মুক্তো খোঁজার গল্প-১
পশ্চিমি এক ভদ্রলোক উদাসী শুন্য পকেটে, ধোপদুরস্ত পোষাকে, দামী সুগন্ধি মেখে গড়ের মাঠের অসংখ্য পকেট নিয়ে বের হলেন ডিনার করতে। এক পকেটে বাহারি “পকেট স্কয়ার” ও ছিল।
আমার ফাইজার জীবনের এক বন্ধু একদিন আমাকে বলেছিল, “যেদিন আমাকে পরিপাটি পোশাকে, চকচকে জুতা পায়ে, দামী ঘড়ি চশমা আর দামী সুগন্ধিতে দেখবি, মনে করবি সেদিন আমি কপর্দক শূন্য, দীনের হতে দীন।”
আমি মজা করে রবীন্দ্রনাথে গেলামঃ
“যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীনসেইখানে যে চরণ তোমার রাজেসবার পিছে, সবার নীচে, সব-হারাদের মাঝে।”
আহত বন্ধুটি অভিমানের সুরে বলল, মিসকিনকে নিয়ে মস্কারা করিস না।”
আমি আবারও রবীন্দ্রনাথেঃ
“আমার অভিমানের বদলে আজ নেব তোমার মালা।আজ নিশিশেষে শেষ করে দিই চোখের জলের পালা।আমার কঠিন হৃদয়টারে ফেলে দিলেম পথের ধারে,তোমার চরণ দেবে তারে মধুর পরশ পাষাণ-গালা।”
আমার এই রসিকতা ক্ষুধার্ত বন্ধুটির ভালো লাগছিল না কারণ সে নাস্তা না করে বাহারি রঙে সেজেগুজে এসেছে। বলল, “চল আজকে নাস্তা, লাঞ্চ, ডিনার করাবি।”
গেলাম পেয়ারা রোডের মাথায় তখনকার দিনের নামকরা হোটেল “গুলবাগে।”
ঐ দিকে তেমনই এক বন্ধুহীন একাকী ভদ্রলোক অভিজাত হোটেলে গিয়ে বাহারি পদের দামী দামী খাবার সাবাড় করলেন।
শেষ খাবারের পদ ছিল এক ঝুড়ি ঝিনুক। উল্লেখ্য, বাইরের অনেক দেশে ঝিনুক এক পরম আরাধ্য খাবার।
রসিক খাদক দামী ওয়াইনের সাথে তারিয়ে তারিয়ে ঝিনুক খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন।
খাবার শেষে দীর্ঘদেহী বিল এলে ভদ্রলোক বল্লেনঃ “আমার কাছে তো কোনো টাকা পয়সা নেই।” অবাক ম্যানেজার ধমকের স্বরে বল্লেনঃ “তা হলে এত দামী দামী খাবার সাবাড় করলেন কেন?”
উত্তরে ভদ্রলোক বললেনঃ “আমি তো আশা করেছিলাম যে, এতগুলো ঝিনুকের মধ্যে কোনো না কোনো একটায় মুক্তো পেয়ে যাবো। আর সেই মুক্তো দিয়ে বিল শোধ করবো।”
বাঙালি হলে উনি “ইশ্বরের দুনিয়া এমন হয়ে গেল” বলে গেয়ে উঠতেন, “এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম নাযাতে মুক্ত আছেএমন কোনো মানুষ খুঁজে পেলাম নাযার মন আছে……………………………………শুনে গেলাম অনেক কথাঅনেক গল্প অনেক গাথাএমন একটি কথা খুঁজে পেলাম নাযাতে সত্যি আছে।”
চেহারার আদম সন্তানের মাঝে মানুষ খুঁজে হয়রান। মুক্তো না থাকুক আজকের পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে একটা না একটা হিডেন এজেন্ডা থাকবেই। বিরল কারো কারো হিডেন এজেন্ডা থাকে না, তবে তা উদাহরণের গোত্রভুক্ত হতে পারে না।
মহাত্মা গান্ধীর শেষ সভায় নথুরাম ‘গান্ধী-দর্শন-ভক্ত’ হয়ে যায় নি। গিয়েছিল পিস্তল লুকায়ে তাঁকে হত্যা করতে।
কবরে যে পোকা মাকড় আমাদেরকে কুরে কুরে খাবে তাও আমাদেরকে ভালবেসে না, আমাদের সযত্নে লালিত প্রিয় অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ খাবে তাদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতে।
মনে হয় দুনিয়ায় যাদের হিডেন এজেন্ডা থাকবে না তাদের বোধহয় এপারে তেমন কোনো কাজ আর বাকী নেই!
Categories: Uncategorized
0 Comments