"আত্মার পৃথিবী-ভ্রমণ"
 (গত বৎসর মে মাসে "মাসিক ভ্রমণ" ম্যাগাজিন-এ আমার এই লেখাটা প্রকাশিত হয়।সবার জানার জন্যে Sharpener  এর পেজ এ শেয়ার করছি।)                                             
                          

“একদা প্রভাতে যাত্রা,মস্তিষ্কের বিবরে অনল,
হৃদয়ে বিদ্বেষ, নাকি তিক্ত-কাম, কে করে যাচাই ?
তরঙ্গের ছন্দের পিছনে ছোটে হিল্লোল চঞ্চল ,
আমাদের অসীমেরে সুমুদ্রের সীমায় নাচাই। ” ভ্রমণ। শার্ল বোদলেয়ার। অনুবাদঃ বুদ্ধদেব বসু।

সাধারণ অর্থে ভ্রমণ বলতে বেড়ানোকে বুঝায়, কিন্ত ব্যাপক অর্থে ভ্রমণ এক বিস্ময়কর বিষয়। কক্সবাজার-বান্দরবন-শিমলা-মানালী-কাশ্মীর-গোয়া-বালী-প্যারিস-রোম-ইস্তাম্বুল-মায়ামী ইত্যাদিতো ভ্রমণের এক ক্ষুদ্র অংশ।

দৃষ্টিকে দিগন্তের ওপারে প্রসারিত করলে, শুন্যে মহাশুন্যে বিলীন করলে কোনো উত্তর মেলেনা। আহত চোখে নৈরাশ্য, দুঃখ হতাশায় জর্জরিত হয়ে মানুষকে হাহাকার করতে হয়। অদৃশ্য অদৃষ্ট মানুষকে স্থিত-প্রাজ্ঞ হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন হতে ইশারায় ডাকে।
কোন জোতির্ময়লোকে ‘রূহ’ বা ‘প্রাণ’ লুকিয়ে থাকে আর কিভাবেই তা মাতৃ গর্ভে আসে, দীর্ঘ নয় মাস মাতৃ গর্ভে থেকে “প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে ধরায় আসে” মানব সন্তান-তা বিস্ময় আর রোমাঞ্চে ভরপুর।

মাতৃ গর্ভে আশা, নানা পর্যায়ে বেড়ে ওঠার অপূর্ব সুন্দর নিমগ্ন ভ্রমণ, জীবনভর, জন্ম জন্মান্তর ধরে এক আশ্চর্য্য মনোদৈহিক ভ্রমণ অবিরাম চলতে থাকে।
প্রাণের স্ফরণের মুহূর্ত থেকে পরতে পরতে প্রলেপে প্রলেপে প্রাণ হয়ে ওঠে মঞ্জরিত। বাঙময় হওয়ার ব্যাকুলতায় বুক ভার হয়ে ওঠে সেই আদি প্রশ্নে: “কোথায় ছিলাম, কোথায় এলাম, কোথায় যাবো ?”

কোন সে বিরাটের ইচ্ছায় সুদূর অলখ লোকের থেকে দুস্তর পথে পৃথিবীতে আগমন। সে পরম সত্তা, সকল প্রত্যক্ষ জ্ঞানের অগোচর, সমূহ ধ্যান ধারণার অতীত। ফেলে আশা বেণুবন স্মৃতিভারাতুর করে,আবার ইহজগতের আনন্দযজ্ঞে যোগ দিতে পেরে বিহ্বল, আত্মহারা। শত শোভাময় সৃষ্টিজগৎ রয়েছে সম্মুখে আদিগন্ত ব্যাপ্ত, চোখ তুলে তাকাবার অপেক্ষায়। চঞ্চল মন সুদূর অতীতকে পাশকাটায়ে উচ্চারণ করে, “চরৈবেতি, চরৈবেতি” সামনে চলো, সামনে। ভ্রমণ করো।

পথের সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে ভ্রমণ করে অব্যক্তের টানে। সীমা পেরিয়ে অসীমের পানে উন্মূখ হয়ে নিত্যলীলাই হচ্ছে জীবনযাত্রা বা ভ্রমণ। অন্তরাত্মা পরিচিত গন্ডি ছেড়ে অপরিচিতের দিকে পা বাড়ায় এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের নেশায়। মানসচক্ষে স্মৃতি বিস্মৃতির কেন্দ্রে রক্তে দোলা দেয় ভ্রমণ।

অহোরাত্র সিসিফাসের মতো উদয়স্ত পরিশ্রম করেও খুঁজে পাওয়া যায় না সে অজানারে। অস্থির হয়ে, হাহাকার করে নিত্য ছুটে চলা, ” হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে। “

ভ্রমণকে আমরা স্থুল ভাবে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি : ১) আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে ভ্রমণ ২) আলম খালক বা সৃষ্টি জগতে ভ্রমণ ৩) শুভ-মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আলম খালক বা সৃষ্টি জগৎ থেকে ইয়াওমাল কেয়ামত বা বিচার দিনের দিকে ভ্রমণ।

১) আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে ভ্রমণ: (চলবে )

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *