তওবা মানে শুধু “আস্তাগফেরুল্লা…” না।
আমরা নামাজের শেষে সালাম ফেরায়েই বলি, “আস্তাগফেরুল্লা…”
না জানার কারণে আমাদের অনেক আমল, অনেক পরিশ্রম ও সময় আশানুরূপ কল্যাণ আঞ্জাম দিতে পারছে না।
তওবার সরল অর্থ ফিরে আসা।কোনো অন্যায় হয়ে গেলে তওবা করার কতক গুলো বিধান আছে যেমনঃ
A)
১) পাপ সংগঠিত হয়ে যাওয়ার সংগে সংগে তওবা করা।
২) ঐ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩) ভবিষ্যতে ঐ অপরাধ না করার শপথ নেয়া।
B)
কোনো ফরজ তরক হয়ে থাকলে তা শীঘ্রই আদায় করে নেয়া। সে নামাজ, রোজা সহ যে কোনো ফরজ হোক না কেনো।
C)
গোনাহ যদি “বান্দার হক” বা হককুল ইবাদ হয় তাহলে সেই বান্দার হক আদায় করা।
টাকা পয়সা দেনা-পাওনা, জমি জমা সংক্রান্ত হক বা অন্য যে কোনো দুনিয়াবী লেন-দেনের হক হলে তা আদায় না করলে তওবা কবুল হবে না।
হকদার যদি বেঁচে না থাকে তাহলেঃ
১) তার সন্তান বা আওলাদের কাছে হক বা টাকা পয়সা, জমি জমা ইত্যাদি ফিরিয়ে দিতে হবে।
২) সন্তান বা আওলাদ পাওয়া না গেলে “বায়তুল মালে” জমা দিতে হবে।(এটা ইসলামী শরিয়ত ভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্য।)
আবার বায়তুল মালের ম্যানেজমমেন্ট ভালো না হলে
৩) ঐ হকদার “বান্দার হয়ে সদাকা” করে দিতে হবে। নিজে ঐ সদাকার সওয়াবের আশা করা যাবে না।
D)
বান্দার হক যদি সম্পদ বা দুনিয়াবি না হয়ে আচার-আচরণগত হয় যেমন, কষ্ট দেয়া, গীবত করা, গালি দেয়া হয় তা হলে তাঁকে খুশী করে তাঁর কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিতে হবে।
E)
বয়সের কারণে বা অসুস্থতার কারণে গোনাহ করতে না পেরে তওবা করলে সে তওবা কবুল হবে না। যেমন, সুযোগ না থাকায় চুরি করা, ঘুষ খাওয়া, জুলুম করা, অন্যের সম্পদ গ্রাস করা থেকে বিরত থাকা অর্থহীন।
কারণ, বয়স বা শক্তি থাকলে ঐ লোক কষ্ট দিয়ে, অত্যাচার করে মানুষের হক নষ্ট করতো। আজ অক্ষম তাই মহাকাল তাকে বাধ্য করেছে ঐ অপরাধ না করতে। এখানে তার কোনো কৃতিত্ব নেই। তাই এমন পরিস্থিতির তওবা কবুল হবে না।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছেঃ
“একটা দাঁত থাকতেও মুরগী শিয়ালকে বিশ্বাস করতে পারে না।”
এখন সব দাঁত ঝরে যাওয়ার পর শিয়াল নিরামিষ ভোজী হলেও তাতে শিয়ালের কোনো উপকার হবে না।
একাধিক গোনাহের বেলায় বিশেষ কোনো গোনাহ থেকে তওবা করলে সেই গোনাহ মাফ হতে পারে তবে তার অন্য গোনাহ থাকলে তা মাফ হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষ গোনাহ থেকে নিস্তার নিয়ে সমনে এগুলেও সামগ্রিক কল্যাণ হবে না।
শেষ কথা হচ্ছে, যাবতীয় গোনাহ থেকে উপরের শর্ত অনুযায়ী তওবা করে পরিশুদ্ধ হতে হবে। এই শর্ত না মেনে শুধু মুখে “আস্তাগফেরুল্লা…” বলে সাগরের ঢেউয়ের সমান ফেনা তুলেও কোনো উপকার হবে না।
জীবনে সুখ ও শান্তির প্রত্যাশা থাকলে এই পথের বাইরে যেয়ে সাময়িক তৃপ্তিবোধ হতে পারে তবে নিরবিচ্ছিন্ন সুখ ও শান্তি কখনোই সম্ভব না।
আল্লাহ সকল রকমের গোনাহ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
0 Comments