কর্পোরেট, উদ্যোক্তা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতির শীর্ষে ওঠার পরীক্ষিত সূত্রাবলি - রোড টু বিকামিং সিইও
গ্রামের, শহরের পিতা মাতা কষ্ট করে হলেও সন্তানকে শিক্ষিত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা চেষ্টা করছেন শুধু একটু সুখের মুখ দেখবে বলে। আজো গ্রামের অক্ষর জ্ঞান বঞ্চিত পিতা মাতা, এমনকি শহরের স্বল্প শিক্ষিত পিতা-মাতা স্বপ্ন দেখেন যে সন্তানকে শিক্ষিত করতে পারলে সন্তান একদিন সংসারের হাল ধরবে। ইতোমধ্যে সমাজ-সংসারে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে কিন্তু ওই কাঙাল পিতা মাতা তা জানে না। তারা জানেন, সন্তান লেখা পড়া শিখছে। এর পর বড় চাকরি পাবে। আমাদের দুঃখের দিনের অবসান হবে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। অর্জিত জ্ঞানের সাথে চাহিদার সামঞ্জস্য হচ্ছে না। কর্পোরেটে টাকা নিয়ে বসে আছে প্রয়োজনীয় মানুষ পাচ্ছে না অন্য দিকে শত শত ছেলে মেয়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে বেকার হয়ে বসে আছে তারা চাকরি পাচ্ছে না। চাকরিদাতা বিদেশি কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছেন। মাঝখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অসহায় স্বপ্ন ভাঙা পিতা-মাতা-ভাই-বোন আর যাকে ঘিরে স্বপ্ন সেই বেকার ছেলে বা মেয়েটা । আমাদের এক কোটি মানুষ বিদেশ থেকে যা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে তার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশি কর্মচারী-কর্মকর্তার বেতন-ভাতা শোধ করতে। আমাদের দেশের কর্পোরেটে কর্মরত উদ্যোমী যুবা, চাকরি প্রত্যাশী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্র ছাত্রী ছেলে মেয়েদের জীবনে সাফল্য অর্জনের পথ প্রদর্শক হিসেবে এই বই থেকে ধারণা নিয়ে আমাদের দেশের সমাজ-সংস্কৃতির আলোকে পরামর্শগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি কোনো ছেলে মেয়ে এই বইয়ের উপদেশগুলো আত্মস্থ করে ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে তাহলে তার কখনোই বেকার থাকার বা এক জায়গায় ঘুরপাক খাওয়ার কথা না । যে যে গুণাবলি থাকলে একজন মানুষ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে তার বিশদ বর্ণনা আছে এই বইতে।
মানবিক বিভাগের ছাত্র হয়ে মাল্টিন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফাইজারে চাকরি নেওয়া ছিল স্বপ্নাতীত। সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসেছি আর সকালে জানালা দিয়ে সূর্য্য উঠা দেখেছি।" কঠিন বিষয় ও টার্মিনোলোজি রপ্ত করে পরদিন ট্রেনিংএ উপস্থিত হতে হয়েছে। প্রতিদিন ছিল ট্রেনিং থেকে বাদ পড়ার উৎকণ্ঠা। ধনুক ভাঙা পণ করে সাধনায় বসেছিলাম বুদ্ধদেবীয় সংকল্পে। আমার সোনার হরিণ চাই। চাকরি জীবনে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট রেখে ক্যারিয়ার-এ ন্যাশনাল সেলস মার্কেটিং টিমের দায়িত্ব নেওয়া ছিল প্রথম চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা। নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে রানার মোটোর্স্ এ যোগদান। "How come a pharma guy in Automobiles Sales Marketing ?" আমার জয়েনিং-এর পর ফ্যাক্টরী ভিসিট-এ দিল্লী গেলে ভলভো-আইশার-এর ইঞ্জিনিয়ারের মন্তব্ব্যে আবার জিদে আগুণ লাগে চ্যালেঞ্জের দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করার। রানার মোটরসের সাফল্যের ৭ বৎসর পর ডিরেক্টর মার্কেটিং এন্ড সেলস-এর পদ থেকে অবসর নিয়ে আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ-এর এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর, মার্কেটিং এন্ড সেলস হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ছিল আমার পেশা জীবনের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ। মানবিক বিষয়ে পড়ে তিন ধরণের ইন্ডাষ্ট্রিতে টেকনিক্যাল বিষয়ের বুৎপত্তি অর্জন ও উন্নতির শীর্ষে ওঠা আমার নিজেরই গল্পের প্রতিচ্ছবি যেন এ বইতে। ভিন্ন বিষয়ের ছাত্র হয়েও সততা,নিরলস পরিশ্রম, বই পড়ে ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে একাগ্রতার সাথে পথ চলে এক্সেকিউটিভ থেকে এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর হওয়া ছিল জীবনের সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। ৩৩ বৎসরের কর্মজীবনে একটা বিষয়ই শিখেছি যে, ইঞ্জনিয়ারিং ডাক্তারী সহ বিশেষ কিছু Highly Technical বিষয় ছাড়া যে কোনো বিষয়ে পড়াশুনা করে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো ইন্ডাষ্ট্রিতেই উন্নতির শীর্ষে উঠা অবশ্যই সম্ভব। Sharpener প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে দেশের যুব সমাজকে পেশা জীবনের পথ দেখানোর কাজে Soft Skills Training, Personal Mentoring on "How to become a CEO", ও Fourth Industrial Revolution নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। Sharpener-এ প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নীতি-নৈতিকতা-আদর্শে মানুষকে ব্যাক্তিগত জীবন ও ক্যারিয়ারের সমন্বয় করে কিভাবে সত্যিকারের সুখী জীবন যাপন করা যায় তার উপর নিবিড় ভাবে নিয়মিত ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় Executive to Executive Director বইটি লেখা। এর মধ্যে প্রতিফলিত আমার পেশা জীবনের শীর্ষে ওঠার শ্বাশত সূত্র যা চিরকাল মানুষকে পথ দেখায়ে যাবে। বাবা শরীফ আব্দুর রাজ্জাক ব্রিটিশের অধীনে চাকুরী করতেন কলকাতায়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন এবং হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এবং আলীয়া মাদ্রাসা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। মা, রিজিয়া বেগম গৃহিনী। জন্ম মাগুরায়। পড়ালেখা ইংরেজি সাহিত্য ও ইসলামিক রিসার্চ এন্ড কম্পারেটিভ রিলিজিওন। ছেলে রাতুল ও মেয়ে মৌ দুইজনই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রী রিনা চাকরি না করে নিবিড় পরিচর্যায় সংসারটাকে পৃথিবীর স্বর্গে পরিণত করেছেন। দুইজন আদর্শ নাগরিকের গর্বিত জননী এবং এই তিন জনের টিমের সফল ম্যানেজার।