বিশ্ব সহনশীলতা দিবস।

UNESCO ১৯৯৫ সাল থেকে ১৬ই নভেম্বরকে  বিশ্ব সহনশীলতা(TOLERANCE) দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় ।

মোহনচাঁদ করোমচাঁদ গান্ধীর ১২৫তম জন্ম বার্ষিকীতে জাতিসংঘ এই দিনের প্রচলন করে।  ইন্ডিয়ান আর্টিস্ট,লেখক ও কূটনীতিবিদ মদনজিৎ সিং পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রতি দুই বৎসরঅন্তে পুরস্কার বিজয়ীকে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়। 

Tolerance এর আভিধানিক অর্থ “opinion or behavior that you may not agree with or people who are not like you.”

কোনো মতামত বা আচরণ যা কেউ মেনে নিতে পারে না বা কোনো মানুষ যে তোমার আমার মতো না।

সহ্য করা, ধৈর্য্য ধরা।

২০১৮ সালে কানাডার চিত্র নির্মাতা Manon Barbeau এবং কেনিয়ার নারী অধিকার কর্মী Wanjala Wafula যৌথভাবে এই পুরস্কার পান।

দুইজন বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ত্বও এই পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০২ সালে বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিন ও  ২০০৪ সালে অং সান সূ কি। 

এই মুহূর্তের পৃথিবী এক অসহনীয় অসহিষ্ণুতায় থর থর করে কাঁপছে। আমরা নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকেই সহ্য করতে পারি না।  মেনে নিতে পারি না। ব্যাক্তি স্বার্থ, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় তথা সমাজ সংসারের সর্বত্র বারুদের মতো বিস্ফোরোম্মুখ  অস্থিরতা বিরাজমান।

আমাদের সমাজ সংসারে যে মূল্যবোধের চর্চা হতো, বড়োদের কাছ থেকে ছোটরা যে আচার আচরণ শিখতো ও জীবনে অবলম্ব করে নিতো তা ধীরে ধীরে  অবলুপ্ত। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও ভোগবাদের কাছে আমরা মাথা পেতে আনন্দে বলি হয়েছি। আজ আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার মূল্য দিচ্ছে। 

যে ভাবেই হোক “আরো চাই” এর কাছে সব শিক্ষা-নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে বস্তুগত সম্পদ আর ধ্বংসের বীজ নিয়ে মহা উল্লাসে ঘরে ফিরছি আমরা। ধ্বংসের বীজ ছায়ার মতো নিঃশব্দে আমাদের পিছে পিছে আনন্দধামে প্রবেশ করে।  কিন্তু যখন চৈতন্য ফিরে আসে ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার তা হয়ে গেছে। এভাবেই চলছে দুষ্ট চক্রের চক্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি।

সহনশীলতা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলে। আর আমরা নিজেকে ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতে চাই না। এই দুষ্ট চক্র থেকে বের না হলে আমরাও মায়া বা ইন্কা সভ্যতার মতো হয়ে যাবো কিনা বলা দুষ্কর।

পরিবার ও সমাজ সংগঠনে ধর্মের অবদান অশেষ। ধর্মের বাণী সহনশীলতা সম্পর্কে কি বলে আমরা দেখি:

এক নাসারা বৃদ্ধাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে সেই বৃদ্ধা হজরত ওমর (রাঃ)-কে না বললে হজরত ওমর (রাঃ) জবরদস্তি করেন নাই।  সূরা বাকারার ২৫৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য বাধকতা নাই। “

সূরা ইউনূসের ৯৯ আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ ” আর তোমার পরওয়ারদেগার যদি চাইতেন,তবে পৃথিবীর বুকে যারা রয়েছে, তাদের সবাই ঈমান নিয়ে আসতো  সমবেতভাবে।  তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তি করবে ঈমান আনার জন্য ?”

সূরা আনআম-এর১০৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না , যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে।  তাহলে তারা ধৃষ্ঠতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। ”  

নাজরান থেকে আশা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে নবী করীম (সাঃ) যে চুক্তি করেছিলেন Anton F. Haddad তার ইংরেজী অনুবাদ করেছেন। তার কিছু অংশ আমি তুলে ধরছি এখানে :

“Whenever Christian monks, devotees and pilgrims gather together, whether in a mountain or valley, or den, or frequented place, or plain, or church, or in houses of worship, verily we are [at the] back of them and shall protect them, and their properties and their morals, by Myself, by My Friends and by My Assistants, for they are of My Subjects and under My Protection. “

বাইবেল সহনশীলতার ব্যাপারে নিম্নোক্ত বাণী উচ্চারণ করেছে :

“Finally, all of you, have unity of mind, sympathy, brotherly love, a tender heart, and a humble mind. Do not repay evil for evil or reviling for reviling, but on the contrary, bless, for to this you were called, that you may obtain a blessing. For “Whoever desires to love life and see good days, let him keep his tongue from evil and his lips from speaking deceit; let him turn away from evil and do good; let him seek peace and pursue it. পিটার ৩:৮-১১

শ্রীমৎ ভাগবৎ গীতা সহনশীলতার ব্যাপারে বলে”

“Before giving up this present body, if one is able to tolerate the urges of the material senses and check the force of desire and anger, he is well situated and is happy in this world.” গীতা ৫:২৩

মহামতি বুদ্ধও অন্যের চিন্তা ও কাজকে মেনে নেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছেন। 

গুরু নানক ২১ বৎসর যাবৎ পায়ে হেঁটে ভারত উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করে সবাইকে নিজ নিজ ধর্মকে প্রগাঢ় ভাবে আলিঙ্গন করে স্রষ্টাকে স্মরণ করতে বলেছেন। তিনি নিজের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতে বা তাঁর ধর্ম বরণ করতে উৎসাহিত করেন নাই।

সর্বত্র পরমত অসহিষ্ণুতার এই সময়ে প্রতিটা ধর্মের বাণীর প্রভাব কোথায় ? এতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনয়ত প্রচারিত হচ্ছে শান্তির বাণী কিন্তু তার প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি না সমাজ সংসারে।  ক্রমাগত উগ্র আরো উগ্র হয়ে উঠছি আমরা ।

হুদাইবিয়া থেকে সন্ধি করে ফিরে যাওয়া বা নামাজরত অবস্থায় পিঠে উটের ভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়ার সময় সহিষ্ণুতাকে যদি কেউ পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিকল্পনা বলে তবে মক্কা বিজয়ের পরে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়াকে কি বলবেন ! সহিষ্ণুতার এর চেয়ে বড়ো  উদাহরণ আর কি হতে পারে ?

ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (স,শ, ষ) এই বর্ণমালা দিয়েই বলেছেন,”সহ্য কর, সহ্য কর, সহ্য কর। “

আমাদেরকে আরো বেশী সহনশীলতা চর্চা করতে হবে।  অন্যের প্রতি সন্মান, শ্রদ্ধা থাকলেই তখন সহনশীলতা আসবে।  পরের প্রজন্মকে নিজে চর্চার মধ্য দিয়ে সহনশীলতা শেখাতে হবে। অন্যকে সন্মান করলেই সন্মান  পাওয়া যায়। অন্যকে সহ্য করলেই কেবল অন্য মানুষও আমাদেরকে সহ্য করবে। পরশ্রীকাতরতা দূর করতে হবে। পরমত সহিষ্ণুতা বাড়াতে হবে।

ব্রেইন পালস Beta থেকে Alpha লেভেল এ নিয়ে আসতে হবে। সমাজে Theta এবং Delta লেভেল এর মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে  সমাজ তত শান্তির দিকে ধাবমান হবে।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শেষ করি:

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ূ, নিভাইছে তব আলো,

তুমি কি তাদের করিয়াছ ক্ষমা, তুমি কি বেসেছো ভালো?”

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *