বাড়ি থেকে উচ্চশিক্ষা ও পেশাজীবনেরর জন্য বের হওয়ার সময় বাবার কাছ থেকে কয়েকটি উপদেশ পেয়েছিলাম যা আলোকবর্তিকার মতো সারা জীবন আমাকে পথ দেখায়েছে।তাঁর একটা ছিলঃ

“Get mental preparation to lose some battles to win the War.”

অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে বিজয় লাভ করতে চাইলে মাঝে মধ্যে ছোট খাটো যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থেকো।

দ্বিতীয়টা ছিল হুদাইবিয়ায় বিজয় (যদিও সন্ধি শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিলো।)কুরাইশদের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রতিনিধি সুহাইল ইবন আমর আসলে সর্বসম্মত সন্ধি করা সম্ভব হয়।

আপাতদৃষ্টিতে এই সন্ধি মুসলমানদের বিপক্ষে মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুদূরপ্রসারী ফল মুসলমানদের পক্ষে গিয়েছিল। এ বৎসর মুসলমানরা উমরা না করে হুদাইবিয়া থেকে ফিরে যাবেন বা কোন মুসলমান মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলে তাকে ফেরত দিতে হবে কিন্তু কোন মুসলমান কাফের হয়ে ফিরে আসলে কুরাইশরা তাকে আশ্রয় দিতে পারবে জাতীয় আপাত অপমানজনক চুক্তি মেনে নিয়ে রসুলুল্লাহ (সঃ) চুক্তিতে সই করেন।

অনেকের মধ্যে হযরত উমর (রাঃ)এই অপমানজনক সন্ধি মেনে নিতে না পেরে নবিজীর সাথে যুক্তি তুলে ধরেন। নবীজী ও পরে হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত উমর (রাঃ) কে বুঝাতে সক্ষম হন।

চুক্তি সইয়ের সময় সুহাইল ইবন আমর “বিসমিল্লাহের রাহমানির রাহিম” বলে চুক্তি শুরু করতে রাজী হন নাই ।

অথচ, বিদায় হজ্জের দিনে পশু কুরবানির স্থানে সুহাইল ইবন আমর দাঁড়িয়ে একটা একটা করে পশু নবিজীর দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন আর নবী করীম (সঃ) নিজ হাতে কুরবানি করছেন। এর পর নাপিত এসে রসুলুল্লাহ (সঃ) ‘র মাথার চুল কামিয়ে দিলো। সুহাইল ইবন আমর চুলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে বরকতের জন্য নিজের চোখে লাগাচ্ছে।

হযরত আবু বকর (রাঃ) স্মৃতি রোমন্থন করে বলেছেন, ঐ দিন হযরত আবু বকর (রাঃ) ‘র মনে ভেসে উঠেছিল হুদাইবিয়ার চুক্তির দিনের কথা যখন এই সুহাইল ইবন আমর “বিসমিল্লাহের রাহমানির রাহিম” বলে চুক্তি শুরু করতে রাজী হন নাই!!!

এই চুক্তির মধ্যে বিরাট হেকমত লুকানো ছিল যা অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেন নাই।

বান্দা সবসময় দ্রুত সফলতা পেতে চায়। কিন্তু আল্লাহই ভালো জানেন কখন সফলতা বান্দার জন্য উপকারী অথবা আদৌ সফলতা মঙ্গলজনক কি না। আল্লাহ্‌ তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না। আল্লাহ্‌ একটা নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত সব কিছুতে ছাড় দিয়ে থাকেন। আল্লাহ্‌ ধৈর্যশীল।

বালক মনে বাবার উপদেশগুলো স্থায়ী আঁচড় কেটেছিল। মেনে চলেছি জীবনভর।

পেশাজীবনে কত যে ছোট ছোট পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে আমাকে!! তাৎক্ষণিক একটু কষ্ট হলেও ঐ উপদেশ মনে করে সবর করেছি।শেষ খেলায় আল্লাহ্‌ আমার কঠোর পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের উত্তম বিনিময় দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আমার নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো তোমরা অস্থির হইও না। নিজেকে তৈরি করো। যে কোন যায়গায় তুমি যদি সঠিক কাজ করো তাহলে শেষ হাসি তুমিই হাসবে।

Categories: Career Growth

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *