“বিদ্বতত্ত্বং চ নৃপত্ত্বং চ নৈব তুল্য কদাচন।

স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।“

বিদ্বান এবং রাজা কখনোই সমান নয়, কারণ রাজাকে শুধুমাত্র তার দেশেই পূজা করা হয়, সন্মান, ভক্তি করা হয় এবং সাধারনত এটা করা হয় রাজার শক্তি বা ক্ষমতার কারণে।

কিন্তু বিদ্বানকে সর্বত্র, সারা পৃথিবীতে সন্মান, সমীহ ও শ্রদ্ধা করা হয় তার জ্ঞানের কারণে।বিদ্বানের সাথে রাজার কখনো তুলনা চলে না। বিদ্বান শ্রেয় এবং শ্রেষ্ঠ।

প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও রাজ উপদেষ্টা কৌটিল্য বা চাণক্য (৩৭০-২৮৩ খ্রি পূর্ব) রাজা এবং জ্ঞানীর মধ্যে তুলনা করে এই কথা বলেছিলেন আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বৎসর আগে।

চাণক্য আরও বলেনঃ

“রুপ যৌবনসম্পন্ন বিশালকুল সম্ভবাঃ।

বিদ্যাহীনা ন শোভন্তে নির্গন্ধা ইবা কংশুকা।“

যতই রুপযৌবন সম্পন্ন বিশালকুলসম্ভব হউক না কেন, বিদ্যাহীন মানুষ গন্ধহীন পলাশ ফুলের মতো । মূর্খ কথা বল্লেই সকলের নিকট হাস্যকর হয়ে ওঠে।

বর্তমানে আমরা একজন মানুষের গায়ের পোশাক, সুগন্ধির ঘ্রাণ, পথ চলার রথের ব্র্যান্ড ও সম্পদের ভিত্তিতে তাকে সন্মান ও সমীহ করি। একটা সমাজ, দেশ, জাতি বা গোটা পৃথিবীর অধঃপতনের ইঙ্গিতবাহী লক্ষ্মণ এগুলো।
চাণক্য জ্ঞানহীন মানুষকে পলাশ ফুলের সাথে তুলনা করে বলেছেন, মূর্খরা পলাশ ফুলের মতো নজর কাড়া উজ্জল্যে আপাত-আকর্ষণ করতে পারে মানুষকে কিন্তু ফুল হিসেবে একে নাকের কাছে নিলেই এর অসার জন্ম প্রমাণিত হয়ে যায় যেমন করে অনেক দামী, দুর্মূল্য, দুর্লভ বসন ভূষণে আভরিত থেকেও এক মূর্খ কথা বল্লেই তার ভিতরের অন্তসারশূন্যতা প্রমাণিত হয়ে যায়।
কোরানের প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দটাই “একরা” অর্থাৎ পাঠ করো। আরবি ব্যাকারণে একে ‘আমর’ বা আদেশ মূলক বাক্য বলে। কোরান জ্ঞান অর্জনের জন্য আদেশ করেছে।

হাদিছে বলা হচ্ছে, একজন জাহেল বা মূর্খের সারা রাতের ইবাদতের চেয়ে একজন আদর্শ আলেমের ঘুম উত্তম। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে জ্ঞান নিয়ে।

ফুলের সুগন্ধি না থাকায় পলাশ ফুলকে ফুল হিসেবে বন্দনা না করে, আবার তাকে অবহেলা, অনাদর না করে “পলাশ ফুলের আকৃতি উল্টা করে ধরলে গেলাসের মতো দেখায়” দেখে পলাশ্রীতে একটা প্রেমের জ্ঞান রচনা করলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামঃ

“পলাশ ফুলের গেলাস ভরি পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া

চাঁদিনী রাতের চাঁদোয়া তলে বুকের আঁচল দেব পাতিয়া।“

ফুলের কুলে জন্ম নিয়েও ফুলের যোগ্যতায় ফুল হয়ে না ওঠায় পলাশের গেলাসে অমিয় বা সুরা বা কারণবারি ঠাই পেয়েছে।
মানব কুলে জন্ম নিয়ে জ্ঞানহীন থাকলে নিয়তি পলাশ ফুলের মত হতে বাধ্য।

সিদ্ধান্ত তোমার।

সুগন্ধ সুরভিত পুষ্প হয়ে চারিদিক আমোদিত করবে নাকি কারণবারি’র গেলাস হয়ে পলাশ ফুলের মতো স্থুল নেশার অণুঘটক হবে।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *