ছান্দ্যোগ্য উপনিষদ অন্যতম প্রাচীণ উপনিষদ। এই পুরাণে বর্ণিত: জীবনের গোপন সত্য জানার জন্য দেবতাদের সর্দার ইন্দ্র ও অসুরদের সর্দার বিরোচন স্রষ্টা প্রজাপতির দ্বারস্থ হন। প্রজাপতি প্রথমেই বললেন যে “দৈহিক অস্তিত্বই একমাত্র বাস্তবতা এবং এই শরীরের সুখই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।”
আনন্দে আটখান অসুর সর্দার দ্রুত তার লোকেদের কাছে পৌঁছালেন এবং সবাইকে দৈহিক আনন্দে মত্ত হওয়ার আহ্বান জানালেন।
এদিকে জীবনের তাৎপর্যের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দেবরাজ ইন্দ্রের। প্রজাপতির আপাতঃ প্রলুব্ধ করা ব্যাখ্যায় একমত হলেন না ইন্দ্র এবং অনেক পীড়াপীড়িতে, সত্যিকারের জানার আগ্রহ দেখে প্রজাপতি জীবনের নিগূঢ় তত্ত্ব প্রকাশ করলেন ইন্দ্রের কাছে। প্রজাপতি বললেন ,”শাশ্বত বাস্তবতা মহাকাল-ব্যাপী যা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। জীবনের ছোটোখাটো আনন্দ-বেদনার অনেক অনেক উর্ধে।”
এটাই দেবতাদের জীবন-দর্শন, অন্যদিকে ভোগবাদী, স্থুল, ইন্দ্রীয়-পরিতৃপ্তকারী দর্শন হচ্ছে অসুরদের দর্শন যা ছিল তাদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
দেবতা এবং অসুরদের মধ্যের যুদ্ধের একপর্যায়ে দেবী দুর্গার অসীম যুদ্ধ-ক্ষমতা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে অসুর রাজ্ শুম্ভ দেবী দুর্গাকে বললেন, “তুমি গর্বিত রমণী আমার সাথে কঠিন যুদ্ধ করছো। কিন্তু তুমিতো আমাদের “একাকী” যুদ্ধ করার রণ-নীতি ভঙ্গ করছো। তোমারতো লজ্জিত হওয়া উচিৎ। “
উত্তরে দেবী দূর্গা বললেন,”শোনো অসুর!,তোমারতো শাশ্বতের কোনো ধারণাই নাই। সমগ্র মহাবিশ্বে আমি এক এবং একমাত্র শাশ্বত, আমি ছাড়া অন্যদের কোনো অস্তিত্ব নাই।” সমস্ত দেবীগণ দুর্গায় একীভূত হয়ে একমাত্র দূর্গা-তে সার্বজনীন সৃজনশীল শক্তিতে রূপান্তরিত হন। দুর্গতি-নাশিনী দূর্গা।
যুদ্ধে অসুরদের পরাজয় হয় এবং দেবতারা স্বর্গে স্থিতু হন।
অসুরদের পরাজয় আসলে ভোগবাদী দর্শনের পরাজয়। যজ্ঞে ঘৃতাহুতির মতো দৈহিক ভোগে যত আহুতি দেওয়া হয় কামনা-শিক্ষা আরো তীব্র ভাবে জ্বলে ওঠে এবং আরো ভোগে উন্মত্ত হতে প্রলুব্ধ করে। পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার, ভোগবাদী নগ্ন-মানসিকতার ক্রমঃঅধপতনের, জীবনের অস্থিরতার, ব্যার্থতার মধ্যেই দেখা যায় ভোগবাদের পরিণতি। ভোগের এতো আয়োজনের পরও সেই “প্রমোদে ঢালিয়া দিনু প্রাণ, তবু মন কেন কাঁদেরে”-র মতো অবস্থা।
দেবীর হস্ত- ধৃত দশ অস্ত্র। দেবী অষ্ট (৮) শক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত। দেবী প্রতিমা গড়তে ১০ প্রকার মাটির প্রয়োজন। দেবীর মহা-স্নানের জন্য ১০ প্রকারের জলের প্রয়োজন। দূর্গা পূজায় দেবীর ১৪ খানা শাড়ির প্রয়োজন।
সংখ্যায় বর্ণিত হলেও প্রতিটা প্রয়োজনের পিছনে আছে অনেক বড়ো দর্শন। প্রতিটা উপাদান আর উপাচারের জন্য আছে বিশদ ব্যাখ্যা।
দেবীর হস্ত- ধৃত দশ অস্ত্র:
ডান হাতের অস্ত্র উর্ধ থেকে নিম্নে যথাক্রমেঃ ১.ত্রিশূল ২.খড়গ ৩.চক্র ৪.বাণ ৫.শক্তি
বাম হাতের অস্ত্র উর্ধ থেকে নিম্নে যথাক্রমেঃ ১.খেটক ২.পূর্ণচাপ ৩.পাশ ৪.অংকুশ ৫.পরশু
(চলবে)
0 Comments