সর্ব প্রথমে আল্লাহতায়ালা ‘সাজারাতুল ইয়াকিন’ নামে চার কান্ড বিশিষ্ঠ একটা বৃক্ষ সৃষ্টি করেন। এরপর নূরে মোহাম্মাদীকে ময়ূরের আকৃতিতে স্বেত-শুভ্র পাত্রে রেখে ওই বৃক্ষের উপরে স্থাপন করেন। ৭০,০০০ বৎসর পর্যন্ত নূরে মোহাম্মাদী আল্লাহর তাজবীহতে মগ্ন থাকেন। লজ্জা-রূপ আয়না ওই নূরে মোহাম্মদীর সামনে ধরলে নিজ রূপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ ময়ূর দেমাগী না হয়ে ‘এই সৌন্দর্য্য সৃষ্টিকারী না জানি কত সুন্দর’ এই ভেবে কৃতজ্ঞতায় অবনত মস্তকে আল্লাহকে ৫ বার সেজদা করেন।

উপরোক্ত ঘটনার পরম্পরায় ‘শব-এ-মেরাজ’ এর রাত্রে উম্মতে মোহাম্মদীর উপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়।

যদি তোমরা (আমার নেয়ামতের) কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তবে তোমাদেরকে আরো দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর-” সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং ৭.

অর্থাৎ আমার (আল্লাহর) নেয়ামত সমূহকে যদি অবাধ্যতায় ও অবৈধ কাজে ব্যায় না করো এবং নিজেদের কাজ কর্মকে আমার আদেশ নিষেধ অনুযায়ী করার চেষ্টা করো তবে আমি এসব নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেব। নেয়ামতের পরিমাণ বা নেয়ামতের স্থায়িত্ব যে কোনটা হতে পারে।

মাযহারীর হাদীছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেন,”যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তৌফিকপ্রাপ্ত হয়,যে কোনো সময় নেয়ামতের বরকত ও বৃদ্ধি থেকে সে বঞ্চিত হয় না।”

নেয়ামতের না-শোকরী অর্থ হচ্ছে আল্লাহর অবাধ্যতায় ও অবৈধ কাজে ব্যায় করা বা তাঁর ফরজ ও ওয়াজিব পালনে অবহেলা করা। অকৃতজ্ঞতার শাস্তি হিসেবে দুনিয়াতেও নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে অথবা এমন বিপদ আসতে পারে যেন নেয়ামত ভোগ করা সম্ভবপর না হয় এবং পরকালেও আযাবে গ্রেফতার হতে পারে।

“তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করো, যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সন্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করো-” সূরা আল-ইমরান, আয়াত নং ২৬

আজ ‘শব-এ-মেরাজের’ উপর আলোচনা করতে যেয়ে মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, সপ্ত আসমান, এর পর জিব্রাইল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘রফরফে’ সিদরাতুল মুনতাহা পৌঁছা এবং পরবর্তী যাবতীয় ঘটনাবলী কম বেশী সবার জানা বিষয়ে না যেয়ে আমি পবিত্র কোরানের দুইটা আয়াতের আলোচনা করেছি।

সালাত তথা নামাজের মূল তাৎপর্য্য হচ্ছে স্রষ্ঠার রহমতের প্রতি সর্বাবস্থায় শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, তাঁর দেওয়া ধন-সম্পদ তাঁরই বাতলানো পথে খরচ করা, তাঁর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী জিন্দেগী অতিবাহিত করা।

মেরাজের আলোচনা গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে মেরাজের হক আদায় হবে না। ওযুর পানি গড়িয়ে পড়া বা জিব্রাইল ফেরেশতার পাখার বর্ণনা বা বায়তুল মুকাদ্দাসে বাহন জন্তু বাঁধার গল্প শুনে মানুষ মেরাজের তাৎপর্য্য উপলব্ধি করতে পারবে না এবং নামাজে খুশূ-খুযু আনতে পারবে না।

“আল্লাযীনা হূম ফি সালাতেহেম খাশেউন”-সূরা মুমিনুন। যাঁরা তাঁদের সালাতে বিনয়-নম্র। এই বিনয়-নম্র অবস্থা অর্জন করতে হলে সালাতের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এই জন্যই সালাতের পিছনের মেরাজ এবং মেরাজের পিছনে ‘সাজারাতুল ইয়াকিন’-এ তাজবীহ রত ‘নূর-এ-মোহাম্মদী’র শোকর করে পাঁচ বার অবনত মস্তকে আল্লাহকে সেজদা করার গূঢ় অর্থ অনুধাবণ করা প্রয়োজন।

এই উপলব্ধিজাত সালাত হতে পারে মুমিনদের সফলকাম হওয়ার সালাত, অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখার সালাত, মুমিনের মেরাজ এবং ‘মেফতাহুল জান্নাত’ বা জান্নাতের চাবি।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *