ধৈর্য।
সাধারণ সংজ্ঞায় ধৈর্য অর্থ অসমর্থ বা অপারগ হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা বা প্রতিরোধের চেষ্টা না করা।
এখানে সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে নির্বিকার থাকাকেই বুঝায়।
কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিতে ধৈর্য বা ‘সবর’ ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ্র বণ্টন করে দেওয়া নির্ধারিত ভাগ্যলিপি আনন্দচিত্তে মেনে নিয়ে নিজের সবটুকু দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করে যাওয়াকে ধৈর্য বুঝায়।
এই বান্দা ভালভাবেই জানে যে আল্লাহ্তায়ালা যে নিয়ামত, দৌলত ইজ্জৎ যা কিছু বণ্টন করে দিয়েছেন তা বদলাবার সাধ্য কারো নাই। ঈমান ও একিনের ধারক নেক বান্দা স্পষ্ট করে এটা জানে এবং মানে। তাই কোন রকম ওজর আপত্তি না করে, বাহানা না করে, অনুযোগ অভিযোগ না করে প্রশান্ত চিত্তে, নির্দ্বিধায় তা মেনে নেয় এবং স্থির থাকে। এই অবস্থাকে ধৈর্য বলে।
বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করার নাম ধৈর্য না। ধৈর্যের সাথে বাধ্য হওয়া যুক্ত হলে তা দুর্বল ঈমানের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য হয়। ঈমানদার হওয়ার দাবি করলে নফসের অপূর্ণ দাবীকে উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহ্তায়ালার নির্ধারিত ভাগ্যলিপিতে রাজী খুশী থেকে আমল ও মোয়ামেলা মোশাহেদা উত্তমরুপে করে যেতে হবে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে, সমাজে ধৈর্যশীল মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। ঈমান, আমলের সাথে সাথে অনেকের মধ্যে অধৈর্যও দেখতে পাওয়া যায়। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধার্মিক, অ-ধার্মিক নির্বিশেষে অধিকাংশের মধ্যেই এক চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
পড়তে বসেই প্রথম হতে চাওয়া, ব্যবসা করতে যেয়েই কোটিপতি হতে চাওয়া, চাকরী করতে যেয়েই বড় সাহেব হতে চাওয়া, এরকম চাওয়ার কোন কুল কিনারা নাই। মানুষ মরতে রাজী তবুও ধৈর্য ধরতে রাজী না।
“It is easier to find men who will volunteer to die, than to find those who are willing to endure pain with patience”-Julius Caesar
আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরানে বলেন, ”ইয়া ইয়ুহাল্লাজিনা আমানুস্তায়িনু বেস সবরে অসসালাত।“ অর্থাৎ, হে ঈমানদারগন,তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করো। এখানে শব্দের স্থানিক প্রয়োগ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমে “বেস সবরে” পরে “অসসালাত” অর্থাৎ প্রথমে সবর বা ধৈর্য ও পরে সালাতের কথা বলে হয়েছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ এমন দাঁড়ায় যে, সবর বা ধৈর্য বা শান্ত শিষ্ট ভাবে নামায আদায় হলে সেটা সত্যিকারের নামায হবে আর সবর বা ধৈর্য না হলে সে সালাত উত্তম সালাত হবে না, বা কবুলের বা গ্রহণের উপযুক্ত সালাত হবে না।
“ধৈর্য মানো ওগো ধৈর্য মানো,
বর মাল্য গলে তব হয়নি ম্লান
আজো হয় নি ম্লান
ফুলগন্ধনিবেদন বেদনসুন্দর
মালতি তব চরণে প্রণতা
কেন পান্থ হে চঞ্চলতা।“ রবীন্দ্রনাথ
0 Comments