মোটা রশি হাতে এক পাগল যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে।

হাতে কি জানতে চাইলে সে বলল ”এটা আমার আমার আবহাওয়া অফিস”

কি রকম?

পাগলে বলল,”এটা দুলে উঠলে বুঝি ঝড় হচ্ছে, আর ভিজে গেলে বুঝি বৃষ্টি হচ্ছে।“

নিজে ভিজলে বোঝে না যে বৃষ্টি হচ্ছে, রশি ভিজলে বোঝে!

আমাদের অনেকের দশা এখন ঐ পাগলের মতো। কি হলে যে আমরা বালা মুসীবত গজব আযাব বুঝব কল্পনা করাও মুশকিল।

গত বৎসর যখন প্রথম করোনার আঘাত আসে এবং লকডাউন শুরু হয় তখন আমরা অনেকে ফেসবুকে সবার কাছ থেকে মাফ চেয়েছি। সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে কাঙ্গালের মতো ক্ষমা চেয়ে উদ্ধার চেয়েছি করোনা থেকে। কিন্তু সত্যিকারে কি আমাদের মধ্যে কোন স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে? আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব যে গত বৎসরের আমি এবং এক বৎসর পরের আমি’র  মধ্যে অনেক পরিবর্তন?  অনেক  Transformation? উত্তর  অনেকাংশেই  “না”। বিপদ কেটে গেলে আবার আমরা আগের চরিত্রে!

Whereas, this Covid-19 could be a better medium to get ourselves transformed.

ধর্মীয় বা প্রাকৃতিক যে যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখি না কেন করোনার এই মুসীবত যে আমাদের সীমা লঙ্ঘনের ফসল, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেয়ে রুদ্ধ শ্বাসে নিয়ম নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে “আরও চাই, আরও চাই, আরও ভোগ, আরও বিলাসিতা” করতে করতে সব ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছি যার পরিণতিতে এই ভয়াবহ বিপর্যয় ।

ধর্মীয় দিক থেকে অবশ্যই মানতে হবে যে আল্লাহ্‌র বাতলে দেয়া পথে থেকে সরে যেয়ে নিজেদের নফসের খাহেশ অনুযায়ী চলে আমরা আল্লাহ্‌র নেক নজর থেকে দূরে চলে গেছি।

প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে কসুর করে না। আজ কাল বা পরশু মুল্য কড়ায় গণ্ডায় দিতে হয় হিসেব করে।

সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা, ময়েনজোদাড়ো, জুনহেজোদাড়ো সিন্ধুর করাল প্লাবনে ধ্বংস হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।  রোমান সম্রাজ্যের পম্পেই ও হেরকুলেনিয়াম নগরী বিসুভিয়াসের জ্বলন্ত লাভার নিচে ৬০ ফিট ছাই ও ঝামার কবরে নীরব।  পেরুর ইনকা সভ্যতা পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে টিকে আছে।

এখানকার অধিবাসীদের পাপ-পুণ্যের ইতিহাস আমরা জানি না। এদের কারোটার ধ্বংসের পূর্বে কোন মহামানব সতর্ক করে নাই।

কিন্তু  নূহ নবী, আদ বা সামুদ জাতীর ধ্বংসের ইতিহাস, ফেরাউন ও নমরুদের ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যায় কত নির্মম ভাবেই না তারা ধ্বংস হয়েছিলো! সামান্য মশা নমরুদের বাহিনী সমুলে ধ্বংস করে এবং একটা মশা নমরুদের নাকের ভিতর দিয়ে মাথায় ঢুকলে তার যন্ত্রণায় নমরুদকে  আমৃত্যু হাতুড়ী দিয়ে নিজের মাথায় নিজেকে আঘাত করতে হয়েছে। 

উল্লেখিত নবীরা তাদের সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে আল্লাহ্‌র পথে আসতে বার বার আহ্বান করেছেন। পাপের পথে থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এরা কথা না শোনার জন্য নবীরা বার বার আল্লাহ্‌র শাস্তির কথা বলেছেন। পাপিষ্ঠরা তাদের পাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং নবীদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছে এই বলে যে তুমি যে  শাস্তির কথা বলছতা এনে দেখাও তো!

প্রতিটা নবীকেই শাস্তির সময় হেফাজত করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুই ধরণের শাস্তিঃ                        ক) সম্প্রদায়ের নবী বিহীন, সতর্কতা বিহীন শাস্তি

খ) এবং নবীদের বারংবার হেদায়েতের দাওয়াত দেওয়ার পরও পাপিষ্ঠরা পথে না আসায় পূর্বে প্রতিশ্রুত শাস্তির আবির্ভাব।

যেহেতু নবুয়তের সিলসিলা শেষ তাই আর কোন নবী এসে সতর্ক করবেন না। তবে নবী (আ)-এর দেখানো পথে চলার তাগিত রয়েছে। সে পথ আঁকড়ে থাকলে কি হবে আর সে পথ থেকে সরে গেলে কি হবে তা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে। সিদ্ধান্ত আমাদের। বর্তমানে ঘটে যাওয়া প্রতিটা  আজাব, গজব পরবর্তী সময়ে ইতিহাসে লেখা থাকবে, ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা সব কিছু চোখে দেখে, যুক্তি দিয়ে বিচার করে, বিজ্ঞানের নিক্তিতে মেপে সবকিছু বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু আল্লাহ্‌ সুরা বনী ইসরাইলে (৮৫ নম্বর আয়াতের শেষাংশ) বলেন, “…ওমা উতিতু মিনাল এলমে ইল্লা কালিলান।“ এ বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। আমাদের ব্রেনের ১০০ বিলিওন নিউরনের বা  ১০ লাখ গিগাবাইট ক্ষমতার ১০% ব্যাবহার করতেও কষ্ট হয়। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার সৃষ্টি হয়ে, সামান্য জ্ঞানের মালিক হয়ে সব কিছু বোঝার চেষ্টা করা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।

ইতিহাস থেকে আমরা বর্তমান পাই না, পাই অতীতকে। অতীতের সম্প্রদায়েরাও অনেক কিছু যুক্তি দিয়ে বুঝতে চেয়েছিল, চোখে দেখে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল, সত্য পথ থেকে সরে যেয়ে অন্যায় অবিচার পাপাচারে নিমগ্ন ছিল। সে সমস্ত নবীরা অসীম ত্যাগের বিনিময়েও তাদেরকে কথা শুনাতে পারে নি। নূহ (আঃ) তো ৯৫০ বৎসর ধরে তার সম্প্রদায়কে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করে না পেরে নিরুপায় হয়ে আল্লাহ্‌র কাছে বিচার দিয়েছিলেন, অভিশাপ দিয়েছিলেন, লুত (আঃ), সালেহ (আঃ) শোয়ায়েব (আঃ) থেকে শুরু করে অনেক সম্প্রদায়ের ইতিহাস পাওয়া যাবে যারা সঠিক পথ থেকে সরে যেয়ে গোমরাহিতে ডুবে ছিল, পাপাচারে নিমগ্ন ছিল যার পরিণতিতে কঠিন আজাবের শিকার হয়ে মাটিতে মিশে ইতিহাস হয়ে গেছে।

কওমে লুতের পাপিষ্ঠদের  ধ্বংস করতে যে পাথর নাজিল হয়েছিলো আসমান থেকে তার প্রতিটা পাথরের উপর উদ্দিষ্ট ব্যাক্তির নাম লেখা ছিল। যারা তাদের আবাসভুমির বাইরে সফরে বা অন্য কোন কাজে ছিল তাদেরকেও সেই পাথর ধ্বংস করেছিল।

শোয়ায়েব (আঃ) এর সম্প্রদায় যখন চরম সীমালঙ্ঘন  করে তখন তারা প্রচণ্ড গরমে আক্রান্ত হয়। সাত দিন ধরে বায়ু প্রবাহ বন্ধ ছিল। যার ফলে পানি, ছায়া, ঝরনা কোন কিছুই কোন কাজে লাগে নি। অনন্যোপায় হয়ে তারা ঘরবারি ছেড়ে উন্মুক্ত মাঠে চলে যায় ইঁদুরের গর্তে গরম পানি ঢাললে যে রকম হয় সে রকম। আকাশে একটুকরো মেঘ দেখে তারা মেঘের ছায়ায় আশ্রয় খোঁজে যে মেঘ এসেছিল আল্লাহ্‌র গজব হিসেবে। মেঘ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ও  জলন্ত অঙ্গার নিক্ষিপ্ত হয়। প্রচণ্ড ভুমিকম্প ও ভয়ানক নাদে সবার প্রাণ উড়ে যায়। নিথর দেহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে জালিম সম্প্রদায়।

অনেকেই চাক্ষুষ সব কিছুর সাক্ষাত পেতে চায়, প্রমাণ দেখতে চায়। কিন্তু আল্লাহ্‌র কর্মপদ্ধতিতো কারো খাহেশ অনুযায়ী হবে না। যখন প্রয়োজন হবে আল্লাহ্‌ তখন তাঁর বিধান দিবেন।

জ্ঞান বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব, বিস্ময়কর আবিষ্কারের গরিমায় আমাদের পা মাটিতে নেই। আমরা চাঁদে, মঙ্গলে যাওয়া সম্প্রদায়!! কিন্তু মহাবিশ্বের নখাগ্র পরিমাণ আবিষ্কারও এখনও কেউ করতে পারে নি। একটা ছায়াপথের দিশাইতো মানুষের নাগালের বাইরে। স্টিফেন হকিন্স পৃথিবী ক্রমসম্প্রসারমান বলে থেমে গেছেন। সুরা ইয়াসিনে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “ও কুল্লুন ফি ফালাকে ইয়াসবাহুন” সবকিছুই সন্তরণরত বা মহাশূন্যে সাঁতার কাটছে।

ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ তথা সর্বত্র সীমালঙ্ঘন করে আমরা অনেক আজাব, অনেক অভিশাপ আবাহন করে এনেছি। তারই পরিণতি এই করোনা।

যে কোন রোগ বস্তুত শরীরের ভিতরের বিরাট গরমিলের বহিঃপ্রকাশ। মাথা ব্যাথা আসলে নিজে কিছু না, something is wrong within the system. তেমনই করোনা কিছুই না, প্রকৃতির ভারসাম্যের এক অসহনীয় অসাম্য।

আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে সংশোধিত হওয়ার তৌফিক দেন এই প্রার্থনা করি পবিত্র জুম’আর দিনে।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *