(এ লেখাটা দেশের Young Generation-এর অগণিত ছাত্রছাত্রী,কর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা তাই মহাত্মা গান্ধীর সামাজিক রাজনৈতিক অর্জনে না গিয়ে আমি তাঁর সাধারণ থেকে অসাধারন হয়ে ওঠার কথা লিখতে চেষ্টা করেছি যা তোমাদেরকে নতুন করে ভাবতে, উদ্দীপ্ত করতে সহায়ক হতে পারে।)

আজ ২রা অক্টোবর, এই উপমহাদেশের স্বাধীনতার পিছনের কারিগর মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধীর ১৫১তম জন্ম দিবস। আজ ভারতে সরকারী ছুটির দিন। রাষ্ট্রসংঘ এ দিনটাকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ।

আমাদের যুব সমাজের জন্য আজ মহাত্মা গান্ধীর জন্ম দিবসে তাঁকে নিয়ে এমন কিছু লেখার চেষ্টা করবো যার অনেক কিছুই আমাদের অনেকের অজানা। এবং এর মধ্যে রয়েছে একজন সাধারণ মানুষ ইচ্ছা করলে দেশ কালের ঊর্ধে উঠে মহাকালের বক্ষপুটে অমর আসন করে নিতে পারেন তার অনুপ্রেরণা।

নানা অনুপযুক্ততা ও প্রতিকূলতাকে ডিঙায়ে একজন মানুষ কি করে নিজ দেশে নয় শুধু, সারা পৃথিবীতে অমর হয়ে রইলেন, অনেক প্রভাবশালী মানুষের অনুকরণের তালিকায় নাম লেখালেন ? আমার কাছে মনে হয় পৃথিবী যতো অস্থির হবে, অশান্ত হবে তার নাম তত বেশী করে মনে পড়বে সবার ।

তিনি ভারতের জাতীর পিতা, মহাত্মা গান্ধী।

দেশের ঘোর দুর্দিনে রবীন্দ্রনাথ এক জ্যোতির্ময় পুরুষের প্রতিক্ষা করেছেন। ‘নৈবেদ্য’ কাব্যে তিনি এমন একজনের আগমনের আনন্দবারতা ঘোষণা করেনঃ

“…নৃপতিরে শিখায়েছ তুমি

ত্যাজিতে মুকুট দণ্ড সিংহাসন ভুমি,

ধরিতে দরিদ্র বেশ; শিখায়েছ বীরে

ধর্মযুদ্ধে পদে পদে ক্ষমিতে অরিরে,

ভুলি জয় পরাজয় শর সংহরিতে।“

কবি মানসচক্ষে দেখলেন এই মহামানব রাজবেশে না দরিদ্রের বেশে আবিরভুত হবেন। জয় করবেন প্রেমের শক্তিতে, অহিংসার শক্তিতে।  

বাল্য, কৈশোর যৌবনঃ

মহাত্মা। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া উপাধি। অন্যরা অবশ্য বাপূ (বাবা) নামে ডাকতো।

মাত্র ৪৬.৭ কে জি ওজনের এই মানুষটার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি । সাধারণ বয়স্ক পুরুষের ব্লাড প্রেসার যেখানে ১২০/৮০ থাকার কথা সেখানে গান্ধীজীর প্রেসার থাকতো ২২০/১১০। তিনি আধুনিক চিকিৎসা ব্যাবস্থার উপর ভরসা করতেন না । প্রেসার কমানর জন্য প্রতিদিন পেটে মাটি কাদার প্রলেপ দিতেন। নিয়মিত রশুন ও অশ্বগন্ধা খেতেন। পাইলস ও অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করিয়েছিলেন। প্লুরিসির মতো শ্বাসতন্ত্রের অসুখ ছিল। অন্যান্য সাধারন রোগ বালাই তো ছিলই ।কিছুই তাঁকে তাঁর লক্ষ্য থেকে টলাতে পারেনি।

বাল্য, কৈশোর ও প্রাক যৌবনে অন্য সবার মতো গান্ধীজীও বেশ কিছু ভুল করেছিলেন। সিগারেট ধরেছিলেন কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারতেন না। নিকটজনের ছুড়ে ফেলা সিগারেটের অংশ কুড়ায়েও সুখটান দিয়েছেন। তামার পয়সা চুরি করেছেন সিগারেটের নেশা মেটাতে। সে পথ রুদ্ধ হলে বন্ধুদের নিয়ে এক বনজ গাছের সন্ধান পেলেন যার ডাল বা ডাটা সিগারেটের মতো কিন্তু পোষায়নি তাতে। সিগারেটের নেশা পূরণ করতে না পেরে একবার আত্ম-হত্যার কথাও ভেবেছিলেন।

একবার একজনের বাহুবন্ধনির থেকে কিছুটা সোনা চুরি করে চরম আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন। নিজের সাথে অনেক জমা খরচ করে শেষ পর্যন্ত কাগজে অপরাধের কথা লিখে রোগ শয্যায় শায়িত বাবাকে দেন। সেখানে আর কোন দিন এই অপরাধ না করার ওয়াদাও ছিল। পুত্রের লিখিত পাপ স্বীকার ও পুনরায় পাপ না করার অঙ্গীকার পত্র পড়ে বাবার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়েছিল উষ্ণ অশ্রু।

শেখ মেহতাবের প্ররোচনায় গোমাংস খেয়েছিলেন। মেহতাব বলেছিল ইংরেজরা গোমাংস খায় বলে অন্য দেশ জয় করে শাসন করতে পারে আর ভারতীয়রা নিরামিষ খায় বলে অন্যের শাসনের অধীনে থাকে। একথা শুনে গান্ধীজী গোমাংস  খান ।

আইনজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাই মদ খেয়েছিলেন এই ভেবে যে তাহলে আইনজ্ঞদের সাথে এক সমাজে চলতে পারবেন যদিও বিলেতে যাবার সময় মায়ের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে নিষিদ্ধ মাংস, মদ ও নারী থেকে দূরে থাকবেন।

এক শেখের পাল্লায় পড়ে পতিতালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আয়োজন ও পরিবেশ পছন্দ না হওয়াতে ফিরে এসেছিলেন।

ব্রহ্মচর্যঃ ১৩ বৎসর বয়েসে ১৪ বৎসরের পাত্রীর সাথে বিয়ে । ৩৬ বৎসর বয়সে গান্ধীজী ৪ সন্তানের জনক অবস্থায় নারী সংসর্গ ত্যাগ করেন। অসুস্থ বাবার পায়ের কাছে বসে মাসাজ করে দিতেন, সেবা করতেন। একদিন বাবার রোগশয্যায় চাচার উপস্থিতিতে তিনি পাশের ঘরে যেয়ে স্ত্রির সাথে উষ্ণ আলিঙ্গনে মত্ত । ঠিক তখনই বাড়ীর চাকর এসে কড়া নেড়ে খবর দিল যে তার বাবা আর নেই। এক চরম অপরাধবোধ তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল যে বাবার মৃত্যুর সময় সে কাছে থাকতে পারলো না বরং রমণীর মোহে মগ্ন ছিল!! তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন এবং বাকী জীবন নারী সংসর্গ থেকে বিরত ছিলেন। 

বিলেতঃ

বিলেতে যাওয়ার পরে এক রেস্টুরেন্টের ফরাসী মেনু পড়তে না পেরে অসহায় হয়ে পড়ায় এক মহিলা এসে তা পড়ে দেন। সেটা ছিল শুরু। মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ। প্রণয় বেদন শুরু। পরকীয়ায় পা।যখন বুঝতে পারলেন যে সেই মহিলা ডেটিং করতে চায় তখন ঝামেলা এড়াতে তিনি বলে দেন যে তিনি বিবাহিত এবং সন্তানের জনক।

পারিবারিক ভাবে বিশেষ করে মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন নিরামিষ খাওয়া, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, জীবে দয়া ও মানবিকতার চর্চা।

এর পরও পরিবেশ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে অন্য অনেক ছেলেদের মতো এই ভুলগুলো করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধির এমন অশালীন ভুল এটা যতটুকু কৌতূহলের তাঁর চেয়ে অনেক বেশী চমকপ্রদ হচ্ছে তাঁর নিজের অকপট স্বীকার করা। কলিজায় কি পরিমাণ শক্তি থাকলে অবলীলায় বলে যাওয়া যায় যে আমি এই কাজ করেছিলাম!

এই সাধারণ একটা ক্ষীণাঙ্গি মানুষ সাধনায় নিজেকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেলেন যে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়ে, দক্ষিন আফ্রিকায় ইংরেজদেরকে সমুচিত শিক্ষা দিয়ে, মরীচের ঝাল বুঝায়ে দিয়ে ফিরে আসলেন ভারতে। ব্রিটিশকে ভারত উপমহাদেশ থেকে ইতিহাসের অভূতপূর্ব অহিংস আন্দলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করে, হাতের মুঠোর ক্ষমতাকে অবহেলে তুচ্ছ মনে করে সরে আসলেন। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী হলেন না, হলেন মহাত্মা, হলেন সবার বাপু।  

খুব অসাধারন ছাত্র ছিলেন না । রাজকোট আর ভবনগরের স্কুল কলেজে খুব সাধারণ ছাত্র ছিলেন। কলেজেও সুখী ছিলেন না কারণ তার পিতা মাতা তাঁকে আইনজ্ঞ বানাতে চেয়েছিলেন।

গড় পরতা ছিল তাঁর ম্যাট্রিকের ফল। কলেজে ভর্তি হলেও মন বসাতে পারেন নাই। বাবা ততদিনে নেই । চাচার পরামর্শে শেষ পর্যন্ত বিলেত যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাধ সাধল কালাপানি। সনাতন ধর্ম মতে সেই যুগে সাগর পাড়ি দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সেটাও নানা ভাবে অতিক্রম করলেন। এবার মা। মায়ের কাছে ওয়াদা করলেন কোন নিষিদ্ধ কিছু করবে না ।

বিলেতের গান্ধী হ্যাট, বুট, কোট, টাই পরা ছড়ি হাতের সাহেব। বেহালা শিখতেন নিয়মিত। নাচও।

কে কল্পনা করতে পারতো এই সাহেবকে একদিন ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী উইন্সটিন চার্চিলের সাথে খোদ বিলেতে বসে রাজনৈতিক দাবীর টেবিলে দরকষাকষি করতে হবে। সব ছেড়ে অতি সাধারণ জীবন যাপন করা, অতি সামান্য পোশাকে আবৃত ক্ষীণকায় গান্ধীকে অবজ্ঞায় চার্চিল বলেছিলেন, “the naked fakir”।

পোশাকের কমতি দেখে তার অনুরাগী চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন,” শীতের দেশে গান্ধী এই পোশাকে এসে নিজেকে আলচিত করে না তুললেও পারতেন।“ এই পোষাকেই তিনি বাকিং হাম প্যালেসে সম্রাট পঞ্চম জর্জের দেওয়া রাজকীয় নিমন্ত্রণে যোগ দিয়েছেন।

ইংল্যান্ড যেয়ে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরে এসে হোল আর এক বিপদ। লাজুক গান্ধী মানুষের সামনে সাহস নিয়ে কথা বলতে পারতেন না । এখনকার ভাষায় Public Speaking- এ ভীষণ দুর্বল । এজলাসে বিচারকের সামনে যুক্তি তর্ক করতে গেলে তাঁর পা কাঁপত ঠক ঠক করে। সুতরাং মক্কেল জুটাতে বিফল হলেন। বিলেত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে এসে বাস্তব জীবনে কিছুই করেতে পারলেন না। আর মিথ্যা সে তো গান্ধীর কণ্ঠ থেকে উৎসারিত হবে না! তাহলে বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার কি করবেন!

দক্ষিন আফ্রিকাঃ

ব্যারিস্টার হয়েও কিছু করতে না পারার হতাশার মাঝে দাদা আবদুল্লা গান্ধীকে আইনজীবী হিসেবে দক্ষিন আফ্রিকায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এই দক্ষিন আফ্রিকা যাওয়াই গান্ধীজীর জীবনের মোড় পরিবর্তন করে। এক নতুন গান্ধী হিসেবে তিনি পরে ভারতে ফিরে এসে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করেন।

ডারবান, প্রিটোরিয়া, জোহানেসবার্গে অনেক বৈষম্য ও অপমানের ঘটনা ঘটে তার জীবনে। প্রথম শ্রেণীর টিকিট থাকার পরেও সাদা ইংরেজকে জায়গা দেওয়ার জন্য তাঁকে তৃতীয় শ্রেণীতে ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একবার কঠিন শীতের রাতে তার ব্যাগপত্র সহ মাঝপথে জোর করে নামায়ে দেওয়া হয়।

ফুটপাথ দিয়ে হাটার সময়ও পিছন থেকে ল্যাং মারা হয় কালো বলে। সেলুনে চুল কাটতে গেলে ইংরেজ নাপিত চুল কেটে দিতে অস্বীকার করে। গান্ধীজী বাসায় এসে এক হাতে আয়না আর অন্য হাতে কাঁচি নিয়ে নিজের চুল নিজেই কাটেন।কাকের বাসার মতো মাথা নিয়ে বের হলে পরদিন অন্যরা হাসাহাসি আর বিদ্রুপ করে, যদিও তিনি তা গায়ে মাখান নাই।

অনেক হোটেল থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় কালো ভারতীয়দের হয়ে তিনি আইনি লড়াই করেন ও আন্দোলন গড়ে তলেন।   

ভারতে ফেরাঃ

২১ বৎসর দক্ষিন আফ্রিকায় আন্দোলন সংগ্রামের মাঝ দিয়ে নিজেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে এক নতুন গান্ধী হয়ে ফিরলেন ভারতে।

১৯১৫ সালের ৯ই জানুয়ারী ভারতে ফিরে আসেন এবং গোপাল কৃষ্ণ গোখলের মাধ্যমে  কংগ্রেসে যোগ দেন।

অসহযোগ আন্দোলন, চরকায় সুতা কেটে স্বদেশী কাপড় পরা, সত্যাগ্রহ, লবন আন্দোলন সহ নানা অভিনব আন্দলনের সাহাজ্যে ব্রিটিশ রাজের ভিত আর কলিজা দুইটাই  কাঁপায়ে দেন এই ক্ষীণকায় অতি সাদামাটা মানুষটা । এবং শেষ পর্যন্ত তারা ভারত ছাড়তে  বাধ্য হয় । সত্যাগ্রহ সফল করতে এলাহাবাদ থেকে ৪০০ মেইল পায়ে হেটে  সাগরতীরের ডানডি পৌঁছান ।

তার ভক্ত ও অনুসারীঃ

মারটিন লুথার কিং, জেমস লাওসন, নেলসন মেন্ডেলা, খান আব্দুল গাফফার খান, স্টিভ বিকো, রোম্যাঁ রোল্যাঁ ইত্যাদি। ১৯৩১ সালে আইনস্টাইন তাঁকে, ”a role model for the generations to come” হিসেবে বর্ণনা করেন। জন লেনন অহিংসার কথা বলতে যেয়ে গান্ধীকে উল্লেখ করতেন।

মৃত্যুর পূর্বাভাষঃ

২৯শে জানুয়ারী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী, ৪ বছর বয়সী রাজিব এবং জহরলাল নেহেরুর বোন হুতি সিং সবাই মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করতে আসেন । রাজিব মহাত্মার পায়ের কাছে কিছু ফুল রাখলে তিনি কৌতুক করে বললেন,  “ তোমরা এটা করোনা, কারণ মৃত ব্যাক্তির  পায়ের কাছে মানুষ ফুল রাখে।“  এটা যেন তার নিজের মৃত্যুর আবাহন গীতের মতো ।

নাতনী মানুবিন ছাড়া তিনি কোথাও যেতেন না অথচ আগের দিন একা গোসল  খানায় গেলেন, নাশতা করলেন। মানুবিন জানতে চাইলে তিনি রবীন্দ্রনাথ থেকে উত্তর দিলেন, “ তবে একলা চল রে “ এও যেন নিজ মৃত্যুর পূর্বাভাষ দিচ্ছিলেন। পরদিনই ঘটল সেই নির্মম ঘটনা।

মৃত্যুঃ

১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী দিল্লীর বিড়লা ভবনে রাত্রিকালিন পথসভা করার সময় নাথুরাম গডসে গুলি করে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করে। তাঁর অপরাধ? Partition Council-এর সিদ্ধান্তের ৫৫ কোটি রুপি পাকিস্তান কে দেওয়ার জন্য গান্ধীজীর মরণপণ অনশন।

“তিনটি গুলির পর স্থব্ধএক কণ্ঠরুদ্ধ রাত,

ভুলে গেল চন্দ্রসূর্য ভুলে গেল কোথায় প্রভাত”-প্রেমেন্দ্র মিত্র   

তার দেহভস্ম নীলনদ, ভোলগা, টেমস প্রভৃতি নদীতে অর্পণ করা হয়। সামান্য একটু অংশ পরমহংস যোগানন্দকে পৌঁছে দেয়া হয়।বাকিটা Self Realization Fellowship Lake Shrine-এ হাজার বছরের পুরনো চৈনিক পাথরের পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় দিক হোল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাক্তি হিসেবে তার ক্রম পরিবর্তনের ধারা (Transformation)। দেহধারী মানুষ থেকে মহতি চিন্তায় ভরপুর ও এক সুশৃঙ্খল জীবনের ধারক ও বাহক একজন মনিষী হয়ে উঠেছিলেন গান্ধী ।

যে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সারা জীবন দক্ষিন আফ্রিকা ও ভারতে যুদ্ধ করেছিলেন সেই ব্রিটেন তার মৃত্যুর ২১ বৎসর তার সম্মানার্থে পোস্টাল স্ট্যাম্পে গান্ধীর ছবি ছাপায়।

নোবেল কমিটি ৫ বার মনোনয়ন দিয়েছিল, ১৯৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪৭ এবং ৪৮। কিন্তু ১৯৪৮ সালে আততায়ীর হাতে তার মৃত্যু হওয়ায় গান্ধীকে পুরস্কার দিয়ে ছোট করা যায়নি। কারণ মহাত্মা গান্ধী ছিলেন নোবেল পুরস্কারের অনেক উর্ধের  এক সত্ত্বা।

ভারতে ৫৩ টি বড় রাস্তা, সারা পৃথিবীতে ৪৮ টি রাস্তা গান্ধীর নামে। টাইম ম্যাগাজিনে ১৯৩০’র  ম্যান অফ দা ইয়ার।

শেষ কৃত্যে ১০ লাখ মানুষের ঢল ৮ কিলোমিটার লম্বা হয়েছিলো

সমাপ্তিঃ যুগে যুগে বিরল কিছু মানুষ আসেন যাদের নেতৃত্ব, দর্শন পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে।তাবৎ সমাজ, সংসার, সংস্কৃতি, সভ্যতাকে  এক নতুন রাগে রঞ্জিত করেন। মানুষ খুঁজে পায় দেহ ও আত্মার স্বাধীনতার স্বাদ। তাদের জীবনাচরণ, আদর্শ ও নীতিগত দিক পথ দেখায়। অন্ধকারে তারা আসেন আলোর মশাল নিয়ে। নতুন করে ভাবতে শেখান, নিজেদের অধিকার আদায় করতে শেখান।

তেমনি একজন মহামানব কিংবদন্তি মহাত্মা গান্ধী। যার হাতে দমিত হয়েছে ব্রিটিশ শাসকের শাসন। সূচিত হয়েছে স্বাধীনতার সূর্য। জীবনের সবটুকু দিয়ে রচনা করেছেন মানবকল্যাণের বাণী।

**তোমরা পড়তে পারো তার নিজের লেখা “An Autobiography OR The Story of my Experiment with Truth.”  বা  Mhatma: Life of Mohondas Kramchad Gandhi by D. G. Tendulkor, বা Mohatma Gandhi by Piarilal and Sushila Nayar,  বা Gandhi Behind the Mask of Divinity by G. B. Sing.

“I have nothing new to teach the world. Truth and non-violence are as old as the hills.”-M. K. Gandhi

Categories: Uncategorized

1 Comment

Souvik Ganguly · November 6, 2020 at 2:53 pm

কাঁদলাম, লেখা পড়ে কাঁদার সৌভাগ্য খুব বেশী মানুষের হয় না। আমি সেই আশীর্বাদ পাওয়া মানুষদের একজন যাদের ঘরে এই অটোবায়োগ্রাফী বইটা আছে।

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *