রিয়া।
ইসলামে রিয়া অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। এটা একটা মারাত্মক মানসিক রোগ।
এক্ষেত্রে আল্লাহর ইবাদতের চেয়ে মানুষকে দেখানোর প্রবণতা থাকে বেশী। এর কারণ সমাজের চোখে একটা ‘পরহেজগার-বান্দার-ইমেজ’ তৈরীর চেষ্টা যাতে দুনিয়ার মানুষের কাছ থেকে একটু বেশী সন্মান-সমীহ-সম্পদ অর্জন করা যায়।

লোক দেখানো লেবাস ও ধর্মীয় কর্মকান্ড করবার সময় দৃষ্টি থাকে মানুষকে দেখানোর। ওয়াক্তিও নামাজ যেমন হয় প্রচার সর্বস্ব, তেমনি দেখা করতে হলে ঘড়ির সময় না বলে যোহর, আসর বা মাগরিব বাদে, তাহাজ্জুদ একান্ত গোপন ইবাদত হলেও তা প্রচার হয় নির্লজ্জ্ব ভাবে। মানুষের কাছে গ্রহণীয় হওয়ার, তাদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ঠ করার, তাদের নজর ও নজরানা পাওয়ার বাসনায় বিভোর থাকে। ড্রয়িং রুমের সোফা-পর্দার চাকচিক্য, পোশাক-আশাক-আসবাব-আব্রূতে-আচরণে আশরাফি ভাব আনা হয় কসরৎ করে। পার্থিব কোনো মানুষ বা বস্তূর প্রতি নির্ভরতা থাকলে তা হবে শির্কের কাজ।

রিয়াকারী হালাল হারামের পরোয়া করে না। এদের লোলুপ দৃষ্টি থাকে জাগতিক মোহ-মায়ার প্রতি। রিয়া করতে করতে সব কিছু শেষ করেছি আমরা। স্রষ্টাকে স্মরণ নাই, শোকরগুজারি নাই। ভন্ডামীর শেষ পর্যায়ে পৌঁছালে স্রষ্টা ব্রেকে পা দিলেন। করোনা ভাইরাস।থামো। যে প্রাণীদের আমরা গৃহহীন করেছিলাম আজ তারা তাদের গৃহে ফিরে যায়নি শুধু, লোকালয়েও নির্ভয়ে নির্বিকার ঘুরছে। আমরা চিড়িয়াখানার মতো ঘরে আবদ্ধ। আরো কি শিক্ষার দরকার আছে ?

রিয়াকারীর পোশাক যত উজ্জ্বল থাকে তার অন্তর থাকে তত কৃষ্ণ-কালো। জিহ্বা পরহেজগার হলেও তার অন্তর পাপিষ্ঠ। জিহ্বা আল্লাহর প্রশংসা করে কিন্ত অন্তর থাকে দুনিয়ার দিকে নিবদ্ধ। বাইরে একেশ্বরবাদী, ভিতরে বহুত্ববাদী।বাইরে মুসলমান, ভিতরে কুফরীতে ভরা। বাইরে সুফী সুফী ভাব আনলেও ভিতরটা নোংরা। ল্যাট্রিনের মতো: দরোজা সুন্দর কিন্ত ভিতরটা দুর্গন্ধময়।

এমন অন্তরই শয়তানের বসবাসের জন্য উত্তম। যে অন্তরে শয়তানের বসবাস সেখানে আল্লাহর ‘অহদানিয়াত’ আসবে কি করে? আগে বসতবাড়ীর ভিত তৈরী করতে হয়, ধীরে ধীরে দরজা জানালা। আগেই যদি শয়তানকে ‘জায়গীর’ রাখা হয় তাহলে বসত বরবাদ হতে আর দেরি কত ?

শুধু ইবাদত না, প্রত্যাহিক জীবনের অধিকাংশ কাজ হচ্ছে লোক-দেখানোর জন্য। অর্থাৎ সৃষ্টির দৃষ্টি আকর্ষণ করা, সৃষ্টিকে তুষ্ট রাখার এক হীন উদ্দেশ্যে, যেন একটু বেশী দুনিয়ার অংশ পাই।

এটা হচ্ছে একধরণের উঁচু স্তরের ভন্ডামী। নিজেকে ও স্রষ্টাকে ফাঁকি দেওয়া। কাকের মতো খড়ের গাদায় মাথা লুকালেও সবাই দেখতে পায় এই ছদ্ম-বেশ। সমাজের কাছে ইহকালে মাথা নিচু হয় আর “অহুয়াল লতিফুল খবির” সেই অন্তর্ভেদী স্রষ্টার কাছে একজন প্রতারক ছাড়া আর কোনো পরিচয়ই থাকে না। বরবাদ হয়ে যায় একটা জিন্দেগী।

মানুষের কাছে দরবেশী চেহারা ধরা না পড়লেও ইনসানে কামেলের চোখে তার এই হীন চেহারা ধরা পড়ে। উলঙ্গ হয়ে যায় তাঁর দৃষ্টির তীক্ষ্ন ফলায়। নফ্স ও খাহেশের দাস হয়ে ইবাদতখানায় বসে কোনো লাভ নেই।

এই দুর্দিন, এই মহামারী, এই গজব আমাদেরকে ঝাঁকুনি দিতে এসেছে, একটা শিক্ষা দিতে এসেছে। আমরা যারা বেঁচে থাকবো তারা যেন এই শিক্ষার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই। আমাদের লোক দেখানো খাসলত যেন দূর হয়ে যায় এই প্রার্থনা করি।

“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি, শুষ্ক করে দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজঝটিকাজাল যাক দূরে যাক।”

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *