সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ জন্মাষ্টমী।
জগত যখন অবিচার পাপাচারে পরিপূর্ণ হয়েছিলো তখন সকল অন্যায় দূর করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব।
“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভুথ্যানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।
পরিত্রাণ।য় সাধুনাং বিনাশয় চ দুশক্রিতাং।
ধর্মসংস্থাপনার্থ।য় সম্বভামি যুগে যুগে।।“ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা
অর্থাৎ, যখনই ধর্মের গ্লানি হয়, অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখনই হে ভরতবংশী (অর্জুন), পাপিদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতিদের বিনাশ করে ধর্মসংস্থাপন করার জন্য আমি [স্বীয় পরমাত্মাকে মায়া দ্বারা সৃজন করি] যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
“ডাকে বাসুদেব দেবকী ডাকে
ঘরে ঘরে নারায়ণ তোমাকে,
ডাকে বলরাম, শ্রীরাম সুদাম
ডাকিছে যমুনাবারি,
জাগো জাগো শঙ্খ চক্র গদাপদ্মধারী।“ কাজী নজরুল ইসলাম।
কংসের কারাগারে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান বিষ্ণু অবতার শ্রীকৃষ্ণ।
পুরাণ অনুযায়ী তুমুল ঝড় বৃষ্টির রাতে কংসের হাত থেকে কৃষ্ণকে রক্ষা করার জন্য বাসুদেব যমুনা পেরিয়ে বৃন্দাবনে যেয়ে যশোদা ও নন্দের সংসারে কৃষ্ণকে রেখে আসেন। বড় হয়ে একসময় শ্রী কৃষ্ণ কংশ রাজাকে হত্যা করেন। দুরিভুত হয় সমস্ত অনাচার, অবিচার, পাপ পঙ্কিলতা।
“ দেবকীর বুকের পাষাণ দলে
যে নাম দোলে যশোদার কোলে,
যে নাম লয়ে কাঁদে রাই রাসময়ী
কুরুক্ষেত্র যে নামে হল পাণ্ডব জয়ী,
গোলোকের নারায়ণ ভূলোকের রাধাশ্যাম
গাহ নাম অবিরাম, কৃষ্ণনাম।“ কাজী নজরুল রচিত কীর্তনের অংশ।
শ্রী কৃষ্ণের মুকুটে ময়ূরের পালক থাকে। বলা হয়ে থাকে যে ময়ূরের পালক প্রকৃতির ৭ টি রঙের আধার। সাত রঙ্গ নিয়ে ময়ুর মহা আনন্দে জীবন যাপন করে। মাথার মুকুটে ময়ূরের পালক রেখে শ্রী কৃষ্ণ বোঝান যে জীবনে ৭টা রঙই গুরুত্বপূর্ণ। সময় যেমন আসুক না কেন- সুখের বা দুঃখের- তাকে মেনে নিয়ে, মাথায় নিয়ে চলাই প্রজ্ঞাবানের পরিচয়। জন্মাষ্টমী দুঃসময়কে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার শিক্ষা দেয়।
সনাতন ধর্মের বাস্তশাস্ত্র মতে ঘরে ময়ূরের পালক রাখা মঙ্গলজনক। ময়ুর যে যায়গায় চরে বেড়ায় সেখানকার মাটি লক্ষ্মীবেদীতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পুরাণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতে বাঁশী বাজাচ্ছিলেন। এমন সময় আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। কালো কৃষ্ণের মাথার উপর কালো মেঘের মন্দ্রিত ধ্বনি। ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে মাতোয়ারা ময়ূরের কানে কৃষ্ণের বাঁশী! বিপুল উৎসাহে উদ্দাম নাচতে থাকে ময়ুরেরা কৃষ্ণকে ঘিরে। “নব ধারা জলে” স্নানাকুল ময়ুরেরা বাঁশির সুরের জন্য কৃষ্ণকে একটা পালক উপহার দেয়। কৃষ্ণ পালকটাকে মাথার মুকুটে গুঁজে রাখে।
জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে শশা নিবেদনের প্রথা আছে। রাত ১২টায় কৃষ্ণের জন্মক্ষণে শশা কাটতে হয়। এটা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় বাচ্চার নাড়ি কাটার রুপক হিসেবে মনে করা হয়। বাচ্চা যেমন মায়ের অন্ধকার জরায়ু থেকে আলোর পৃথিবীতে আসে এই নাড়ি কাটার প্রথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে করিয়ে দেয় শ্রীকৃষ্ণের আগমন সমস্ত আঁধার বিলোপ করে নতুন আলয় উদ্ভাসিত করবে সমস্ত চরাচর।
“আমি শুধাই ব্রজের ঘরে ঘরে
কৃষ্ণ কোথায় বল,
কেন কেউ কহে না কথা
হেরি সবার চোখে জল।
বল রে আমার শ্যামল কোথায়
কোন মথুরায় কোন দ্বারকায়,
বাজে বৃন্দাবনের কোন পথে তাঁর
নুপুর অবিরাম। কাজী নজরুল ইসলাম
0 Comments