হযরত লোকমানকে আল্লাহ্‌ ‘নবুয়ত’ ও ‘হেকমত’ এর মধ্যে যে কোন এক টিকে বেছে নিতে বল্লেন। হযরত লোকমান ‘হেকমত’ বেছে নিলেন। অন্য রেওয়াতে আছে তাঁকে ‘নবুয়ত’ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু তিনি আরজ করলেন, ”যদি এটার নির্দেশ আসে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্‌!অন্যথায় আমাকে ক্ষমা করুন, আমি এ দায়িত্ব নিতে পারবো না।“

হযরত কাতাদাহ (রা) থেকে বর্ণিত, ‘হিকমত’কে বেশী গ্রহণযোগ্য কেন মনে করেলন এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন যে নবুওয়াত একটা বিশেষ দায়িত্ব এবং তা যদি আমার ইচ্ছা ব্যাতিত প্রদান করা করা হতো তাহলে আল্লাহ্‌ তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করতেন যাতে আমি সফল হই। আর আমি যদি স্বেচ্ছায় নিতাম তাহলে সে দায়িত্ব আমার উপর বর্তাত।

হযরত দাউদ (আঃ)এর আবির্ভাবের আগে হযরত লোকমান ফতোয়া দিতেন। দাউদ (আঃ)এর নবুওতের পর হযরত লোকমান ঘোষণা করলেন যে এখন আর তাঁর ফতোয়া দেওয়ার প্রয়োজন নাই ।

একদিন হযরত লোকমান বক্তৃতা করছিলেন এমন সময় এক লোক জানতে চাইল,”আপনি আমার সাথে অমুক বনে ছাগল চরাতেন না?”

উত্তর হ্যাঁ শুনে লোকটি হযরত লোকমানকে এই মর্যাদা পাওয়ার মারেফাত জানতে চাইলেন।

উত্তরে হযরত লোকমান দুইটা কারণ উল্লেখ করেছিলেনঃ ১)সব সময় সত্য কথা বলা ২)অপ্রয়োজনীয় কথা বার্তা পরিত্যাগ করা।

অন্য এক রেওয়াতে বর্ণিত আছে যে তিনি নিচের এই কাজ গুলোর কথা বলেছিলেনঃ

১)নিজের দৃষ্টি নতমুখী রাখা ২)মুখ বন্দ করা (প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা) ৩)হালাল জীবিকাতে খুশী থাকা ৪)লজ্জাস্থানের হেফাজত করা ৫)সত্য কথায় অবিচল থাকা ৬)ওয়াদা পূর্ণ করা ৭) মেহমানের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা ৮) প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রাখা ৯) অপ্রয়োজনীয় কাজ ও কথা পরিত্যাগ করা ।

কারণ দুইটা বা নয়টা যাই হউক না কেন তাঁর অনুশীলন বা নিষ্ঠার সাথে অনুকরণ করলে যে একজন মানুষ পরিবার, সমাজ তথা জাতীয় পর্যায়ে অনুপম ও অনুকরণীয় হতে পারে তার উদাহরণ হযরত লোকমান।

যে মানুষটাকে স্বয়ং আল্লার তরফ থেকে নবুয়ত অথবা হেকমত যে কোন একটা নিজ ইচ্ছায় বেছে নিতে বলা হয়েছিলো সেই মানুষটা বেছে নিলেন হেকমত! জীবিকা হিসেবে নিলেন ছাগল চরানোর কাজ! কিন্তু নিজ কর্মনিষ্ঠা ও চারিত্রিক উৎকর্ষের কল্যানে তিনি হয়ে গেলেন জগত বিখ্যাত। এখানেও কর্ম নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের উন্নাসিকতার পুনর্বিবেচনা আবশ্যিক বলে আমার কাছে মনে হয়। এই কাজ করবো, ঐ কাজ করবো না, আর “এমনি করে যায় যদি দিন যাক না” বলে ভাটির দেশে ভেসে চলার পথে তোমাকে কেউ বাধা নাও দিতে পারে কিন্তু অধঃপতনের শেষ সিঁড়িতে যখন পৌছায়ে  যাবে তখন আর কাউকেই পাবে না উদ্ধারকারী হিসেবে।

একজন মানুষ কতটুকু আত্ম-সচেতন হলে নবুওতের মতো লোভনীয় পদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করতে পারেন! The 7 Habits of Highly Effective People-এর দ্বিতীয় পয়েন্ট “Begin with end in mind”এর সঠিক প্রয়োগ দেখতে পাই আমরা ।নিজে উপযাজক হয়ে পদ পেয়ে সেই পদ গ্রহণ করলে যে তার সফলতা আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে কারণ নবুওয়াত আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করে দিলে তার সফলতা আসবেই কিন্তু নিজে যেচে নিলে শেষ ফল ভালো নাও হতে পারে তাই তিনি Begin with end in mind-র মতো শেষের চিন্তা করে নবুয়ত নিলেন না ।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কর্মহীন থাকার চেয়ে যে কোন কর্ম পেলেই তাই দিয়ে কর্মজীবন শুরু করার তাওফিক দান করুন এবং প্রতিটা কাজ করার আগে সেই কাজের পরিণাম চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার হেকমত দান করুন। আমীন।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *