংস করতে !!

নবী করিম ( সঃ) বলেছেন, “ তোমরা যে খাদ্য ভক্ষণ কর তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম খাদ্য হল তোমাদের নিজের হাতে কামাই করা খাদ্য । আর তোমাদের সন্তাগন তোমাদের উপার্জিত ধনের পর্যায়ভুক্ত। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে উপার্জন ইবাদতের অংশ হতে পারতো, যে সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন-পালন ইবাদতের অংশ হতে পারতো লালসার কারনে হারাম উপার্জনের কারনে  তা আজ ধ্বংসের কারণ হয়ে ধেয়ে আসছে ।

রমজানের রহমতের এই সময়ে আমরা যেমন অধির আগ্রহে, অন্তরের ব্যাকুলতা নিয়ে নামাজে, কোরআন তেলাওয়াতে পরিশ্রম করছি, তেমনই ব্যাকুলতায় যেন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হালাল উপার্জনের পথে ফিরে আসার তৌফিক দেন। যদি উপার্জনে কোনও ভুল থাকে তা থেকে সংশধনের পথ সহজ করে দেন । ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার যে শর্ত আল্লাহ্‌ দিয়েছেন সেই হালাল উপার্জনে বরকত দেন । পরবর্তী প্রজন্মকে হালাল রুজি খাওাতে সাহায্য করেন ।

ইয়্যা কা না বুদু, ও ইয়্য কা নাছতায়িন। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি ।

Categories: Uncategorized

1 Comment

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *