আমাদের কর্পোরেট, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় সহ নানা ক্ষেত্রে পিছনে পড়ার অন্যতম কারণ প্রকট সঠিক নেতৃত্ত্বের অভাব। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান চমৎকার ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানত ভালো লিডারশীপের গুণে আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ভালো নেতৃত্ত্বের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা ‘প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা’ অনুযায়ী উন্নতিতে “Transformational Leader” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। লিডারশীপের নানা স্টাইলের মধ্যে “Transformational Leader” অন্যতম।
এ ছাড়াও আরও একটা স্টাইল অফ লিডারশীপ আছে তা হচ্ছে “Servant Leader”। এই “Servant Leader” অবিশ্বাস্য উন্নতি নিশ্চিত করতে পারেন। ১৯৭০ সালে রবার্ট গ্রিনলিফ The Servant as Leader প্রবন্ধে “Servant Leader” শব্দ যুগল ব্যবহার করেন।
অনেক বেশী মানবিক হওয়ার কারণে “Servant Leadership” ইদানিং খুব বেশী পরিচিত হয়ে উঠেছে ও প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু গুমোরটা হচ্ছে অনেকে নিজেকে “Servant Leader” হিসেবে ঘোষণা করলেও বাস্তবে দেখা যায় তিনি ওই উপাধির উপযুক্ত নন। প্রশ্ন দেখা দেয়, একজন “Servant Leader” কি না তা কিভাবে চেনা যাবে?
৫টা বিষয় কষ্টিপাথরের মতো যাচাই করতে সাহায্য করবে ভণিতা বা মুখোশের পিছনের মানুষটা একজন “Servant Leader” কি না। আপনি যদি নিজের লিডারশীপ স্টাইল যাচাই করতে চান তাহলে নীচের ৫টি প্যারামিটারের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিন।
১। নৈতিক ভালবাসা: যদি আপনার টীম মেম্বারের প্রতি বা আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রতি আপনার ‘আন্তরিক যত্ন’ থাকে তবে তাকে নৈতিক ভালবাসা বলা যায়। আপনি কি অন্তর থেকে তাদের দুঃখ/যন্ত্রণা/ব্যাথা/ কষ্ট অনুভব করেন? আপনার নিজের আনন্দের মতো তাদের আনন্দ কি আপনি আন্তরিকতার সাথে তাদের সাথে উদযাপন করেন? আপনার বন্ধুকে যেভাবে ভালবাসেন সেভাবে কি আপনি আপনার টীম মেম্বারদেরকে মন থেকে ভালবাসেন? মূল কথা হচ্ছে “Servant Leader” তাঁর দলের লোকদেরকে মনের গভীর থেকে বোঝেন ও ভালবাসেন।
২। বিনয়: বিনয়ী হওয়া মানে কিন্তু আত্মসন্মান বিলায়ে পাপোষ হওয়া না। তিনি এমন একজন যিনি নিজের পদ-পদবীর আভিজাত্য ঠিক রাখেন এবং তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান না। বিনয়ী লিডার সহকর্মীদের মতামত শোনেন এবং অন্যের সিদ্ধান্ত ভালো হলে নিজের সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে তাদেরটা গ্রহণ করেন ও তা এক্সিকিউট করতে আন্তরিভাবে চেষ্টা করেন।
যখন প্রতিষ্ঠান সফল হয় তখন তা শুধুমাত্র লিডারের কেরামতি না-সফলতার ভাগীদার টীমের অন্যদেরকেও দিতে হবে।আত্মবিশ্বাস ও আত্মঅহমিকার মধ্যে অনেক তফাৎ। বিনয় একমাত্র পার্থক্যকারি।
৩।পরার্থপরতাঃ “Servant Leader” নেনেওয়ালা না, দেনেওয়ালা। তারা নিজের প্রয়জনের চেয়ে সহকর্মীর প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বেশী দিয়ে থাকেন। একটা প্রবাদ আছে সামরিক বাহিনীতে,”লিডার সবার শেষে খাবার খায়।“ “Servant Leader” যেখানে কাজ করেন তারা যেমন টীম মেম্বারদের অগ্রাধিকার দেন, তেমনি তারা টীম মেম্বারদের প্রয়োজনকেও অগ্রাধিকার দেন।
৪।ভিশন: “Servant Leader”-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে এবং তিনি জানেন প্রতিষ্ঠান কোন মুখী এগুচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একই দিকে পরিচালিত করতে সক্ষম। তারা ভিশনকে শক্তিশালী ও উদ্দীপক করে, আনন্দজনক, উৎসবমুখর করে উপাস্থাপন করতে পারেন যাতে অংশগ্রহণ করতে সব টীম মেম্বাররা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এভাবেই তিনি সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একই গন্তব্যে পৌঁছেন।
৫। আস্থা: প্রতিষ্ঠানের সবাই তাদের লিডারকে গভীরভাবে অন্তর থেকে বিশ্বাস করে। “Servant Leader”’রা নীতি নৈতিকতার দিক থেকে অসম্ভব শক্তিশালী। পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য তারা কখনোই নৈতিকতার মানদণ্ডের সাথে আপোষ করেন না। যখন সারভেনট লিডার তাঁর লোকদেরকে কোন কিছু বলেন সেই কথাগুলো লিখিত প্রতিশ্রুতির মতো হয়ে দেখা দেয়।
আপনার টীম যদি আপনাকে সারভেনট লিডার হিসেবে যাচাই করে বা মাপে তা আপনি কিভাবে পরিমাপ করবেন? সারভেনট লিডার বিরাট একটা Concept, এটা ধন্বন্তরি। তবে এটা সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে না।
“Servant Leader” হিসেবে এই পঞ্চ স্থম্ভের উপর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অটল থাকা অনেক কঠিন। তবে যারা আপনারা এই এলেম রপ্ত করতে পারবেন ও এর উপর আমল করতে পারবেন, আমি নিশ্চিত, যাত্রা পথে আপনি অনেক টীম মেম্বার পাবেন আপনার সাথে যারা দুই হাত খুলে খেলবে আপনার জন্যে এবং পেশাজীবনের পথে পথে পরতে পরতে আপনি সাফল্যের মাল্যভূষিত হবেন।
আমাদের দেশের টীম মেম্বাররা একটু ভালো লিডারশীপের কাঙাল। এটা কিতাবি কথা না। আমার ৩৩ বৎসরের কর্ম জীবনে ‘এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ ডিরেকটর’ এই পথ পরিক্রমার নানা চড়াই উৎরাইয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে বলা এ কথা গুলো।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *