দুধে পানি মেশানো, লাভ ক্ষতি ও সুদ কষা অংক শিখে আমরা বড় হয়েছি।
তোমরা বর্তমান প্রজন্ম যদি সে অংক নাও শিখে থাকো তবুও তোমরাতো আমাদের উত্তরপুরুষ। উত্তরাধিকার সুত্রে উত্তরোত্তর এই ক্রোমোজোমের হাত ধরে আমাদেরই বংশানুক্রমিক ধারা পেয়েছ।
আমরা “আমার” শব্দের সাথে বেশী মগ্ন হয়েছিলাম, অবচেতনে, অবলীলায়। হতে হয়েছিলো তবুও “আমাদের সংসার” এই অনুভূতি না ভুলে পিছনে ফেলে আসা পরিজনদের যথাসম্ভব সেবা করার চেষ্টা করে গেছি।
সে যুগের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের অনেককেই করতে হয়েছে অমানুষিক পরিশ্রম। ধরতে হয়েছে অসীম ধৈর্য। বোবা পশুর মতো সইতে হয়েছে অনেক অবহেলা অসন্মান। এমনি করেই এই আমরা গড়ে তুলেছি একটা নিম্ন ও উচ্চ মধ্যবিত্ত্য সমাজ কাঠামো।
বিজ্ঞানের কল্যাণে জগত সংসারে হয়েছে অভাবনীয় ও অকল্পনীয় পরিবর্তন যার সাথে দ্রুত তাল মেলানোর জন্যে মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম না আমরা। আমারা চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানেরা যেন আমাদের মতো কষ্ট, দুঃখ, যন্ত্রণা না পোহায়। লক্ষ্মীর কাছে পাটুনীর একটাই প্রার্থনা ছিল,”আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।“ সেই দুধ যেন জল মেশানো না হয় এই কাতর মনোবাঞ্ছাও ছিল।
তোমাদেরকে তোমাদের বাবা মায়েরা শিক্ষা দিয়েছে, শিক্ষক দিয়েছে, কোচিং দিয়েছে, সখের মোবাইল,পোশাক,গ্যাজেট থেকে শিক্ষা সফর হয়ে অনেক কিছু সফর দিয়েছে। অনেকের সে দেওয়ার পিছনে ছিল অব্যাক্ত অজানা কাহিনী যা তোমরা জানো না।
কিন্তু একটা জিনিস দেয় নাই। তা হলো কষ্ট, সংগ্রাম করার সুযোগ। বাজারে যেতে দেয় নাই। ঘরে কোন কাজে হাত দিতে দেয় নাই। প্রয়জনের ওষুধ আনতে পাঠায় নাই। নিজেদের কোন কাজের প্রক্সি দিতে দেয় নাই।
কারণ একটাই ছিল, আমার সন্তান অনেক বড় হবে। আমার সন্তান আমার মতো কষ্ট করবে এই কথাটা তোমাদের বাবা মায়েরা কল্পনাও করতে পারে নাই। তাদের দেওয়ার অনুভূতি প্রকাশের শব্দ আমি খুঁজে পাচ্ছি না তাই নজরুলের একটা প্রেমের গানের দুইটা লাইন ভাবার্থে লিখছিঃ
“বল বল হে বিরহী,
তুমি আমারে অমৃত এনে দাও কেন নিজে উপবাসী রহি,
বল বল হে বিরহী।“
তোমাদের বাবা মায়েরদের করা অপত্যস্নেহান্ধ ভুলের কারণে আজ তোমরা অনেক নাজুক।অনেক দুর্বল।
তোমরা বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, জাকারবার্গ, এলন মাস্কদের মতো স্বপ্ন দেখো কিন্ত নিজেকে সেই উচ্চতায় পৌঁছানোর পরিশ্রম ও সবর করতে পারো না। অস্থিরতা তোমাদেরকে স্থাণু করে ফেলেছে।
আলসেমি আর নেগেটিভ অ্যাটিচিউড তোমাদের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে। এর ফল হচ্ছে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের এই “করোনা মহামারী” তোমাদেরকে দিশেহারা করে ফেলছে।
“নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রবতাঁরা,মন রে মোর, পাথারে, হোসনে দিশে হারা।“- রবীন্দ্রনাথ
আমি তোমাদের অনুরোধ করবো হতাশ হয়ো না। তাহলে তোমাদের শিক্ষাশেষ-পেশাজীবন শুরু এমন সময়ে তোমাদের বাবা মায়েরা আরও ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাদের সাহসের উৎস তোমাদের নাভি পদ্মমুলে।
কষ্ট করার জন্য তৈরি হও। মিথ্যে অ্যাটিচিউড, অহমিকা ঝেটিয়ে বিদায় করো। ঘাম ঝরানো কাজের খোঁজে নেমে পড়ো। কি কাজ সেটা দেখার সময় এটা না। কাজটা শুধু অবৈধ না হলেই হয়।
তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক মেধাবী, অনেক ডাইনামিক। তোমরা হাত দিলে মাটিকেও সোনা করতে পারো। দরকার শুধু সব ঝেড়ে লেগে পড়া।
“এখনও কবিতা আছে।তুমি যেয়ো না এখনি,থাকো।শেষ জলসহ লেগে থাকো”। চৈতালি চ্যাটার্জি
0 Comments