“আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে,

ভয় করো না সুখে থাকো

বেশিক্ষণ থাকবো নাকো

এসেছি দন্ড দুয়ের তরে। “

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রায় দুই মাস পরে Sharpener এর পাতায় বসেছি আর তখনই রবীন্দ্রসংগীতটি মনে উঁকি দিলো।

আগেই বলেছি তরুণ পেশাজীবী, উদ্যোক্তা এবং স্বপ্নবাজ ছাত্রদের কাছে আমার তিন দশকের অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে চেয়েছি কারণ এখন আমার ফেরৎ দেবার (giving back )পালা। সমাজ-রাষ্ট্র আমাকে অনেক দিয়েছে। এবার আমার দেবার পালা। বই বা গুগল বা YouTube এ এই অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে না। মাঝখানে আমার লেখা কপি হতে লাগলো। লেখার বিরতি এলো। আবার শুভাখাঙ্খীর পরামর্শে লেখা শুরু। ২৭শে মে শেষ লিখেছিলাম।

এর পরে লিখেছিলাম, তবে রমজান সমাগত বিধায় কোরানের প্রথম নাজিলকৃত শব্দ “ইকরা ” আদেশমূলক বাক্য যার অর্থ “পড়ো ” বা জ্ঞান অর্জন করো, এর উপর লিখেছিলাম । এর পরে লিখেছিলাম হালাল রুযী উপার্জনের উপর। কারণ ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে “হালাল রুযী। ” বে-হালাল রূযীর দ্বারা যোগানো শক্তিবলে রুকূ-সিজ্দা-মুনাজাত করলে নাজাত যে হবে না তা আল্লাহ আগেই ঘোষণা করেছেন। যদিও আমাদের দেশের কালচার মনের মাধুরী মিশায়ে নির্দ্বিধায় নির্বিকারে বেহায়ার মতো “বে-হালাল” উপার্জন করে মসজিদে “পরে এসে” মুসল্লিদের টপকে সামনের সারিতে বসে লম্বা নামাজ আর নামাজান্তে দীর্ঘতম মুনাজাত করা। “বে-হালাল” উপার্জনের জাকাত, দান-খয়রাত করা।

“বে-হালাল” উপার্জন করে ওমরাহ, হজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইবাদতকারীদের ত্রূটির চেয়ে যারা ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, ধর্মীয় বাণী প্রচার করেন তাদের ত্রূটিই বেশি বলে প্রতিভাত হয়। ধর্মীয় জ্ঞানে না-বালক ইবাদতকারী অর্থনৈতিক লেনদেনের মতো যদি মনে করেন যে “কৃত পাপ, উপাসনার পুণ্যের বিনিময়ে স্খালন হবে ” এবং “বে-হালাল” উপার্জন জারী রাখেন তাহলে দুর্নীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি কল্পনা করেছি ?

কোরানের আদেশ-নিষেধ এতো বিশাল যে একবারে তা রপ্ত করা দুরূহ। দুর্নীতির ভারে বিষাক্ত এমন সামাজিক- জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে যদি সমস্ত মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সর্বত্র যদি “বে-হালাল” উপার্জন থেকে দূরে থাকার কথা প্রচার করা যায়, “বে-হালাল” উপার্জনের বিষাক্ত প্রভাব নিজের জীবনে, সন্তানের জীবনে, পারিবারিক জীবনে তথা ইহলৌকিক জীবনে কিভাবে অক্টোপাসের মতো, ক্যান্সারের মতো জীবনকে অভিশপ্ত করে তোলে, পারলৌকিক জীবনে এর প্রভাব যে কত ভয়ঙ্কর হবে তা যদি ক্রমাগত প্রচার করা যায় জাতীয় সংগীতের মতো এবং দুর্নীতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা যায় তাহলে আশাকরা যায় ধীরে ধীরে দুর্নীতির পরিমাণ কমে আসবে, দুর্নীতি আর ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। দুর্নীতি আর দৃষ্টিগ্রাহ্য ইবাদত সাধারণ মানুষকে বিহ্বল করে তুলছে।

এর পরে লিখেছিলাম “হক” নিয়ে। “আল্লাহর হক” আর “বান্দার হক”। “বান্দার হক” নষ্ট করে যতই ইবাদত করা হউক না কেন, বান্দা ক্ষমা না করলে খোদ আল্লাহ ও ক্ষমা করতে পারবেন না বলে দিয়েছেন। তার পর ও আমরা অন্যের হক নষ্ট করে চলেছি নির্লজ্জের মতো !!

শেষ লেখা ছিল “আত্মার পৃথিবী ভ্রমণ ” দীর্ঘ এ লেখায় আমি লিখেছি “রুহের জগৎ আমরা থেকে এসেছি-সৃষ্টি জগতে থাকবো সামান্য কিছু কাল- তার পর মৃত্যুর ভিতর দিয়ে “আলমে বরযাখ” হয়ে স্রষ্টার বিচারালয়ে হাজির হতে হবে।

তাহলে কেন এই উটপাখির মতো চোখ বুজে জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে থাকা ? কেন “বে-হালাল” উপার্জনের পিছনে ছুটে জীবনটাকে বরবাদ করা ? কেন “বে-হালাল” খাবার খেয়ে “দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী ” দীর্ঘ উপাসনা করা যা কবুল হওয়া সন্দেহযুক্ত ? কেন অন্যের হক নষ্ট করে নিজেকে Smart ভাবা যেখানে ওই বঞ্চিত মানুষটা ছাড়া কারো বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব না ?

কেন এই সাধারণ জ্ঞানের কথা দেশের অসাধারণ মানুষেরা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে, অবিরল ধারার মতো বলছি না ? সত্যিই কি আমরা বুদ্ধিমান ??

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *