দুশ্চিন্তার ১০ লক্ষনঃ

জগত জুড়ে আজকাল এক মহামারী দেখা যাচ্ছে। এটা কোন বাতাসে ভাসমান জীবাণু না বা কোথাও পড়ে থাকা পদার্থ না। এটা সরাসরি আমাদের মাথায় উৎপন্ন।  

প্রতিনিয়ত আমরা এক স্তরের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছি যা আগে কোনদিনও হই নাই। উদবিগ্নতা এই নিয়ে যে, অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা আমাদের সাধ্যের চৌহদ্দিতে থাকবে তো? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার অসামর্থ্যতা তো রয়েই গেছে যে কারণে এন্তার অলস সময় পাওয়া যাচ্ছে চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নতার জন্য।

কিন্তু আল্লাহ্‌ কালামে পাকে ঘোষণা করেছেনঃ

“ওয়ালা তাহিনু ওয়ালা তাহজানু ও আনতুমুল আলাওনা ইনকুনতুম মুমেনিন।“ সুরা আল ইমরান। আয়াত ১৩৯। অর্থাৎ আর তোমরা নিরাশ হইয়ো না এবং দুঃখ করো না। তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।

আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে এই ঘোষণার পর নিরাশ হওয়ার একমাত্র কারণ “যদি তোমরা মুমিন হও” এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়া।

আপনি সনাতন ধর্মাবলম্বী হলে আপনার শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা বলছে, ”নিষ্কাম কাজ করে যাও। কর্মে তোমার অধিকার আছে, কর্মফলে নাই।“  অর্থাৎ, কর্মফলের মায়ায় আবদ্ধ না হয়ে কর্ম করে যাও, কর্মফল দেনেওয়ালা তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।

কিন্ত আমরা সবাই কর্মের আগে কর্মফল নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হই যার কারণে কর্মটাই সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় না।

১।একটু অবসর পেলেই আমাদের মন অতীতে ঘটা খারাপ বিষয় বা আগামিতে ঘটতে পারে এমন খারাপ বিষয় নিয়ে ভাবতে মগ্ন হয়।

২। আমরা আগামিতে ঘটতে পারে এমন বিষয় নিয়ে ভাবছি, তা কিন্তু প্রাসঙ্গিক না কারণ তা অতীতে ঘটে নাই।

৩। আমরা এত বেশী চিন্তা করি যার কারণে আমরা ইমোশনালি,শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদ্গ্রস্থ হয়ে পড়ি।

৪। আমরা মনে মনে একই কথা বার বার বলতে থাকি এই ভেবে যে আর কোন কোন ভিন্ন ভাবে কথাটা বলা যেতো বা কাজটা করা যেতো!

৫।সামান্য একটু ভুল হয়ে গেলেই আমরা নিজেকে পুনর্মুল্লায়ন করতে বসে যাই কিন্তু মনে রাখতে হবে আমরা মানুষ এবং মানুষই ভুল করে।

৬।আমাদের চিন্তা চক্রাকারে ঘুরতে থাকে, কোন উপসংহারে না পৌঁছে, বা বিষয়ে কোন পরিবর্তন না এনে।

৭।একাধিক মানুষ মন্তব্য করেছে বা আমাদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে কিভাবে আমরা আমাদের চিন্তার জালে আটকে যাচ্ছি!

৮।আমরা নির্ঘুম রাত কাটাই কারণ আমরা ঘুমাতে গেলে আমাদের ব্রেইন অতি উচ্চ গতিতে চলতে থাকে।

৯।“তাহলে কি হবে” এই রকম অগুনিত চিন্তা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায় অবিরত এই ভেবে যে কি ঘটতে পারে এর পর!

১০।এই প্রথম আমরা আঁতকে উঠতে শুরু করি যে আমরা সম্ভবত অতি-চিন্তা করছি।

আমাকে স্রষ্টা যেটুকু করতে ক্ষমতা দিয়েছেন তার বেশী করার ক্ষমতা কোথায় পাবো? যে সুখ-সম্পদ-শান্তি আমার নসীবে রেখেছেন তার চেয়ে বেশী কোথায় পাবো? তাহলে অতিচিন্তা কেন?

কোন দুঃসময় এলে কোরানের স্মরণ নিলেই দেখা যাবে যে এই খারাপ সময় আমার জন্য নির্ধারিত ছিল।এটার মধ্যে মঙ্গল আছে বলেই স্রষ্টা আমাকে এই দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে।

কালামে পাকে আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহ্‌র পক্ষে সহজ। সুরা হাদিদ। আয়াত ২২    

তাহলে যে কাজ স্রষ্টার, সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করা, সৃষ্টির ভালো মন্দ ঠিক করা, সে কাজ আমি কেন করতে যাচ্ছি? এই সীমা লঙ্ঘনের জন্য আমার দুঃসময় কি আরও প্রলম্বিত হওয়া উচিৎ না?

“নিত্য কালের উৎসব তব বিশ্বের দীপালিকা-

আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ, জালাও তাহার শিখা

নির্বাণহীন আলোকদীপ্ত তোমার ইচ্ছাখানি।।

অরুপ তোমার বাণী,

অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক সে আনি।।“ -রবীন্দ্রনাথ।  

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *