পেশাজীবন সহ জীবনের সর্বত্রই বিশ্বাস, ওয়াদা রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম । এটা না থাকলে পলে অনুপলে পস্তাতে হয়।

হুজাইফা (রা) বদরের যুদ্ধ ছাড়া সব জ্বেহাদেই অংশ গ্রহণ করেছিলেন।তাঁর বাবা হুজাইল সহ বদরের উদ্দেশে যাত্রা করলে পথে কুরাইশ বংশের অবিশ্বাসীদের তাঁদের সাথে দেখা হয় ।

তোমরা যুদ্ধে যাচ্ছ ? এই প্রশ্ন করলে তাৎক্ষনিক ভাবে হুজাইফা ‘না’ করলেন।
নবীজির কাছে যেয়ে এই কথা বল্লে, তিনি বল্লেন,”তোমরা মদিনায় ফিরে যাও ।“তোমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে না । যেহেতু তোমরা তাদেরকে বলেছ যে যুদ্ধে যাচ্ছ না, তাই মিথ্যা না বলে, ওয়াদাভঙ্গ না করে ফিরে যাও। আমরা এদিক দেখব। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব ।“

মুসলমানদের ৩১৩ জন সৈন্য, অপরপক্ষের ১০০০ এর উপর। এই অসম যুদ্ধে মুসলমানরা জয় লাভ করে।

ইসলামের প্রথম যুদ্ধ এবং খুব অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শত্রুর মুকাবেলা করার সময়ও নবীজি হুজাইফাকে মিথ্যা প্রমাণিত হতে দেন নাই। যদিও ইসলামী শরীয়তে যে তিন জায়গায় মিথ্যা বলার অনুমতি আছে তার একটা ছিল যুদ্ধের মাঠ ।

মিথ্যা বোলো না। ওয়াদা ভঙ্গ করো না। এমন ওয়াদা করো না যা তুমি রাখতে পারবে না। আর যদি করেই ফেল তাহলে যথাসাধ্য চেষ্টা করো ওয়াদা রাখতে।

সততার কোন শতকরা হিসাব নাই। কেউ ৯৯% সৎ মানে ১০০% অসৎ!একটা প্রবাদ আছে,”Why incur high cost of Low Trust”-অল্প বিশ্বাসের বিনিময়ে কেন অধিক ক্ষতি ঘাড়ে টেনে আনো? । যদি কারো বিশ্বাস অর্জন করতে না পার তাহলে মনে রেখো সেই লোকটির দ্বারা তোমার বা তোমার দ্বারা তার উপকার বা সাহায্য খুব কমই হবে। উপায় একটাই, হয় বিশ্বাস ফিরায়ে আনা অথবা সেই স্থান ত্যাগ করা।

অবলীলায় আমরা মিথ্যা বলি, ওয়াদা করি কিন্তু এর করুণ পরিণাম হিসাব করি না।
তুমি কাউকে ওয়াদা করলে। সেই মানুষটা তোমার ওয়াদা অনুযায়ী অপেক্ষা করলো কিন্তু তুমি বেমালুম ভুলে গেলে! একদিন, দুইদিন কিন্তু তৃতীয় দিন ওই লোকটা আর তোমার কথা বিশ্বাস করতে চাইবে না। সম্পর্কটার স্থায়িত্ব নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেবে।

নজরুলের একটা গানের অংশ এরকম,

“ঘুমায়েছ সুখে তুমি, সে কেঁদেছে জাগিয়া,

তুমি জাগিলে যে গো যবে, সে ঘুমায়ও ওপারে ।

এই আঁখি জল মোছ প্রিয়া, ভোল ভোল আমারে।“

যখন সম্বিৎ ফিরবে তখন আর করার কিছুই থাকবে না । তুমি জাগলেও অন্য পক্ষকে আর খুঁজে পাবে না।

জীবন চলার পথে অনেকের সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সাহায্য সবার দরকার। সেই জায়গাটাকে নষ্ট করতে নেই। তাই, পিছনের সেতুগুলো ভেঙ্গে সামনে অগ্রসর হইয়ো না। পিছনে ফিরতে হলে আর ফেরার উপায় থাকবে না।

আমার প্রিয় একটা উর্দু শের দিয়ে শেষ করি,

“গুস্তাখি ম্যায় করেঙ্গে স্রিফ একবার,জব সব পায়দল চলেঙ্গে,ম্যায় কান্ধে পর সওয়ার।“

অপরাধ জীবনে একবারই করবো, যখন সবাই পায়ে হেটে চলবে (আমার লাশ ঘাড়ে নিয়ে), আর আমি সবার কাঁধে চড়ে চলবো । এটাই হবে আমার জীবনে করা একমাত্র গুস্তাখি বা অপরাধ।

Categories: Uncategorized

1 Comment

Mehedi Hasan · March 22, 2022 at 7:05 am

Thank you for recommending me to read this article.

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *