মোরগ হলে ডাক ছাড়ো, মুরগী হলে ডিম পাড়ো- বাংলা প্রবাদ।

পেশাজীবনে এই প্রবাদের প্রাসাঙ্গিকতা অপরিসীম। আমরা জীবনের লক্ষ্য ঠিক করি। উদয়স্ত পরিশ্রম করি। নিজেকে তৈরি করতে অনেক স্কিলের উপর প্রশিক্ষণ নেই।

কিন্তু সব কিছুর সম্মিলনে একটা উপভোগ্য কনসার্ট তৈরিতে আমরা অনেকেই পিছিয়ে থাকি।

জোস্না প্লাবিত শুক্লা পঞ্চদশীতে বোবা মুখর হয়ে ওঠে, পঙ্গু একটু হাটার জন্য কাতর হয়ে ওঠে। পরিবেশ মানুষকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে।

আমাদের শিল্পায়ন ও কর্পোরেটের সম্ভাবনার জন্য অনেকেই স্বপ্ন দেখেন জীবনে বড় কিছু অর্জন করার। নিজে ছাড়া কিছু অনুঘটক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ঠিকই তবে নিজের আপোষহীন একগুয়ে জিদ ধরে রাখতে পারলে কোন বাধাই আমাদেরকে স্তব্ধ করতে পারে না।

আমাদের অর্জন শুধু আমাদের নিজেদের জন্য না। আমাদের অর্জনের বহুলাংশের বেনিফিশেয়ারি আমাদের উত্তরপুরুষেরা।তাদের জীবন মান কেমন হবে, তারা আমাদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে তার সবটুকু নির্ভর করে আমাদের আজকের কাজের উপর। আমি অনেক সেশানে কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতার দুইটা লাইন পেশাজীবনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি জীবনের লক্ষ্যকে প্রাঞ্জল করার জন্যঃ

“প্রিয় সামলে ফেলে চলো এবার চপল তোমার চরণ,

তোমার এই চলাতে জড়িয়ে গেছে আমার জীবন মরণ।”

আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপে নির্ণীত হচ্ছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ও প্রিয়জনদের জীবন মান। যারা আমাদের কাছে আল্লাহ্র মেহমান হিসেবে আমানত আছে, সঙ্গী আছে, যেমন সন্তানেরা, সহধর্মী/ধর্মিণী, বাবা মা ভাই বোন এদের কাঙাল দৃষ্টি কিন্তু আমাদের অনেকের উপর। আমরা যদি পা’টা একটু সাবধানে ফেলি, জীবনে উন্নতি করি তাহলে তারা একটা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে। অনেক ভুল এবং বিপথগামীতা থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করতে পারে। আমাদের পেশাজীবনে উন্নতির ঘাটতি থাকলে ভোগান্তি আমাদের প্রিয়জনদেরই বেশী হয়। আমাদের ভুলের কারণে কেউ যদি বাধ্য হয়ে ভুল করে বসে আমরা কি সেই ভুলের শরীকানা অস্বীকার করতে পারব?

আফ্রিকান সাহিত্যের অন্যতম একজন বিখ্যাত লেখক চিনুয়া আচেবে। Things Fall Apart

তার একটা সাড়া উপন্যাস যা ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ৪৫টা ভাষায় ১০ লাখেরও বেশী কপি বিক্রি হয়। প্রধান চরিত্র ওকোংকো’র মুখ দিয়ে লেখক উত্তর-পুরুষদের প্রতি পূর্ব-পুরুষের কর্তব্যের সুন্দর উপমা দিয়েছেনঃ

ওকোংকো তার বাবার পরাজয়কে বিশ্রীভাবে ঘৃণা করত।তার মনে পড়ে খেলার সময় তার এক বন্ধু তার বাবাকে ‘আগবালা’ বলে গালি দিয়েছিল। ওকোংকো এই প্রথম শব্দটা শুনলো। নাইজেরিয়ান ভাষায় ‘আগবালা’ অর্থ নারী/মহিলা (দুর্বল অর্থে), যে মানুষ কোন উপাধি অর্জন করতে পারে নাই। বিভিন্ন অর্জনের ভিত্তিতে নাইজেরিয়াতে একজন মানুষ উপাধি অর্জন করে। অর্থাৎ ওকোংকো’র বাবা জীবনে কোন অর্জনই করতে পারে নাই। তাই তার কোন উপাধি নাই। সেটা তার বাবাকে যতটুকু মর্মাহত করুক বা না করুক ওকোংকো’কে মর্মাহত করেছিল, লজ্জিত করেছিল।

ফল হিসেবে তার বাবা যা কিছু ভালবাসত ওকোংকো তার সব কিছুকে ঘৃণা করতো। বাবার চরিত্রের ঘৃণার একটা দিক ছিল আর বাবা ছিল ধীর প্রকৃতির ও অলস। এটাকে ওকোংকো ঘৃণা করতো।

একবার ওকোংকো’র বাবা গণকের কাছে যায়। গণককে বলে যে, জমিতে সে কোন দেবতাকে কি কি উৎসর্গ করে। এইসব প্যাঁচাল পাড়তে শুরু করে গণকের কাছে। উনোকা কথা শেষ করার আগে গর্জে ওঠে গণক ভদ্রমহিলা। বলেন, “যখন তোমার প্রতিবেশীরা সাত সমুদ্দুর পার হয়ে খুন্তা, সাবল, কুড়াল নিয়ে কাজ করতে যায় তখন তুমি ঘরে বসে থাকো মুরগীর মতো। এবং তুমি অনাবাদী অনুর্বার জমিতে দেবতাদের উদ্ধেশ্যে মানত কর!!”

যাও, বাড়ি ফিরে যাও এবং মরদের মতো কাজ করো-বলে উনোকা’কে তাড়িয়ে দিল গণক।

আমাদের কি ভাবা উচিৎ না আমাদের উত্তর পুরুষেরা আমাদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে? কেমন হবে তাদের জীবন মান? তারা যদি কোন ভুল করে বসে আমরা কি তার দায় এড়াতে পারবো?

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *