একজন পাঠক আমাকে লিখেছেন:
“আমার কিছু প্রশ্ন আছে, সাফল্যের মান আপনি কি মনে করেন? হিটলার , চার্চিল, রুজভেল্ট, স্টালিন, কিশিনজার প্রত্যেকই তাদের জীবনে সফল কিন্তু এর বিনিময়ে কত প্রাণ !!!!!!! পেশাগত জীবনে আপনি সফল কিন্তু সব সময় ন্যায্য কথা বলতে পেরেছেন কি???”

আজকের লেখা ঐ পাঠকের প্রশ্নোত্তর যা অন্যের কাজে লাগতেও পারে।
সাফল্য বা সফলতা এমন একটা অবস্থা যা সর্বৈব আপেক্ষিক এবং প্রতিটা ব্যাক্তির ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে আবির্ভুত হয়।
সফলতা একটা পরিমাপযোগ্য অবস্থান। সফলতার জন্য একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যা পরিমাপযোগ্য। SMART প্ল্যানিং এ যাকে measurable বা পরিমাপযোগ্য বলে। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত লক্ষ্যের আলোকে কতটুকু অর্জন হচ্ছে তা পরিমাপ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা তিলে তিলে অর্জন করতে হয়।
সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে একলব্যের মতো সাধনায় নিমগ্ন হতে হয়। গৌতম বুদ্ধের মতো উচ্চারণ করতে হয় যে শরীর অস্থি চর্মসার হয়ে গেলেও “নির্বাণ ” লাভ না করা পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হবো না। স্পেন বিজয়ী তারিকের মতো নৌকা ছিদ্র করে ডুবিয়ে দিয়ে বলতে হয়, হয় যুদ্ধ করে জয়লাভ করো না হয় মৃত্যুকে বরণ করো।

“হিটলার , চার্চিল, রুজভেল্ট, স্টালিন, কিশিনজার”- যাদের কথা সফল হিসেবে বলে আমাকে লেখা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাদের সাফল্যও ভিন্ন। মহাকাল বিচার করবে এরা সফল ছিলেন কি না।
সংজ্ঞায়িত করলে সাফল্যের অর্থ এরকম দাড়ায়:

“Being successful means the achievement of desired visions and planned goals. Furthermore, success can be a certain social status that describes a prosperous person that could also have gained fame for its favorable outcome.”

পেশাগত জীবনে আমার সাফল্যের পিছনে একটাই কারণ কাজ করেছে আর তা হলো “আমাকে আমার স্থির করা লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে” এই বোধে উদবুদ্ধ হয়ে, এই সংকল্পে স্থিত হয়ে উদয়-অস্ত সাধনায় নিমগ্ন থেকেছি। লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হই নি কখনো। যা কিছু ভালো করেছি তার বিনিময়ে প্রাপ্তি বর্তমান অবস্থা, আবার যা কিছু ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এইখানে পড়ে আছি। তবে হ্যা, কোনো আক্ষেপ বা আহাজারী নেই আমার। জীবন আমাকে অনেক দিয়েছে। এবার আমার ফেরত দেবার পালা।

সব সময় ন্যায্য কথা বলতে পারা কোনো কৃতিত্ব না। আমাদের “চতুর্পাশ” আমাদেরকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ করে চলছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে কথা-কাজ-আচরণ দিয়ে অতিক্রম করা।

কথা বলতে পারা যেমন একটা ভালো যোগ্যতা তেমনি চুপ করে থাকতে পারা তার চেয়ে অনেক বড়ো ও মহৎ যোগ্যতা।
কর্ম জীবনে আমাদের উপাচার মাত্র কয়েকটি: আমরা, প্রতিবেশ ,কর্ম আর কর্মফল। এর বাইরে ” না কিছু কহিল,চাহিয়া রহিল।”

৫ম শ্রেষ্ঠ রোমান সম্রাট Marcus Aurelius অনেক সুন্দর করে বলেছেন:

“Do not live as if you have ten thousand years left. Your fate hangs over you. While you are still living, while you still exist on this earth, strive to become a genuinely great person.”

হাজার বছরের হায়াৎ নিয়ে আমরা আসিনি। ক্ষুদ্র এই জীবনটা সংকীর্ণ চিন্তা আর কাজে নষ্ট করলে শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত সফলতা ধরা দেবে না।

“যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড় বদলে আঁধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে –
তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে।” -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *