বাবা সংস্কৃত শেখাতে যেয়ে একটা শ্লোক শিখায়েছিলেন যা আমার সারা জীবনে নানা কাজে লেগেছে। তা হচ্ছেঃ

“ উদযোগীনং পুরুষ সিংহ উপইতে লক্ষ্মী।“ ( চর্চার অভাবে সংস্কৃত বানান ঠিক  করতে পারি নাই)

অর্থাৎ, উদ্যোগী পুরুষই লক্ষ্মী বা সম্পদ প্রাচুর্যয়ের অধিকারী হয়।

আমরা উদ্যোগী হয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে নিজের বৈষয়িক জীবনের সচ্ছলতা আনতে অনেক সময়য়ই অলসতা করি। জ্ঞান,শ্রম, নিষ্ঠা, সততার সাথে কাজ করে নিজেকে উন্নত জীবনের সোপানে নিতে কার্পণ্য করি।

এর মুল্য শুধু নিজেকেই দিতে হয় না, বাবা,মা, ভাই বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবাইকেই এর মাশুল দিতে হয়।

আমাদের পরিবার ও সামাজিক গঠন অনুযায়ী এখনও একটা ছেলে শিক্ষিত হলে তাকে ঘিরে পরিজনেরা স্বপ্ন দেখে। দেখে তাদের জীবনের সচ্ছলতা, সামাজিক মর্যাদা, অন্য সদস্যদের একটা গতি হওয়ার উপায় আরও কত কি।

কিন্তু আমরা নিজেদেরকে না গড়ে তুলে, নিজের অবস্থনের উন্নত পরিবর্তন না করে শুধু নিজেদের জীবনকে দুর্বিষহ করছি না। পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবনের সম্ভাবনাকে অকালে গলা টিপে মারছি।

নিজের ভবিষ্যৎ, ভাগ্য আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয় না, নিজেই গড়তে হয়। Peter Drucker সুন্দর করে বলেছেনঃ

“The best way to predict the future is to create it.”

বৎসরের একটা নিদিষ্ট সময়ে, বিশেষ করে বর্ষায়, মরিচের লাগামহীন দামের সাথে আমাদের পরিচয় অনেকদিন ধরে। এর পর যোগ হোল পিঁয়াজ। পিঁয়াজকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তার সাথে যোগ দিল আলু।

মরিচের মতো একটা পণ্যের সামান্য মুল্য বৃদ্ধি কি করে একটা অপ্রতিরোধ্য সম্রাজ্যের সূচনা করলো তাই একটু পিছনে ফিরে দেখে আসি ।

ইতিহাসের জাঁকজমকপূর্ণ  পথ পালটে দেওয়া অর্জনগুলোর শুরু নেহায়েত সাধারণ কোন সূচনা থেকে।

সামান্য ৫টা পয়সা’র (৫ সিলিং) জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো।

ব্রিটিশ সরকার কৃতক ক্ষমতাপ্রাপ্ত মশলা বাজার নিয়ন্ত্রক ওলন্দাজ কোম্পানি মরিচের দাম প্রতি পাউণ্ডে ৫ সিলিং বাড়ালে ঘটনার সুত্রপাত হয়।

আমরা ৩০ টাকার পিঁয়াজ ২০০ টাকায় কিনে খেয়েও অনর্থক গল্প, অনুযোগ ছাড়া কোন বিকল্প চিন্তা করতে পারি নাই! 

এই মুল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে না পেরে ব্রিটেনের কিছু মানুষ উদ্যোগী হয়ে এই সমস্যার সমাধানের পথে পা বাড়ায়। সে পদক্ষেপ ছিল ভয়ঙ্কর, জীবন বাজী ধরার সমতুল্য। পরিণামে তারা ইতিহাস সৃষ্টিকারী উদ্যোগতা হয়ে অমর হয়ে রইলেন।

ডাচ কোম্পানির অপ্রত্যাশিত এই আচরণে ক্ষুব্ধ লন্ডনের ২৪ জন ব্যাবসায়ি ১৫৯৯ সালের ২৪শে সেপ্তেম্বার লিডেন হল স্ট্রীটের এক জরাজীর্ণ বিল্ডিঙে সমবেত হয়। একটা ট্রেডিঙ ফার্ম করতে ১২৫ জন মিলে ৭২,০০০ পাউন্দের একটা মুল্ধন সংগ্রহ করে।

মুনাফার লোভে প্রতিষ্ঠিত “মরিচ ব্যাবসা” শেষ পর্যন্ত সম্রাজ্যবাদের যুগ শুরু করে। পত্তন হয় ব্রিটিশ বেনিয়া রাজের।

১৫৯৯ সালের ৩১শে  ডিসেম্বার রাণী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে ‘উত্তমাশা অন্তরীপ’ বাদে পৃথিবীর সমস্ত দেশে ১৫ বৎসরের জন্য একচাটিয়া ব্যাবসা করার অনুমতিপত্রে সাক্ষর করেন।

এর ৮ মাস পরে,৫০০ টন ক্ষমতার জাহাজ ‘হেক্টর’ বোম্বের উত্তরে, মহাত্মা গান্ধীর জন্ম-জেলা গুজরাটের ছোট্ট সুরাট বন্দরে নোঙ্গর করে।    

২৪শে আগস্ট, ১৬০০, ইংরেজরা ভারতের মাটিতে পা রাখে।নেহায়েত ভদ্র ব্যবসায়ীর বেশে তারা আসে। জাহাজের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিন্সকে একজন আবিষ্কারকের চেয়ে জলদস্যু হিসেবে মানাতো ভাল।

হকিন্স উপকুল থেকে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে ‘কবুতরের ডিমের’ মতো সাইজের পদ্মরাগমণির আশায়। অফুরন্ত মরিচ, আদা, নীল, দারুচিনি, চিনি,সিল্ক, মসলিন এবং আরও অনেক পণ্যের প্রত্যাশায় । দেশের আরও অভ্যান্তরে প্রবেশ করে ঐরাবতের অণ্ডকোষ থেকে পাওয়া সঞ্জীবনী সুধার আশায় যা হকিন্সকে দেবে অনন্ত যৌবন । (চলবে)

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *