সার্টিফিকেটের বাইরের কীর্তিমানেরা।

আমরা যারা সি জি পি এ ও ডিগ্রির দোহাই দেই, সুযোগের অভাবের অভিযোগ করি তাদের জন্য চোখ খুলে দিতে পারে এ আলোচনা। উদাহরণগুলো কালোত্তীর্ণ। এমন না যে, তখন সম্ভব ছিল এখন সম্ভব না। এখনকরা সমাজেও উদাহরণের আকাল নেই।

আজ অষ্টম ও ষষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত পড়া দুইজন কীর্তিমানদের নিয়ে আলোচনা করবো।

অষ্টম শ্রেণীঃরাহুল সাংকৃত্যায়ন ।

জন্ম উত্তর প্রদেশের আজমগড়। পড়াশুনা গ্রাম্য পাঠশালায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। বহুভাষাবিদ। ৩৬ টা ভাষা শিখেছিলেন।

১৯১৯ সালে জালিওনয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত। জেলের তিন বৎসরে সংস্কৃতিতে কোরান অনুবাদ করেন। বুদ্ধ দর্শনে প্রগাড় পাণ্ডিত্যের জন্য লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনার অনুরোধ করে এবং তিনি তা গ্রহণ করেন।
পরে সিংহলে বিদ্যালংকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

পায়ের তলায় শর্ষে নিয়ে জন্মেছিলেন। কাশ্মীর, কারগিল হয়ে পায়ে হেটে নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে যান। একাধিকবার (৩ বার) তিব্বতে যান পালি ভাষায় লেখা মূল ত্রিপিটক উদ্ধার করতে যা নালন্দা, বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিয়ে যাওয়া বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ষষ্ট শ্রেণীঃশিক্ষাই যে ধ্রুব তাঁরা হওয়ার একমাত্র মাধ্যম না জগতের অনেকে প্রমাণ করে গেছেন। সাহিত্যের জগতে তেমনই এক নীল নক্ষত্রের নাম তুষার রায়।

“গোলাপের এত লাল দেখে ভয় করে

বাগানে আসে না তাই সেই প্রিয় হাওয়া

ঘুরে ঘুরে চলে যায় দূর শালবনে।”- কবি তুষার রায়

নড়াইল জমিদায় বংশের সন্তান। পড়াশুনা ক্লাস সিক্স। মা বকুল রাণীর কাছ থেকে সাহিত্যে হাতে খড়ি। ১৯৩৫ ‘এ জন্ম। ৪২ বৎসরে জীবনাবসান ১৯৭৭ ‘এ।

মাত্রা অতিরিক্ত নেশা, সীমাহীন দারিদ্র, অবিশ্বাস্য আত্মপীড়ন তার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। জীবন, যন্ত্রণা ও মৃত্যুকে সমানভাবে উপভোগ করেছেন। আংশিক হলেও কিছুটা ফ্রান্সের কবি শার্ল বোদলেয়ারের (৪৬ বৎসর বয়সে মৃত্যু!) জীবন যন্ত্রণার সাথে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

নিজের কল্পিত চিতায় শুয়ে বিদায়ের বাণী ও অভিমান রেখে গেছেন তার বিখ্যাত এক কবিতায়ঃ

“বিদায় বন্ধুগন, গনগনে আঁচের মধ্যে

শুয়ে এই শিখার রুমাল নাড়া নিভে গেলে

ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেন পাপ ছিল কি না।”- কবি তুষার রায়

কি অদ্ভুত উপমা, চিত্রকল্প!!

নিজে যেন মহা আনন্দে আকাশের দিকে নির্বিকার চেয়ে চিতায় শুয়ে আছেন। চন্দন কাঠে ঘি ঢেলে দেওয়ায় লকলকে আগুনের শিখা ঊর্ধ্বমুখী।

কবি এই ঊর্ধ্বমুখী অগ্নিশিখাকে রুমাল নেড়ে বিদায়ের সাথে তুলনা করে কি পরিহাস করছেন!

রুমাল নাড়া শেষ হলে অর্থাৎ চিতার শবদাহ শেষ হলে পিছনে ফেলে যাওয়া জগতের মানুষের কাছে একটা প্রস্তাব রেখে যাচ্ছেনঃ

জগতের নিষ্ঠুর মানুষেরা যেন চিতার ছাই ঘেঁটে দেখে নেয় কবির জীবনে কোন পাপ ছিল কি না! যেমন করে স্বর্ণরেণু বা মুল্যবান বস্তু খোঁজে মানুষ ছাইয়ের গাদায়।

এই এক অভূতপূর্ব রুপকের আড়ালে কবি তার ফেলে যাওয়া জগতের মানুষদেরকে কি ম্যাসেজ দিয়ে যেতে চাচ্ছেন তা কি তাদের বোধগম্য?

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *