নবরাত্রী এবং দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার ৯ অবতার:
১. শৈলপুত্রী ২.ব্রহ্মচারিনী ৩.চন্দ্রঘন্টা ৪.কুষ্মাণ্ডা ৫.স্কন্ধমাতা ৬.কাত্যায়নী ৭.কালরাত্রী ৮. মহাগৌরী ৯.সিদ্ধিদাত্রী।
নবরাত্রীর প্রথম ৩ দিন মা কালির প্রতি উৎসর্গ করা হয় শত্রূদের বিনাশ করতে , দ্বিতীয় ৩ দিন মা লক্ষীকে উৎসর্গ করা হয় এবং শেষ ৩ দিন মা স্বরস্বতীকে উৎসর্গ করা হয়। ৯ দিন সংগ্রামের পর দশম দিনে মা দূর্গা মহিষাসুরকে ছিন্নমস্তক করেন।
অকালবোধন:
সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র হনুমান ও বানরের সাহায্য নিয়ে লঙ্কায় পৌছায়ে দেবী দুর্গার পূজা করেন ও সাহায্য প্রার্থনা করেন। দূর্গা ১০৮ টা নীলকমল অর্ঘ্য হিসেবে দাবী করেন।
হনুমান দেবীদহ থেকে ১০৭টা নীলপদ্ম নিয়ে ফিরে আসলে রামচন্দ্র পূজা করতে বসলেন।
হঠাৎ একটা পদ্ম কম দেখে নিজের একটা চোখ উপড়ে ১০৮টা পূর্ণ করে পূজা সম্পন্ন করেন।
দেবী দূর্গা তুষ্ট হয়ে বর দেন। সপ্তমীতে রাম- রাবনের যুদ্ধ শুরু হয়। অষ্টমী ও নবমীর “সন্ধিক্ষণে” রাবণ পরাজিত হয়। দশমীতে রাবণের শেষকৃত্য হয়। এই উপাসনাটা গতানুগতিক ছিল না তাই এটাকে “অকালবোধন” বলে।
অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে “সন্ধিপূঁজা” করা হয়। দুর্গাপূজার এক গুরুত্বপূর্ণ পূজা এই সন্ধিপূজা। চন্দ্র দিবস অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই পূজা করা হয়। অষ্টমীর ২৪ মিনিট ও নবমীর ২৪ মিনিট ব্যাপ্ত এই পূঁজা।
সুতানটি ও শোভাবাজারের রাজবাড়ী থেকে কামান দেগে এই সন্ধিক্ষণ জানান দেওয়া হতো এক সময়। শোভাবাজারের আশপাশের লোকেরা ওই কামানের শব্দের অপেক্ষায় থাকতো “সন্ধিপূঁজা” করতে। কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর প্রান্তরের একটা কামান উপহার দিয়েছিলেন।
দেবী দুর্গার তৃতীয় নয়ন থেকে চামুণ্ডার সৃষ্টি যে চন্ড ও মুন্ডকে হত্যা করে। একারণে দেবী দুর্গা চামুন্ডা রূপে পুঁজিত হন।
তান্ত্রিক মতে দশ মহাবিদ্যা:
১. কালী ২.তাঁরা ৩.ষোড়শী/ললিতা ৪.ভুবনেশ্বরী ৫.ছিন্নমস্তা ৬.ভৈরবী ৭.ধূমাবতী ৮.বগালা ৯.মাতঙ্গী ১০.কমলা।
শুম্ভ-নিশুম্ভের বোন ক্রোধবতির ছেলে রক্তবীজ এক অদ্ভূৎ বর লাভ করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সে আহত হলে যদি একফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়তো তাহলে এক একটা দানবের জন্ম হতো। এভাবে অনেক দানবের জন্ম হয়। এই অবস্থা দেখে মা কালী তাঁর জিহ্বা লম্বা করে প্রতিটা ফোটা রক্ত শুষে নেয়। এভাবে করতে করতে রক্তবীজ রক্তশূন্য হয়ে মাটিতে ঢলে পরে ও মৃত্যু বরণ করে।
এভাবে প্রতিটা মহাবিদ্যার পিছনে আছে এক একটা ইতিহাস যা এই স্বল্প জায়গায় বর্ণনা অসম্ভব।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনেক কবিতায় বিশেষ করে শ্যামা সংগীতে দেবীর অকুন্ঠ বর্ণনাও বন্দনা আছে।”তুই পাষান গিরীর মেয়ে” “স্মশানে জাগিছে শ্যামা মা” সহ অসংখ্য শ্যামা সংগীতে নজরুল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। আবার “ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” না বাজলে মনেই হয় না যে ঈদ এসেছে।
প্রতিটা ধর্মীয় সমাজে নিজ নিজ ইতিহাস ও পুরাণ আছে যা তাঁদের নিজ নিজ অন্তরের সম্পদ।
নজরুল তার একটা শ্যামা সংগীতে সর্ব্ব মঙ্গল চেয়ে সনাতন প্রার্থণা তুলে ধরেছেন এইভাবে:
“ওমা দনুজ-দলনী-মহাশক্তি নমঃ অনন্ত কল্যান-দাত্রী
পরমেশ্বরী মহিষ-মর্দিনী চরাচর বিশ্ব-বিধাত্রী।
………………………………………………………..
রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও,মান দাও, দেবতা করো ভীরু মানবে
শক্তি-বিভব দাও,দাও মা আলোক
দুঃখ-দারিদ্র অপগত হোক
জীবে জীবে হিংসা, এই সংশয় দূর হোক
পোহাক এ দুর্যোগ-রাত্রী। “
(চলবে)
0 Comments