“April is the cruellest month, breeding
Lilacs out of the dead land, mixing
Memory and desire, stirring
Dull roots with spring rain.” T S Eliot, The Waste Land.

আজ থেকে ৯৮ বৎসর আগে লন্ডন শহরে মনোবিকতার পরাজয়ের কদর্য্য চিত্র দেখে দার্শনিক কবি T S Eliot লিখে ফেললেন তার অমর কবিতা The Waste Land. শুরুর লাইনটা ছিল “April is the cruellest month….” প্রায় শত বৎসর আগে মূল্যবোধের পরাজয় দেখে আহত কবি এপ্রিল মাসকে নিষ্ঠূর মাস বলে সম্মোধন করে শুরু করেছিলেন তার অমর কাব্যে পতিত পৃথিবীর গাঁথা লিখতে। Death and Rebirth, The Burial of the Dead, The Game of Chess, The Fire Surmon, Death by Water, What the Thunder Said.

এই পঞ্চ-শরে পৃথিবীর নগ্ন-রূপের মালা গেথে সারা দুনিয়াকে নতুন করে ভাবার খোরাক জোগাড় করে দিলেন। Death, Burial, Game, Fire, Thunder, শব্দ গুলোই এক একটা মারণাস্ত্র। খরা-বন্যা-মৃত্যু-পুনর্জন্ম,জীর্ণ,খসে পড়া, অনুর্বর সভ্যতা, ইত্যাদি প্রতীকের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কংকালসার রূপের দিকে সবার নজর ফেরালেন। এর পর শত বৎসর পার হয়ে গিয়েছে। অধঃপতিত হতে হতে আমরা রসাতলে এসে ঠেকেছি।

আজ পহেলা এপ্রিল। করণাক্রান্ত প্রকম্পিত পৃথিবী। সমরস্ত্রকে ঘুম পড়ায়ে খালি দুই হাত ঈশ্বরের পানে তুলে কাঙালের মতো পরিত্রাণ মাগছে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ।

মায়াবতী পৃথিবীর রূপ-রস-সৌন্দর্য্য-সম্পদ সমস্ত কিছু লোলুপ-কামুকের মতো নিংড়ে নিংড়ে নিঃশেষ করেও ফিরে ফিরে নিংড়ানো শুরু হয়েছে । মানবতা-প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা-সহানুভূতি-সহমর্মিতা সব কিছু নিক্তির কাটায় মেপে কড়ি দিয়ে হাতবদল হয়ে, হয়ে উঠেছে উন্মাদ মানুষের ধনুর্বাণ পণ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী একটু বুক ভোরে নিঃস্বাস নিতে চেয়েছিলো। জার্মানীর কাইজার, রাশিয়ার জার্,পারস্যের সাফাভী, ভারতের মোগল সব শেষ। এক নতুন সমাজ ব্যবস্থার দিকে পা বাড়াচ্ছিল ধর্ষিতা পৃথিবী। এমন সময় Eliot লিখলেন The Waste Land. উন্নতি কিছু হয় নি। ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেয়া পৃথিবী বরং Great Depression ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দিকে এগুলো তুখোড় (??) নেতাদের ডাইনামিক নেতৃত্বে।

বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যাবতীয় অবদানকে খামখেয়ালি ভাবে ব্যবহার করে পৃথিবীটাকে জ্বলন্ত উনুনে পরিণত করা হয়েছে। শুধু রোবট আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স না , ক্লোনিং করে এক ধ্বংসের দিকে ধাবমান এই অসহায় গ্রহটি।

মূল্যবোধ না, GDP, প্রোডাক্টিভিটি, ফিনান্সিয়াল মাক্সিমাইজেশন, পার ক্যাপিটা ইনকাম এগুলো দিয়ে সুখ আর সাফল্যের বিচার শুরু হলো।

এরিস্টটল,প্লেটো এপিকিউরাস, হেরাক্লিটাসদের মতো দার্শনিক ও পরবর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামদের শিক্ষার জায়গায় আমেরিকায় গড়ে উঠলো প্রাইভেট বিশ্বাবিদ্যালয়।উৎপাদন আর বিক্রয়ের সূক্ষাতিসূক্ষ অঙ্ক শেখানো শুরু হলো। শিল্প বিপ্লবের উৎপাদিত পণ্য নানা লোভ-জাগানিয়া মোহনীয় প্রচার করে Profit Maximization করতে হবে। আরো গড়ে উঠলো Real Estate, Shopping Mall, Credit Card. ওমর খৈয়াম আমদানী হলেন। খাও-পান করো।

সাথে সাথে বাড়লো প্রেসার, হার্ট ডিজিজ,ক্যান্সার। সমান তালে উৎপাদিত হলো মেডিসিন। ঘুমের ঔষুদ হলো নিত্য রাতের সঙ্গী। রঙিন দুনিয়া দেখে বাকি দুনিয়া হামলে পড়লো। অর্থ-অস্ত্র-ক্ষমতা। দাড়িপাল্লা বেসামাল হয়ে পড়লো।

জীবনান্দ দাশ বেঁচে থাকলে মনে হয় “আবার আসিব ফিরে” আর লিখতেন না। সর্বময় ক্ষমতাধর আল্লাহ টুটি চেপে ধরলেন। ভয়ের সংবাদ নবীর মাধ্যমে আগেই দিয়েছিলেন। আমরা মানিনি। প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে কসুর করে না।
সেই খেলাই চলছে এখন। শেষ কোথায় কে জানে ? জানে একা ওই যে আসমানের অধীশ্বর।

“কুলিল্লা হুম্মা মালিকাল মূলক তু’তিল মূলক মান তা’সাউ, ও তানজিউল মূলক মান তা’সাউ”-সূরা আল ইমরান। সমগ্র বিশ্ব সংসারের মালিক সেই আল্লাহ। যাকে ইচ্ছা রাজত্ব-ক্ষমতা দান করেন আবার যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব-ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। এখন সেই অংকের সেই দৃশ্য দেখছি আমরা।

এক শত বৎসর পর T S Eliot পৃথিবীর এই পরিণতি দেখলে কি লিখতেন জানি না তবে উপমা-উৎপ্রেক্ষায় যে ক্ষয়ে যাওয়া পৃথিবীর ছবি তিনি এঁকেছিলেন তারই জীর্ণ রূপ আমরা দেখছি হয়তো।

Eliot উপনিষদের দর্শণ দ্বারা প্রগাঢ় ভাবে প্রভাবিত ছিলেন। হার্ভার্ডে তিনি সংস্কৃত শিখেছিলেন তাই কবিতা শেষ করেছিলেন উপনিষদীয় প্রার্থনা দিয়ে:

“Datta. Dayadhvam. Damyata.
Shantih shantih shantih.”

শেষ নাহি যে,শেষ কথা কে বলবে ?
আঘাত হয়ে দেখা দিলো,আগুন হয়ে জ্বলবে।
সাঙ্গ হলো মেঘের পালা, শুরু হলো বৃষ্টি ঢালা,
বরফ-জমা সারা হলে, নদী হয়ে গলবে।
ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে,
অন্ধকারের পেরিয়ে দুয়ার, যায় চলে আলোকে।
পুরাতনের হৃদয় টুটে, আপনি নতুন উঠবে ফুটে,
জীবন ফুল ফোটা হলে,মরণে ফল ফলবে। -রবীন্দ্রনাথ

এপ্রিলে করা Eliot-এর প্রার্থনার সাথে আমরাও কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি শুধু শান্তির। আর কিছু না।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *