রমজান-২০  ২২.০৪.২০২২

আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরতের শেষ দিন বা দশম দিন।

আল্লাহ্‌ স্পষ্ট করে ঘোষণা করেন,

“কুল এন কুনতুম তুহেব্বুনাল্লাহ, ফাত্তাবেউনি।”

হে নবী, বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্‌কে ভালবাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। এবার একথা পরিষ্কার যে স্রষ্টাকে ভালবাসার তরিকাই হচ্ছে নবীকে অনুসরণ করার মধ্যে। সেই নবী তাঁর খেদমতে নিয়োজিত মানুষের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন আমরা একটু দেখি।   

রাসূলুল্লাহ ‘এর দশ বছরের খাদেম অন্যতম সাহাবী হজরত আনাস (রাঃ) বলেন “আমি দশ বছর রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি। তিনি কখনো আমাকে বলেননি যে, এই কাজটি কেন এভাবে করেছো বা কেন এইভাবে করোনি।” 

হজরত আনাস (রাঃ) আরো বলেন, পরিবারের কেউ যদি আমাকে কখনো কিছু বলতে চাইতো নবীজি (সা.) বলতেন, “ওকে বলে কী হবে?” তাকদিরে যা আছে তাই তো হবে। এভাবে নবীজি (সা.) সবাইকে ক্ষমা করার তালিম দিতেন। 

মহান আল্লাহ রাবুল ইজ্জত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্পেশাল আদেশ দিলেন,  

“অন্যায়ের মাধ্যমে কোনো অন্যায় বা মন্দ প্রতিহিত করো না, বরং ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং (অন্যায়কারীকে) উপক্ষা করে যাবে।” (বুখারি)

অনেক জেনে পণ্ডিত হয়ে আমল না করে অল্প জেনে তাঁর উপর আমল করা তুলনামুলক ভাবে ভালো। 

আল্লাহ্‌ সুবহানাতায়ালা আমাদেরকে আমাদের অধিনস্তদের সাথে উত্তম আচরণ করার তৌফিক দান করুন। আমরা যেন আরও বেশী বেশী ক্ষমার যোগ্যতা অর্জন করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্‌ আমাদের এই মাগফেরাতের দশ দিনের আমলের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে আমাদের ইবাদত কবুল করেন এবং আমাদেরকে মাগফেরাত দান করেন। 

আমীন। 

রমজান- ১৯

আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরতের নবম দিন।

মহান আল্লাহ্‌র কাছ থেকে মাগফেরাত বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার আর মাত্র ১০% সময় বা একদিন বাকি আছে। 

সুরা আল ইম্রানের ১৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করছেন কি কি করলে আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও জান্নাত পাওয়া যাবেঃ

১) সচ্ছল ও অভাব উভয় অবস্থায় ব্যয় করা

২) রাগ সংবরণ করা

৩) মানুষকে ক্ষমা করা। 

উপরে উল্লেখিত তিনটা বিষয়ই বান্দার হক বা  ‘হক্কুল ইবাদ’ সম্পর্কিত। 

আল্লাহ্‌র আনুষ্ঠানিক ইবাদততো আমরা করবই, সেটা অনুল্লেখ রেখে এই আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে কি করলে আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাওয়া যায়। এখানে “ছুটে যাওয়া” শব্দ যুগল খেয়ালের দাবী রাখে। এই কাজ গুল করলে বান্দা ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে হেটে না, ছুটে যাবে!

“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন।’ (আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪)

বর্তমান সময়ে আমাদের বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ সর্বত্র অন্য সহকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হয়। কারো একার জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি খেদমতে নিয়োজিত থাকেন, কোথাও একধিক ব্যক্তির জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি খেদমতে নিয়োজিত থাকেন। 

তাঁদের সাথে ভালো আচরণের জন্য ইসলাম স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। এমনকি কেমন কণ্ঠস্বরে কথা বলতে হবে তাও ইসলামী শরীয়তে নিদিষ্ট করে বলা আছে। 

বিষয় হচ্ছে, আমরা এই এলেম অর্জন করে আলেম হলেও যদি তার উপর আমল না করি তাহলে তাহলে যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেলাম। আর হচ্ছেও তাই।

কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদত বন্দেগী ও বিশেষ কিছু দান সদাকা, যাকাত, ফিতরা নিয়ে আলোচনাই বেশী শোনা যায়। কিন্তু  “হালাল রুজি”  ও “হক্কুল ইবাদ” নিয়ে কথা কম শোনা যায়। 

আমাদের ভিতর এক কঠিন অন্ধ বিশ্বাস দানা বেধেছে তা হচ্ছে, শুধু বেশী বেশী ইবাদত, তজবিহ করে যাওয়া ও আল্লাহ্‌র কাছে পানাহ চাওয়া, আল্লাহ্‌র কাছে রহমত ও নিয়ামত চাওয়া। 

কিন্ত বান্দার হক থেকে শুরু করে মাখলুকের সবার হক আদায় না করে, হালা রুযীর পথে না হেটে  মক্কা মদিনা করে যে লাভ হবে না এই কথাটা আমরা কম বলে থাকি।  

আজকে আমরা নীচের হাদিসটা শুধু পড়া না, অনুধাবন করে তা আমলে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করি। “তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম” ‘র মতো আমি বা আমরা যদি কারো খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার গোলাম হই তাহলে আমি বা আমরা উপরস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে কি  ধরনের আচরণ আশা করতাম?

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহকে (সা.) বললো, “আমাদের গোলাম কর্মচারীরা তো ভুলত্রুটি করে থাকে; তাদেরকে আমরা কতবার ক্ষমা করবো?” 

উত্তরে রাসূল (সা.) কী না বলে চুপ রইলেন। লোকটি আমার প্রশ্ন করলো। এবারও রাসূল (সা.) চুপ রইলেন। লোকটি যখন তৃতীয়বার প্রশ্ন করলো। তখন রাসূল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 

اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً

অর্থাৎ “প্রতিদিন তাকে সত্তর বার মাফ করে দিবে” ( মুসনাদেআহমদ)। 

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে  ব্যয় করা, রাগ সংবরণ করা ও ক্ষমা করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

এবার শুনুন রাসূলুল্লাহ এর দশ বছরের খাদেম অন্যতম সাহাবী হজরত আনাস (রা.) কী বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চরিত্র বিষয়ে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি দশ বছর রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি। তিনি কখনো আমাকে বলেননি যে, এই কাজটি কেন এভাবে করেছো বা কেন এইভাবে করোনি।’ হজরত আনাস (রাযি.) আরো বলেন, পরিবারের কেউ যদি আমাকে কখনো কিছু বলতে চাইতো নবীজি (সা.) বলতেন ওকে বলে কী হবে? তাকদিরে যা আছে তাই তো হবে। এভাবে নবীজি (সা.) সবাইকে ক্ষমা করার তালিম দিতেন। 

মহান আল্লাহ রাবুল ইজ্জত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্পেশাল আদেশ দিল, 

ولا تدفع السيئة بالسيئة ولكن يعفو ويصفح 

অর্থাৎ অন্যায়ের মাধ্যমে কোনো অন্যায় বা মন্দ প্রতিহিত করো না, বরং ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং (অন্যায়কারীকে) উপক্ষা করে যাবে’ (বুখারি : ৪৮৩৮)

রমজান- ১৮

আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরতের অষ্টম দিন।

আর মাত্র ২০% সময় বাকি আছে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার।

কোরানের এই মাসে, যার কাছে  কোরান নাযিল হয় সেই মহা নবী (সঃ) এর জীবন থেকে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কিছু উদাহরণ আমি নিয়মিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি। 

হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ে সন্ধি নিয়ে আলোচনা করতে এসে ওরওয়া ইবনে মাসুদ সাকাফি কথার মাঝে নবী করীম (সঃ) এর পবিত্র দাঁড়ি মোবারক স্পর্শ করছিল। 

একবার চিন্তা করে দেখুন একজন সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনা করতে এসে বিপক্ষ দলের কেউ যদি এই পক্ষের দলনেতার দাঁড়ি স্পর্শ করে তা কি ম্যাসেজ দেয়? কতোখানি অপমানজনক! 

সেখানে সাইয়েদুল মুরসালিন আখেরি নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথে কথা বলতে বলতে নবিজীর (সঃ) দাঁড়িতে হাত দেওয়া! তিনি ইসলামের মঙ্গলের জন্য  শত্রু পক্ষ থেকে অন্যান্য অসদাচরণের মতো এবারও চুপ ছিলেন। 

হ্যাঁ, তাঁর সাথে ছিল নিবেদিত প্রাণ সাহাবী (রাঃ)। এর মধ্যে থেকে হযরত মুগিরা ইবনে শোবা (রাঃ) তলোওয়ারের বাট দিয়ে  ওরওয়া’র হাত সরায়ে দিতে দিতে বলেন,  ”নিজের হাত আল্লাহ্‌র রসূলের (সঃ) দাঁড়ি থেকে দূরে রাখো।” 

নবীজী (সঃ) হযরত আলী (রাঃ) ‘কে হুদাইবিয়ার সন্ধির শুরুতেই  “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম”  লিখতে বল্লেন। সোহায়ল ইবন আমর বলল, ”রহমান কে, কি তা আমরা জানি না।” 

আমি বলছি এভাবে লিখুন, ”বে- ইসমিকা আল্লাহুম্মা।” অর্থাৎ আপনার নামে হে আল্লাহ্‌ বলে লিখুন।

নবীজী (সঃ) হযরত আলী (রাঃ) ‘কে সেভাবে লিখতে বলে বল্লেন লিখো, ”এগুলো সে সব বিষয় যেগুলোর উপর রসূল (সঃ) সন্ধি করেছেন।” 

এ পর্যায়ে   সোহায়ল বলল, “আমরা যদি মানতাম আপনি আল্লাহ্‌র রসূল তাহলে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে আপনাদেরকে বাঁধা দিতাম না। আপনি মোহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ লিখতে বলুন।”

নবীজী (সঃ) হযরত  আলীকে (রাঃ) ‘কে “মোহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ”  লিখতে ও “রসুলুল্লাহ” শব্দ মুছে দিতে বললে হযরত  আলীকে (রাঃ) অস্বীকার করেন।  নবীজী  (সঃ) নিজ হাতে সেই লেখা মুছে দেন!

এমন অমর্যাদাকর পরিস্থিতি হজম করে, শত্রুদেরকে ক্ষমা করে ইসলামকে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে নেন আল্লাহ্‌র রসূল। 

তাঁর উম্মত হয়ে আমরা কততুকু অমর্যাদা, অসন্মান সহ্য করি? 

আমরা নিজেদেরকে ক্ষমার গুণাবলীতে সাজাতে না পারলে সেই মহাক্ষমাশীলের কাছ থেকে ক্ষমার আশা করবো কোন মুখে? 

“ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।”- হে আল্লাহ্‌, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে এবং আমার প্রতি দয়া করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আমীন। 

রমজান-১৭

পবিত্র মাহে রমজানের আজ  সতেরতম দিন।

মাগফেরাতের পাশাপাশি আরও একটা ‘গেম চেঞ্জিং’ দিন এই ১৭ই রমজান। 

দ্বিতীয় হিজরির এই দিনে বদর প্রান্তরে মক্কার দুর্ধর্ষ সহস্র সৈন্যদলের সাথে তিন শতাধিক সৈন্যের মুসলমানদের সাথে ইসলামের ইতিহাসের সর্ব প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। 

নবী করীম (সঃ) ১৭ই রমজান রাতে মদিনা থেকে বদর অভিমুখে  বের হন।  সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত এই সেনা বাহিনীতে সমস্ত মুসলমানগণ অংশ গ্রহণ করেন নাই। কেউ কেউ মদিনায় থেকে গিয়েছিলেন। সেনা দলে মাত্র ২ টি ঘোড়া ছিল। উট ছিল মাত্র ৭০ টি। প্রতিটি উটে ২-৩ জন পালাক্রমে আরোহণ করতেন। সেনানায়ক হলেও নবিজীর উটে হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত মারসাদ ইবনে আবু মারসাদ (রাঃ) পালাক্রমে আরোহণ করতেন। 

আল্লাহ্‌র প্রত্যাক্ষ মদদ, মুসলমানদের দৃঢ় ঈমান ও অকুতোভয় দৃপ্ত রণঝংকারে মক্কার শত্রু বাহিনী ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই দিনে বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ইসলামের ইতিহাস ও গতিপথ সম্পূর্ণ পাল্টে সাফল্যের পর সাফল্য অর্জিত হতে থাকে। 

নবিজীর (সঃ) মুখ থেকে জেহাদে উদ্বুদ্ধকারী কথা শুনে ওমায়র ইবনে হাম্মাম (রাঃ) হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে বল্লেন, ”এত গুলো খেতে অনেক সময় প্রয়োজন। জীবন এত দীর্ঘ করবো কেন?”  ওমায়র ইবনে হাম্মাম (রাঃ) লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে যান। এই একটা উদাহরণই বলে দেয় মুসলমান সেনারা কতোখানি আত্মত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন! এমন নেতার নেতৃত্ত্ব ও এমন সেনারাইতো সফল হবে!

নবীজী (সঃ) হাতের তীর দিয়ে সেনাদলকে সোজাভাবে কাতারবন্দী করছিলেন। হযরত সাওয়াদ ইবনে গাযীরা (রাঃ) কাতার থেকে সামনে থাকায় নবীজী (সঃ) তীরের ফলা সাওয়াদ ইবনে গাযীরা (রাঃ) ‘র পেটে লাগিয়ে বলেন, ”সাওয়াদ দলের সবার সাথে সমান হয়ে যাও।” 

সাওয়াদ তখনই বলে ওঠেন, ”হে আল্লাহ্‌র রসূল, আপনি আমকে কষ্ট দিয়েছেন। এবার আপনার উপর বদলা নিতে দেন।”

নবীজী  (সঃ) পেটের উপর থেকে জামা সরায়ে বল্লেন, “নাও এবার বদলা নাও।”   সাওয়াদ নবীজী  (সঃ) ‘কে জড়িয়ে ধরে সেই পবিত্র পেটে চুম্বন করেন। নবীজী (সঃ) প্রশ্ন করলে সাওয়াদ (রাঃ) বলেছিলেন, “আমার একান্ত ইচ্ছা যে আপনার এই পবিত্র দেহের সাথে আমার দেহের সংস্পর্শ যেন আমার জীবনের শেষ ঘটনা হয়।”

লক্ষণীয়, একজন সাধারণ সৈন্যের এই ধরনের আচরণকে আমারা কিভাবে নিতাম!! নবীজী (সঃ) ক্ষমা এবং ন্যায় বিচারের কি প্রকৃষ্ট নজির স্থাপন করলেন এই মাগফেরাতের দশকে!

যুদ্ধ বন্দীদেরকে মদিনায় আনা হলে নবীজী (সঃ) আদেশ দিলেন তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে।  এর ফলে সাহাবিরা নিজেরা খেজুর খেয়ে থাকতেন ও যুদ্ধ বন্দীদেরকে রুটি খেতে দিতেন।(সে সময়ে রুটি দুর্লভ ছিল।)

যাদের চরম খারাপ আচরণের জন্য নবীজী (সঃ) মাতৃভুমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হন, তারাই যুদ্ধ বন্দী হয়ে এলে হত্যা না করে অনেককে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন। যারা মুক্তিপণ দিতে পারে নাই তাদের মধ্যের শিক্ষিতদেরকে এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো যে তারা প্রত্যেকে মদিনার ১০টি করে শিশুকে লেখা পড়া শেখাবে। অনুগ্রহ করে আরও কিছু বন্দীকে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি দেন। 

নবিজীর (সঃ) ক্ষমা ও মহানুভবতা লিখে শেষ করা যাবে না। যার যুদ্ধকালীন আচরণ এমন, তাঁর শান্তির সময়ের আচরণ কেমন ছিল! আমরা কি শিক্ষা নিচ্ছি নবীর (সঃ) থেকে যার সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে নবীর (সঃ) জীবনের।”

‘কুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিয়ুনি ইহব্বিকুমুল্লাহ’

অর্থাৎ হে নবী বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা আল-ইমরান-৩১) 

সেই নবীর উম্মত হয়ে আমরা কি নবীর দেখানো পথে চলতে পারছি? নবী যেভাবে ক্ষমা করতে পেরেছেন আমরা কি সেভাবে ক্ষমা করতে পারছি?

যদি না পেরে থাকি তাহলে প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহ্‌র হুকুমের বাইরে  যেয়ে রমজানকে উসিলা ভেবে আল্লাহ্‌র ক্ষমা আশা করি কিভাবে?

আশা’র পথ একটাই নিজে মানুষকে রহম করা, মানুষকে ক্ষমা করা। আল্লাহ্‌র যে নাম গফুর, গফফার সেই নামের গুণে নিজেকে গুণান্বিত করে আল্লাহ্‌র সামনে জায়নামাজে নত মুখে দাঁড়ালে তবেই মাগফেরাতের আশা করা যেতে পারে। 

দুঃখের বিষয় আমরা ইসলামের সবটুকু জানি না। জানানো হয় না। বাংলায় সবকিছু পাওয়া গেলেও আমরা পড়ি না। আবার পড়লেও তার উপর আমল করি না।

রিজিক হালাল না করে, “হক্কুল ইবাদ” অবহেলা করে যত ইবাদতই করা হোক না কেন কোন ফায়দা হবে না। 

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হালাল রিজিক তালাশ করার, “হক্কুল ইবাদ” আদায় করার ও মানুষকে ক্ষমা করার তৌফিক এনায়েত করুন যার অসিলায় আমরা রমজানের মাগফেরাতের দশকের কল্যাণ লাভ করতে পারি। আমীন।  

রমজান-১৬

পবিত্র মাহে রমজানের আজ  ষোড়শ দিন।

মাতৃভুমি মক্কা ছেঁড়ে মদিনায় হিজরত করার পূর্বে নবীজী (সঃ) সাহায্যের আশায় তায়েফে যান। মক্কায় নবিজী’র (সঃ) উপর অত্যাচারের চূড়ান্ত আঘাত নেমে আসলে দুধ মাতা ও কোরাইশদের একজন তায়েফে বিয়ে করার কথা মনে করে তায়েফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

কিন্তু তায়েফবাসী চরম খারাপ আচরণ করে তার সাথে। তারা তায়েফ ত্যাগের নির্দেশ দেয়। বাচ্চাদেরকে লেলিয়ে দেয় পাথর ছুঁড়তে। 

শুধু লেখাটা না পড়ে দয়া করে একটু অনুভব করতে, উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন। 

পাথরের আঘাতে শরীর থেকে রক্ত ঝরে নবিজীর (সঃ) পায়ের চামড়ার মোজা ভোরে যায়। এমনি দুঃসময়ে হযরত জায়েদ (রাঃ) অকল্পনীয় আত্মত্যাগের মাধ্যমে নবীজীকে (সঃ) আঘাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। যেদিক থেকে পাথর ছুটে আসতো  হযরত জায়েদ (রাঃ)  সেদিকে নিজের পিঠ পেতে দিয়ে নবীজিকে (সঃ) আড়াল করতে থাকতেন। 

কষ্টে নবীজী (সঃ) পথের উপর বসে পড়লে তারা নবীজিকে (সঃ) হাত ধরে উঠায়ে হাঁটতে বাধ্য করাতো এবং তাঁর উপর পাথর ছোঁড়া শুরু করতো। 

তায়েফ থেকে তিন মাইল দূরে এক বাগানে আশ্রয় নিয়ে নবীজী (সঃ) আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করেন। সে দুয়া “দোয়ায়ে মুস্তাদয়িফিন” বা অসহায় মানুষের দোয়া নামে পরিচিত।

এমন অবস্থায় আল্লাহ্‌র পাঠানো ফেরেশতারা জালেমদেরকে পাহাড়ে পিষে ফেলার অনুমতি চাইলে নবীজী সেই কঠিন দুর্দিনেও ফেরেশতাদেরকে সে অনুমতি না দিয়ে বলেছিলেন, হতে পারে তাদের মধ্যে এমন লোকের জন্ম হবে যারা এক আল্লাহ্‌য় বিশ্বাস করবে ও তাঁর ইবাদত করবে।

নিজের এই নাজুক পরিস্থিতিতেও নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনায় না এনে তিনি তাঁর ভিশন-মিশন নিয়ে নিবেদিত ছিলেন। 

নিজের শরীরের উপর অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেও নবীজী (সঃ) তায়েফবাসীদেরকে  ক্ষমা করে দেন।

একটু ভেবে দেখি আমরা আমাদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডের মঝে রাগ করলে কতটুকু ক্ষমা করতে পারি? এই মাগফেরাতের দশকে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাওয়ার ও পাওয়ার আশা করার আগে একবার আমরা কি ভেবে দেখতে পারি না আমরা কতটুকু ক্ষমাশীল!!

রমজানের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ দেখলে অনেক সঙ্কীর্ণমনা কপাল কুঁচকাতে পারেন তবে মাতৃভাষায় উত্তম কমুনিকেশানের জন্য নীচের দুইটা লাইন ছাড়া আমার আস্তিনে আপাতত বিকল্প কিছুই নাইঃ  

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।” 

রমজান-১৪

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ৫ম দিন।

নীচের হাদিসটা আমাদের দেশের অধিকাংশ কর্পোরেট ও অন্যান্য অফিসের/ কর্ম ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য” 

আমরা যারা মালিক পক্ষ, যারা সিনিয়র লিডার তাঁরা আমাদের টীমের জুনিয়র সহকর্মীদের কাজকে একটু সহজ করে দিতে পারি। বাকি ১১ মাস প্রয়োজনে একটু বেশী রেখে যদি রমজানে একটু রেহাই দেওয়া যায় তাহলে ঐ ব্যক্তিটার জন্য রমজানের হক আদায় করা সহজ হয়ে যায়। বলা হচ্ছে,

“তুমি রহম কর, যেভাবে আসমানের মালিক তম্র উপর রহম করেছেন।”

এবারের রোজায় আমার জানা মতে অনেকেই সময়ের অভাবে,কাজের চাপে ও অতিরিক্ত ট্রাফিকের জন্য পথে পথেই ইফতারি করছেন। পরিবারের সাথে ইফতার করতে না পারার কারণে  এই মানুষগুলোর বুকের গহিন থেকে যে ভারী দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তা আমাদের ইবাদতকে অনেক হালকা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ পরোক্ষভাবে হলেও তাদের এই তকলীফের পিছনে আমাদের হাত আছে।  

নবী করীম (সঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনস্থ দাসদাসীদের দায়িত্ব কমিয়ে দেবে,  আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত তাকে ক্ষমা করবেন এবং দান করবেন জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ।” মিশকাতুল মাসাবিহ

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন ও অধিনস্থদের কাজকে সহজ করে ইবাদতের সুযোগ করে দেওয়ার তৌফিক দেন। আমাদেরকে মাগফেরাতের ফায়দা হাসিল করার সুযোগ দেন।

আমীন। 

আমাদের বাংলাদেশের কর্পোরেট কালচার……

প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’ 

খারাপ কাজগুলো পরিহার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নিয়মকানুন মেনেই আমরা রোজা পালন করে আসছি। কিন্তু মিথ্যা কথা, কুটনামি করা, গিবত বা পরনিন্দা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া, কুনজর বা কামুক দৃষ্টিতে তাকানো—এসব খারাপ দিকগুলো কি পরিহার করতে পেরেছি? 

তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪০)

“হে রসুল (দ.) আপনি বলুন-হে আমার ওই বান্দাগণ! যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করেছো, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সুরা আয-যুমার, আয়াত নং-৫৩।]

রমজান-১৩

পবিত্র মাহে রমজানের আজ ৪র্থ দিন।

মাগফেরাতের দশকের ৪০% সময় আলরেডি চলে গেছে। 

কতটুকু ক্ষমা নিতে পেরেছি তা আমরা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারি। 

আমি আগে কোথাও লিখেছি, সিদ্ধান্ত হচ্ছে তাই যা গ্রহণের পর থেকে ব্যক্তির আচার আচরণ সহ সার্বিক জীবনে এক আমুল পরিবর্তন আসতে হবে। যদি আমরা সেই নবাঙ্কুর না দেখতে পাই তাহলে বুঝব অযথা সময় ক্ষেপণ করে চলেছি। 

আমরা কি প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান হলে “রুষে উঠি .. মহাকাশ  ছাপিয়া?”, ( বিষয়টা বে-শরিয়তি তবুও সমাজের চিত্র তুলে ধরতে উদাহরণ দিলাম),  রিক্সাওয়ালা ১০ টাকা বেশী চাইলে বা কথা না শুনলে চিৎকার করে উঠি? ফকির একটু বেশী মিনতি করলে জান্তব চিৎকারে  ফেটে পড়ি?, পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র দুর্বলের উপর বজ্রপাত হয়ে উঠি?

যদি তাই হয় তাহলে আমাদের কোনই পরিবর্তন হয় নি। শুধু দৈনন্দিন জীবনাচারে কিছু হের ফের হয়েছে মাত্র! 

বাহিরের এই পরিবর্তনকে অন্তরের পরিবর্তনে পরিবর্তিত করতে হবে। 

“বাহিরে ভুল হানবে যখন অন্তরে ঘুম ভাঙ্গবে কি,

বিষাদ বিষে জ্বলে শেষে তোমার প্রসাদ মাঙ্গবে কি?।

………………………………………………………………

যতই যাবে দুরের পানে

বাঁধন ততই কঠিন হয়ে টানবে নাকি ব্যথার টানে 

অভিমানের কালো মেঘে 

বাদল হাওয়া লাগবে বেগে

নয়ন জলের আবেগ তখন 

কোনই বাঁধা মানবে কি?”

আল্লাহ্‌র থেকে আমরা যে কোন কারণে যত দুরেই যাই না কেন এর অদৃশ্য ব্যথার টান আমাদেরকে কাতর করে তোলে। তাহলেই আমরা নরম্যাল। নইলে অ্যাবনরম্যাল।

নিজেকে সেই মহাস্রষ্টার কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করলে অনুতাপের ধারা চোখের জলে গলে গলে বুক ভিজাবে। “অশ্রু নদীর সুদূর পারে” স্রষ্টার ক্ষমার শিখা উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হবে। 

দরকার শুধু উপলব্ধি, সমর্পণ আর কাতর প্রার্থনা। তবে তা স্রষ্টার সাথে ওয়াদা ভঙ্গের জন্য, কখনোই সৃষ্টির সাথের কোন অধিকার হরণের না, এটা মনে রাখতে হবে। 

 আল্লাহ্‌ আমাদেরকে মাগফেরাতের বরকত হাসিলের তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।   

পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাতের আজ ৩য় দিন।

অন্য মানুষকে ক্ষমা করা ও রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ক্ষমা পাওয়ার জন্য কোশেশ করতে হবে।  

রাগ সম্পর্কে বলতে যেয়ে নবী করীম (সঃ) বলেন, “আদম সন্তানের অন্তর একটি উত্তপ্ত কয়লা” (তিরমিজি)। এই উত্তপ্ত-কয়লা-জাত রাগ সংবরণ করা সবচেয়ে বড় বাহাদুরি।  আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে। 

এক যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) বিরোধী পক্ষের এক সেনাপতিকে ধরাশায়ী করলে সেই সেনাপতি হযরত আলী  (রাঃ) মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়।  হযরত আলী  (রাঃ)  তখনই তাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। 

অবাক শত্রু সেনাপতি তাকে হত্যা না করে ছেঁড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে হযরত আলী  (রাঃ) বল্লেন, “আপনার সাথে আমার যুদ্ধ আল্লাহ্‌র প্রতি অবিশ্বাসের কারণে।  

আপনি থুথু ছিটিয়ে আমার রাগ উদ্রেগ করে দিয়েছেন। এখন যদি আমি আপনাকে হত্যা করি তা হবে আপনার প্রতি আমার রাগের কারণে, আল্লাহ্‌র অহদানিয়াতের প্রতি অবিশ্বাসের কারণে না। তাই আমি আপনাকে হত্যা না করে ছেঁড়ে দিয়েছি। 

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, “অতএব তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগমাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।” (সুরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৬-৩৭)।

এমন অগণিত উদাহরণ আমরা পাবো নবী করীম (সঃ), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), আউলিয়ায়ে কেরাম (রহঃ) ‘দের জীবনে। 

বদর যুদ্ধের থেকে ফিরে এলে নবী করীম (সঃ) বল্লেন, “তোমরা ছোট যুদ্ধ থেকে বিজয়ী হয়ে এলে, এবার বড় যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।”   “বড় যুদ্ধ”  বা “জেহাদে আকবর” হচ্ছে নফসের সাথে যুদ্ধ করে জয় লাভ করা। 

রাগের কারণেই আমরা মানুষকে ক্ষমা করতে পারি না। তাহলে আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের উপর রাগ করলে তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন কি কারণে? আমরা যদি মানুষকে ক্ষমা করার অভ্যাস গড়তে পারি তাহলে আশা করা যায় আল্লাহও আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। 

আসুন, আমরা প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে ঘুমানর অভ্যাস গড়ে তুলি। 

وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা মুজাম্মিল। আয়াত-২০ 

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে রাগ সংবরণ করা ও মানুষকে ক্ষমা করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।  

রমজান-১২

পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাতের আজ ১ম দিন।

আল্লাহ্‌ রহিম, রহমান, গফুর, গফফার। আল্লাহ্‌ মাফ করনেওয়ালা। আল্লাহ্‌ মাফ করা পছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ জানেন আমরা ভুল করব তাই আমাদেরকে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র কাছে কায়মনবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি। 

আল্লাহ্‌ ইবলিস শয়তানকে নিরাশ করে বলেছেন, বান্দা বার বার অপরাধ করে ক্ষমা চাইলেও তিনি ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং মাগফেরাতের এই সুবর্ণ সময়ে আমাদের উচিৎ আল্লাহ্‌র কাছে কাতর হয়ে ক্ষমা চাওয়া। 

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সকল মানুষ ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তওবাকারী।’ (বায়হাকি)

পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেন,

“তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না।”  (সূরা আল ইমরান। আয়াত ১৩৩-৩৫)

কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে আমরা দুইটা যায়গায় ভুল করি বুঝে অথবা না বুঝেঃ

১) কোন আল্লাহ্‌র বান্দার প্রতি অবিচার, জুলুম করে তার থেকে ক্ষমা না নিয়ে, সে সমস্যার সমাধান না করে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাওয়া।  যেন ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে তা শোধ না করে  আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো। 

টাকা ধার নিলাম ব্যাংক থেকে। সে টাকা শোধ না করে মসজিদে যেয়ে সেজদায় পড়ে থাকলাম! এটা কখনো হবার না।

বরং এমন হতে পারে নিজের কাজ করার পাশাপাশি আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাওয়া যাতে আল্লাহ্‌ ঋণ শোধ করার তৌফিক দেন বা কোন অসিলা তৈরি করে দেন। 

২)  মোনাজাতের শব্দ গুলো না বুঝে শুধুই তোতা পাখির মতো উচ্চারণ করে গেলাম। না বুঝার কারণে ঐ প্রার্থনার তেমন তাসির বা প্রভাব পড়ে না মনে। কোন আকুতি বা আন্তরিকতা তৈরি হয় না। 

অথবা অন্যের করা দোয়ায় শুধুমাত্র “আমীন” “আমীন” বললে সে মুনাজাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায় না।  

মুনাজাতে যদি বিনয় নম্রতা প্রস্ফুটিত না হয় তাহলে তা আবৃতি ও অভিনয়ে পরিণত হয়। মনে হতে পারে ক্ষমার দাবী নিয়ে রাজপথে 

দাঁড়ায়েছি। মুনাজাত হয়ে ওঠে উদ্ধত আচরণের মতো। 

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে  “হক্কুল ইবাদ” তথা সমগ্র মাখলুকের প্রতি সুবিচার করার তৌফিক দান করেন, কারো প্রতি অবিচার করলে এই রমজানে তার বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমা নেওয়ার সুযোগ করে দেন এবং “হক্কুল্লাহ” বা আল্লাহ্‌র হক আদায় না করে থাকলে তার জন্যে আল্লাহ্‌র কাছে থেকে বিনম্র চিত্তে ক্ষমা চেয়ে নেই। 

এই রমজান যেন হয় আমাদের জন্য মাগফেরাত ও নাজাতের জন্য শেষ রমজান কারণ আমরা জানিনা সামনের কোন রমজান আমাদের নসীবে আছে কি না। 

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদের হক আদায় করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন। 

রমজান-১১

পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশকের প্রথম দিন আজ। 

মাগফেরাত অর্থাৎ ক্ষমা। আল্লাহ্‌র কাছে কৃত গোনাহের জন্য তওবা করে, পুনরায় ঐ অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দিতে পারেন। 

আল্লাহ্‌র এক নাম গফুর অর্থাৎ ক্ষমাশীল। খাটি অন্তরে তাওবা করে, তাঁর কাছে চাইলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন।  

জিবরাঈল আমীন যখন বল্লেন, “ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করায়ে নিতে পারল না।” 

তখন নবীজি (সা.) বললেন, “আমিন।”

যেখানে রাসূলে মকবুল (সা.) ধ্বংসের দোয়ায় ‘আমীন’ বলেছেন তা কখনও বিফলে যায় না। অর্থাৎ যদি রমজান পাওয়ার পরেও আমরা আমাদের গোনাহ মাফ করায়ে নিতে না পারি তাহলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। এই গোনাহ দুই রকমেরঃ ১) আল্লাহ্‌র হক “হক্কুল্লাহ” নষ্ট করার পাপ ২) বান্দার হোক “হক্কুল ইবাদ” নষ্ট করার পাপ। 

তবে এ ক্ষমা  “হক্কুল্লাহ” আল্লাহ্‌র হক সম্পর্কিত হতে হবে। কোন অবস্থায়ই, আবারও বলছি- কোন অবস্থায়ই  “হক্কুল ইবাদ” বা বান্দার হক সম্পর্কিত হলে আল্লাহ্‌ তা ক্ষমা করতে পারবেন না, এটা আল্লাহ্‌র ঘোষণা। আমরা প্রায়ই এই ভুল করে থাকি যে রমজান বা অন্য সময়েও বেশুমার ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহ্‌র কাছে পানাহ চাই, রহমত নেয়ামত চাই। 

শুভংকরের ফাঁকি হচ্ছে আমরা  “হক্কুল ইবাদের” উপর তেমন গুরুত্ব দেই না। স্মর্তব্য যে, বান্দার হক নষ্ট করলে বান্দা হচ্ছে “মজলুম” আর আমি হচ্ছি “জালেম।” আল্লাহ্‌ বলেন, জুলুম হলে আল্লাহ্‌ ও মজলুমের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না অর্থাৎ আল্লাহ্‌ মজলুমের পক্ষে দাঁড়ায়ে যান। যেখানে আল্লাহ্‌ আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়ে যান সেখানে আল্লাহ্‌র যত ইবাদত করা হউক না কেন ক্ষমা কখনো আশা করা যায় না। 

ইয়েস, আল্লাহ্‌ বলেছেন, “ফাআলুল্লে মা ইউরিদ”- তাঁর যা ইচ্ছা তিনি তাই করেন, মাফ করে দিতে পারেন বেশুমার হক্কুল্লাহ নষ্ট করলেও। তিনি আরও বলেন, “ফা ইয়াগফেরু মাইয়াশাউ ও ইওআজ্জেবু মাইয়াশাউ”-তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন আবার যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। কথা হচ্ছে এই মাফ ও শাস্তি সবই “আল্লাহ্‌র হক” সম্পর্কিত। 

সুতরাং বান্দার হক নষ্ট করে  (সে অধিকার বঞ্চিত করেই হোক বা অসদাচরণের মাধ্যমেই হোক)  আল্লাহ্‌র কাছে কাকুতি মিনতি করে কোন লাভ নেই। 

এই কথাটা অনেক বেশী বেশী করে আমাদের সমাজে বলা দরকার, প্রচার হওয়া দরকার। আরও বেশী বেশী প্রচার দরকার যে হালাল রিজিক ভক্ষণের পরেই ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। বে-হালাল রিজিক খেয়ে সারা রাত নফত ইবাদত করে ঘুম আর শরীর নষ্ট ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। 

“তোমাদের মনের কথা তোমাদের রব জ্ঞাত, সৎকর্মী হলে তিনি তওবাকারীদের দোষ ক্ষমাকারী।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৫)

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়ার তুখোড় উন্নতির কল্যাণে ভোগের উপাচার আমাদের নজর থেকে সরে না। ”চারি দিকে চাহি নাহি হেরি তীর” ‘র মতো যে দিকেই তাকাই না কেন শুধু ভোগের সামগ্রী। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে আধ্যাত্মদর্শনে জারিত হয়ে নির্লোভ সাধারণ জীবন যাপনের কোশেশ করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই। ভোগের পথে যাওয়া যায় তবে পথের শেষে এসে এমন এক হতাশা গ্রাস করে যে সে জীবন্ত-জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে সব কিছু দান করতে চাইলেও তা সম্ভব না। 

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেনঃ ১) আমানতের খেয়ানত করা ২) কথায় কথায় মিথ্যা বলা ৩) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ৪) কারও সঙ্গে মতানৈক্য বা বিরোধ হলে তাকে গালাগাল করা। 

কোনো ব্যক্তির মধ্যে উপরোক্ত দোষ পাওয়া গেলে সে পুরোপুরি মোনাফেক ও তার কোনো একটি পাওয়া গেলেও তার মধ্যে মোনাফেকের স্বভাব আছে বলা যাবে। (বোখারি শরিফ)।

এই ধরনের পাপ থেকে মাহ্রুম থাকতে আমাদের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ শয়তান ইবলিসের কোন বিশ্রাম নেই। 

“খোদা এই গরীবের শোন শোন মোনাজাত।

…………………………………………

যবে) মস্‌জিদে যাই তোমারি টানে

(যেন) মন নাহি ধায় দুনিয়া পানে

আমি ঈদের চাঁদ দেখি যেন আস্‌লে দুখের আঁধার রাত।”-নজরুল

আত্মশুদ্ধি সংযমের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। মাগফিরাতের এ সময়ে আমাদের প্রয়োজন বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করা। 

মানুষের হক নষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করা।তাহলে আশা করা যেতে পারে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে মাগফেরাতের দশকের উছিলায় ক্ষমা করে দিবেন। 

আল্লাহ মাগফিরাত লাভের তওফিক এনায়েত করুন। আমিন।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *