১১০ বৎসর আগের এই দিনে বিশ্ব সাহিত্যের অতুলনীয় মহীরুহ লিও তলস্তয় মারা যান।

পঙ্কিলতার চরম রসাতল থেকে ঋষি-তুল্য দেবমূর্তি হয়ে ওঠায় যে দৈহিক দহন আছে, অন্তরের অন্তরীক্ষে যে বিষবাষ্পের জ্বালা আছে, চৈতন্যের অলিতে গলিতে যে নীলকণ্ঠী বিষের সরব আনাগোনা, কখনো ভালো দেবশিশু হয়ে জন্মে, নিষ্পাপ পথ পরিক্রমায় সে অভিজ্ঞান লাভ করা যায় না।

৯ বৎসর বয়সে পিতৃ-মাতৃহীন। পিসির কাছে মানুষ। ১৬ বৎসরে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেয়ে পরিক্ষা না দিয়ে ৩ বৎসরের মাথায় আবার ইয়সানায়া পলিয়ানাতে ফিরে আসেন। জুয়া খেলে চরমভাবে দেউলিয়া হলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভাই নিকলাই-এর সাথে ককেসাসে পার্বত্য উপজাতীয়দের সাথে যুদ্ধ করেন।

সেখান থেকে সেবাস্তপোলে বদলি হয়ে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে লড়াই করে পরের বৎসর “সেবাস্তপল স্কেচেস” লিখেন। সেবাস্তপল স্কেচেস পড়ে স্বয়ং সম্রাট এর ফরাসী অনুবাদের আদেশ দেন। সম্রাজ্ঞী পড়ে এত কেঁদেছিলেন যে সেই কান্না তলস্তয়ের সুনাম বাড়াতেই থাকে।

গির্জা, যাজক ও রাষ্ট্র তাঁর বিরোধিতায় মুখর। নিয়ত রুপান্তর যেন তলস্তয়ের পথ পরিক্রমার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দীর্ঘ জীবনে নিজের উপর পরিক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন নিরলস। নিষ্কলঙ্ক থেকে পঙ্কে ডুবে আবার পবিত্র হওয়ার প্রক্রিয়াই অসম সাহসিকতার পরিচয়। নিষ্পাপ থেকে ঈশ্বরের প্রিয় হওয়ায় কোন কৃতিত্ব নাই। “আনা কারেনিনা”, “ওয়ার এন্ড পিস”, “রেজারেকশান।“ উপন্যাসগুলোর পাতায় পাতায় বিধৃত আছে তলস্তয়ের নিজ জীবনের অনেক ঘটনা, দুর্ঘটনা।  

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ডাইরি’র উদাহরণ থেকে নিজে প্রতিদিন ডাইরি লিখতেন।এই ডাইরিতেই লেখা ছিল তাঁর অবাধ ও অবৈধ যৌন জীবনের অকপট বিবরণ যা তিনি বিয়ের আগের দিন ভাবি স্ত্রী সফিয়াকে পড়তে দেন।

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন থেকে উৎসাহ পেয়ে  নিজের জন্য একটা মধ্যম গোছের রুটিন তৈরি করলেনঃ রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমোতে যাওয়া, ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠা। ২ ঘণ্টার বেশী দিবানিদ্রা না। উদর পূর্তি খাবার না খাওয়া। মিষ্টি জাতীয় খাবার কমানো। মাসে ২ বারের বেশী পতিতালয়ে না যাওয়া ও জুয়া খেলা কমানো !!

চার্লস  ডিকেন্সের “ডেভিড কপারফিলড” পড়ে  অভিভুত হয়ে যান, উৎসাহিত হন এমন কিছু সাহিত্য রচনা করতে।

পড়ার প্রতি কি দুর্বার আকর্ষণ যে ৪০ বৎসর বয়সের পর গ্রীক, জার্মান, ইতালিয়ান, ও হিব্রু ভাষা শেখেন কতকগুলো বই লেখকের মূল ভাষায় পড়তে চান বলে।

খৃষ্ট ধর্মের মূল বাণী থেকে সরে আসায় তিনি যাজকদের সমালোচনা করেন। যাজকরা ক্ষিপ্ত হয়ে তলস্তয়কে খৃষ্ট ধর্ম থেকে বহিস্কার করে ও দেশের সব গির্জার দরোজায় বহিষ্কারাদেশ টানিয়ে দেয়। গির্জা তলস্তয়কে তাড়ালেও জনগণ বিপুলভাবে সংবর্ধনা দিতো। তলস্তয় ঘোষণা করেন, ‘যারা ঈশ্বর ও যিশুকে নিয়ে ব্যবসা করে তিনি তাদের চেয়ে হাজারগুণ বেশী খৃষ্টান তা প্রমাণ করতে হবে না।‘ বিচার সভা ক্ষেপে উঠলে এক সংবাদিক লিখলেন, ‘আমাদের জার দুইজনঃ ‘জার নিকলাস ও লিও তলস্তয়।‘

তলস্তয় সেই পরীক্ষিত পরিশুদ্ধ মানুষ যিনি ভোগের পেয়ালায় চুমুখ দিয়ে আকণ্ঠ পান করেছেন সব সুধারস, জুয়া থেকে শুরু করে  একাধিক নারী, যৌনরোগ, অবৈধ সন্তান আরও কত কি? নরকের শেষ ধাপ থেকে পবিত্র হয়ে হয়ে সবাইকে ছাপায়ে হয়ে উঠেছেন এক কিংবদন্তী স্রষ্টা, দেবতুল্য, এমনকি দেবালয়।     

৫০ বৎসর বয়স পর্যন্ত ভোগ বিলাসিতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন। উপভোগ্য, স্থুল ,নীতিহীন যৌবন পার করার পর আধ্যাত্মিক সংকটে পড়েন ।

পরবর্তী বৎসর গুলোতে দর্শণ অধ্যয়ন করে জীবনের নিগুড় সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়াসে মগ্ন ছিলেন। দর্শণে উত্তর না পেয়ে ধর্মের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন।

তলস্তয়ের ধর্মাশ্রয়ী হওয়ার সাথে আর এক মহান রুশ লেখক দস্তয়ভস্কি’র অনেক সাযুজ্য পাওয়া যায়।

দস্তয়ভস্কি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দিয়ে র‍্যাডিকালদের সাথে মিশে গ্রেপ্তার হন ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পান কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা থেকে নিষ্কৃতি পান। সাইবেরিয়ার বন্দী জীবনে মৃগী রোগে আক্রান্ত হন। এর পর তাঁর জীবনে আসে রুপান্তর । এক গভীর ধর্ম বিশ্বাস দস্তয়ভস্কিকে আলোড়িত করে। সৃষ্টি হয় “দ্যা ইডিয়ট”, “ ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” ।

অন্ধকারের মধ্যে তলস্তয় শুভ ও অশুভ দুই শক্তিকেই দেখেছেন। অশুভকে পরাভুত করে শুভ শক্তির জাগরণকেই তিনি মহিমান্বিত করেছেন।

ব্যক্তিগত ও সামাজিকতার অশুভ দিকের প্রতিকার নিয়ে দুশ্চিন্তা করে মন ভারাক্রান্ত করেন। মানব জীবনের আসল লক্ষ্য কি? কর্তব্য কি হওয়া উচিৎ?  উত্তর খুঁজে পান না।

“ওয়ার এন্ড পিচ”, “আনা কারেনিনা” এবং “রেজারেকশান” এই উপন্যাসত্রয় তাকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের মর্যাদা এনে দেয়। তিনি নোবেল পান নাই কারণ নোবেল চালু হয় তার মৃত্যুর পর।

তলস্তয় ২৯ বৎসর বয়সে ইউরোপে বেড়াতে যান। ভিক্টর হিউগ’র সাথে দেখা হয় এবং তার “লা মিজারেবল” পড়ে তলস্তয়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে।

৩৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত তলস্তয় ঠিক করতে পারেন নাই কি লিখবেন। সিদ্ধান্তহীনতার এক পর্যায়ে তুরগেনেভকে লিখেছিলেন,”আমি সাহিত্য চর্চার যোগ্য নই, তাই লিখব না।“

বেপরোয়া ভবঘুরে জীবন ছেড়ে শান্ত সংসারী জীবনে থিতু হতে ও অস্তিত্তের নিগুড় সত্য নিয়ে সাহিত্য রচনার উদ্দেশে ইউরোপ থেকে ফিরে এসে ৩৪ বৎসরের তলস্তয়ের সাথে উচ্চ বংশীয় ১৮ বৎসরের সফিয়ার বিয়ে হয়।

সফিয়া ছিলেন সম্পদশালী ঘরের সাধারণ বুদ্ধির মেয়ে, তলস্তয়ের ভাবনা ও সাধনা উপলব্ধির ক্ষমতা তার ছিল না ।

৭-৮ বৎসর সুখের ছিল দাম্পত্য জীবন। তলস্তয় ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৯ এই পাঁচ বৎসর ধরে “ওয়ার এন্ড পিচ” লিখলেন। ৫০০ পৃষ্ঠার অধিক এই উপন্যাসকে টমাস মান ‘দানব-তুল্য’ লেখা বলেছেন।

প্রথম ড্রাফ্‌ট তৈরি হলে সফিয়াকে সংশোধন করতে দেন। তলস্তয়ের হাতের লেখা কেউ পড়তে পারত না। কখনো কখনো ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস ব্যবহার করেও পাঠোদ্ধার করেতে হয়েছে। পরবর্তী ৭ বৎসরে সফিয়াকে ৮ বার (কেউ কেউ বলেন এমনকি ৩০ বার!!) পুরো উপন্যাসটা সংশোধন করতে হয়েছে এবং সাথে সাথে তাদের ১৩টি সন্তানদের মধ্যে ৪টি সন্তান জন্ম দেওয়া ও মানুষ করা, জমিদারী ও ব্যবসায়ের দেখাশুনা করতে হয়েছে।

এতে কর্মভারে ক্লান্ত সফিয়ার সাথে তলস্তয়ের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরে। বলা হয় “ক্রয়জার সোনাটা” দাম্পত্য কলহ থেকে লেখা। সরকার নিষিদ্ধ করলো বইটা।

তাদের বিবাহ ছিল ব্যর্থ বিবাহের অনন্য উদাহরণ। প্রথমদিকের প্রণয় ও আকর্ষণ যথেষ্ট ছিল ।  কিন্তু যখন তার ডাইরি পড়তে দেওয়া হোল বিয়ের আগে যার মধ্যে বিবাহ-পূর্ব যৌন জীবনের বিশদ বিবরণ ছিল, তা সব কিছু এলমেল করে দিল ।

জুয়া খেলে জমিদারীর বিশাল ভবন হারানো, একাধিক বিবাহ-পূর্ব-প্রণয়, কৃষক রমণীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও একটা অবৈধ সন্তান, যৌন রোগাক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি তলস্তয়ের দাম্পত্য জীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছিল। তলস্তয়ের বিয়ের অন্যতম কারণ ছিল দৈহিক কামনা উপশম করা ও ওই দাস কৃষক রমণীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ।

৩-৪ বৎসর বিরতির পর “আনা কারেনিনা” লেখা শুরু করেন। নেপলিয়ানের রাশিয়া দখল ও সমাজে তার বিরূপ প্রভাব লেখককে আহত করে। এই সময়ে দেশে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে এক নারীকে রেলের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেখে লিখলেন “আনা কারেনিনা”।

“আনা কারেনিনা”র লেভিন ও কিটি’ র মধ্যে তলস্তয়ের নিজের জীবন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। “ওয়ার এন্ড পিচ” এও তাই । “রেজারেকশান”এও ওই কৃষক রমণীর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

নিজে জমিদার হয়েও কৃষকের সাথে দেদারছে মিশেছেন। সমাজের উঁচু স্থানের মানুষদের সব খুঁটিনাটি নষ্টামি জানতেন। ধনী লোকদের অবক্ষয় গ্রস্থতা, অর্থহীন জীবন, স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, কদর্য ব্যাভিচারিতা, কুটিল ও সংকীর্ণ মানসিকতা, সব কিছু বিশদভাবে তুলে ধরেছেন উপন্যাসের পাতায় পাতায়।

এর মধ্যে তলস্তয়কে মানসিক ও আধ্যাত্মিক সঙ্কটের মধ্যে যেতে হয়েছে। গির্জা ও পুরোহিতদের যিশুকে নিয়ে ব্যবসা তাকে পীড়িত করেছে। প্রতিবাদ করেছেন। একসময় গির্জা তাকে একঘরে করেছে। জার সরকারও তার উপর পুলিসি নজরদারি বাড়ায়। রাশিয়ার দুই ক্ষমতা ধর প্রতিষ্ঠানঃ গির্জা ও জার তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

জার ও গির্জা যত চেপেছে তলস্তয়ের খ্যাতি তত বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সন্যাস জীবন  যাপনের সাথে সাথে তার নামে অগনিত প্রতিষ্ঠান গজায়ে ওঠে। অনেকে তার জমিদারীর কাছে এসে বাস করে তার সান্নিধ্য পেতে চাইল আবার দেশের ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধী ও আমেরিকায় মারটিন লুথার কিং তলস্তয়ের ‘দ্যা কিংডম অফ গড ইজ উইদিন ইউ’  পড়ে প্রভাবিত হন।   গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তলস্তয়ের সাথে যোগাযোগ করলেন। বিলেতেও দুইটা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে তলস্তয়ের নতুন ধর্মভাবনা ও ঋষি সুলভ জীবন যাপনের আদলে।

তলস্তয় নিজেও স্বীকার করেছেন যে জার্মান দার্শনিক শোপেনহাওয়ার তাকে অনেক প্রভাবিত করেছেন। শোপেনহাওয়ারের “ অনস্তিত্ব নিজের অহংকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগের ফল; এ হোল আপেক্ষিক অনস্তিত্ব, এবং তাতে ভয়ের কিছু নেই।“ শোপেনহাওয়ারের লেখা পড়ে তলস্তয় সর্বত্যাগের ও বাসনামুক্তর পথ বেছে নেন।

নিজ গ্রামে ফিরে জমিদারীতে ১৩ টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার জমিদারীর দাস দাসীদের সন্তানদের জন্য। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা পদ্ধতি ও ধারার পিছনে তলস্তয়ের প্রভাব ছিল মনে করা হয়। শিক্ষার বিষয় জারের  পছন্দ না হওয়ায় ওই স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার রাজনৈতিক আন্দলনের ফলে দাস প্রথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেও স্কুল পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়।

অভিজাত রাশিয়ানরা রুশ ভাষার পাশাপাশি ফরাসি ভাষা চর্চা করতেন আভিজাত্য প্রকাশ করতে যেমন আমাদের এখানে ফার্সি ও উর্দু ছিল এক কালে।

নেপোলিয়ন মস্কো দখল করে শহরটাকে আগুন দিয়ে পুড়ায়ে দিলে রাশিয়া বিদেশি সাংস্কৃতিক বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পায়। মাতৃভাষায় দুর্বল অভিজাতেরা নিজের ভাষা শেখার জন্য শিক্ষক খুঁজে বেড়াচ্ছিল তখন।

লেখার অনেক চরিত্র তলস্তয়ের নিকটজনের। সোনিয়া, তাতিয়ানা’র সাথে অনেক মিল তাঁর পিসির, যে তাকে ছোটো বেলায় দেখাশুনা করেছিল ।

নাতাশা’র মধ্যে নিজ স্ত্রী  ও শালী তানিয়ার প্রতিচ্ছবি। পিয়ের এবং আনদ্রেই’র মাঝে তলস্তয়ের নিজে চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

স্ত্রীর নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দুশান মাকভিস্ককে নিয়ে বাড়ি ছাড়লেন। হেমন্তের ঠাণ্ডায়  অন্ধকারে ঘোড়ার গাড়ি বের করতে বললেন। নিজেও হাত লাগালেন ঘোড়া ও গাড়ি জুড়তে। মাথার টুপি হারালেন অন্ধকারে । মাথায় শিশির পড়ল । চিকিৎসক দুশান একটা টুপি দিলেও ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেল। জমিদার তলস্তয় দুঃখে, যন্ত্রণায় বাড়ি ছাড়লেন পকেটে ৩৯ রুবল নিয়ে । ডাক্তারের কাছে ছিল ৩০০ রুবল। একদিন আশ্রমে থেকে পরদিন বোনের কাছে মঠে গেলেন।

ততক্ষনে তলস্তয়ের খোঁজ শুরু হয়ে গেছে। পুলিশ, গোয়েন্দারা তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। বোনের বাড়ি একদিন থেকে আবার বোনের থেকে বিদায় নিলেন। প্রচণ্ড জ্বর । দিকিন ইস্টিশানে গেলে পুলিশ জানল যে এই ট্রেনে তিনি আছেন। তাকে ট্রেন থেকে নামানো হোল।  ইস্টিশান মাস্টার একটা ঘর ছেড়ে দিলেন। মেয়ে শাশা খোঁজ পেয়ে এসে হাজির। পরদিন এলো মেয়ে তানিয়া। এর পর স্ত্রী, কিন্তু তাকে তলস্তয়ের কাছে যেতে দেওয়া হোল না।

তলস্তয় কঠিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। রাশিয়া জুড়ে  হুলুস্থুল পড়ে গেছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায়  খবর বেরুচ্ছে। জ্বরের ঘোরে তলস্তয় ৪ বছর আগে মারা যাওয়া মেয়েকে ‘মাশা’ ‘মাশা’ বলে ডাকছেন। জ্বরের ঘোরে বলছেন, “পালাতে হবে। এমন এক জায়গায় আমি যাব যেখানে কেউ আমাকে খুজে পাবে না।“

গির্জা থেকে যাজক পাঠানো হোল। যদি তিনি অনুশোচনা করেন তাহলে তাকে পুনরায় খৃষ্টধর্মে গ্রহণ করা হবে। তার অনুগামীরা যাজককে তলস্তয়ের তার কাছে ঘেষতেই দিল না বরং তাড়িয়ে দিল।

নভেম্বেরর ২০ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জীবন নিয়ে জুয়া খেলার মতো পরিক্ষা নিরীক্ষা করা, পঙ্কের উরধে উঠা, মহান শিল্পী লিও তলস্তয়। তুলা প্রদেশের ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় আনা হোল মৃত দেহ।

গির্জা ও রাষ্ট্রের শত্রু তলস্তয় পেলেন অনুগামীদের যারা তাঁর বাড়ি থেকে একটু দূরে গাছের নিচে তাকে সমাহিত করলো। রাশিয়া একটা মৃত্যু দেখল যেখানে গির্জা ও যাজক ছিল না । বারচ ও ওকের অরণ্যের কোণায় ফলক বিহীন কাঁচা মাটির তৈরি সমাধি । উপরে শুধু ঘাস। দিঘল ওক গাছের পাতার ঝালরের ফাক দিয়ে ঝিলিক দিবে চাঁদ ও সূর্যয়ের আলো। পাখির কুজনে মুখরিত কিন্তু বাইরের মানুষের কণ্ঠস্বর ওখানে পৌঁছাবে না ।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *