আজ ১১ই রবিউসসানি। গাউসুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র)-এর ওফাত দিবস।

১লা রমজান, ৪৭১ হিজরী, পারস্যের বিখ্যাত গিলান বা জিলান জনপদে জন্ম গ্রহন করেন। রমজানের চাঁদ দেখা যায় নি সেদিন। এই শিশুর জন্ম দিনেই মাতৃ-দুগ্ধ পান না করায় সবাই রোজা রাখা শুরু করেন।

১১ই রবিউসসানি, ৫৬১ হিজরীতে ৯১ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল ফরমান।

দিনটিকে আমরা ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম’ নামে বেশী চিনি।

নবী, পয়গম্বারদের পরে অলি, আউলিয়া, সুফি, দরবেশদের অবস্থান। এঁদের মধ্যে আব্দুল কাদের জিলানীকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গণ্য করে “গাউসুল আযম” বা বড় পীর নামে সম্বোধন করা হয়।

তাঁর জীবনের উল্ল্যেখযোগ্য দুইটা দিকঃ

১) আধ্যাত্মিক সাধনার জীবনে তাঁর অতুলনীয়, অমানুষিক পরিশ্রম ও নিষ্ঠা।

২) নবী করীম (স)-এর ওফাতের ৫০০ বৎসর পরে ইসলামের ঘোর দুর্দিনে তাঁর আবির্ভাব, সাধনা,কামালিয়াতের শীর্ষে পৌঁছে মানুষকে গোমরাহির পথ থেকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনা।

আমি তাঁর প্রথম দিকটা অর্থাৎ তাঁর সাধনার জীবনের কিছুটা এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। কিছুটা বললাম এইজন্যে যে তাঁর মহান কীর্তির সম্পূর্ণটা সল্পপরিসরে তুলে ধরা সম্ভব না।

বাগদাদে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে অনেক দরবেশেরা পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে যেতেন ফল কুড়িয়ে আনতে। বড় পীর একদিন অনেক সংখ্যক দরবেশদেরকে যেতে দেখে নিজে ফিরে আসলেন এই ভেবে যে যদি কোন দরবেশ ফল না পেয়ে অনাহারে থাকেন! আর নিজে মসজিদের দেয়ালে হেলান দিয়ে এক নাগাড়ে পড়ে যেতেন সুরা ইনশিরার এই আয়াত, ”ফাইন্না মাআল উসরে ইউসরা, ইন্না মাআল উসরে ইউসরা” অর্থাৎ- নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্থি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্থি রয়েছে।

বড় পীরের নিজের ভাষায় তাঁর সাধনার তীব্রতা উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেছেন,”একটানা ২৫ বৎসর ইরাকের বন জঙ্গল আর মাঠে ময়দানে এমনভাবে কাটিয়েছি যে কেউ আমাকে চিনতে পারত না। আমিও কারো সাথে সম্পর্ক রাখতাম না । ৪০ বৎসর এশার অজু দিয়ে ফজরের নামায পড়েছি। অর্থাৎ সারারাত এক মুহূর্তের জন্যও দুই চোখের পাতা এক করিনি। ১৫ বৎসর যাবত প্রতি রাতে নামাজের মধ্যে কোরান খতম করেছি।

এমন সময়ও গেছে যে ৩ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত কোন খাবার বা পানীয় খেতে বা পান করতে পারিনি। ঘুম বা বিশ্রামের সুযোগও হয়নি এ সময়ে।“

শায়খ মুসা (র), বড় পীরের ছেলে, বাবার বর্ণনায় বলেন,”একদিন

একদিন এমন এক বিজন প্রান্তরে অবস্থান করছিলাম যেখানে খাবার-পানীয় কিছুই ছিল না। হঠাৎ আকাশ ঘিরে মেঘ এলো এবং বর্ষিত পানি পান করলাম”।  

চারিদিক প্লাবিত করা মেঘের মধ্য থেকে এক তীব্র জ্যোতি দেখা দিল এবং ওই জ্যোতির মধ্য থেকে কণ্ঠ ভেসে এল,”আমি তোমার সাধনায় খুশি হয়ে তোমার জন্য সব হারামকে হালাল করে দিলাম।“

বড় পীর আউজুবিল্লাহ পড়ে মরদুদকে দূর হওয়ার আদেশ দিলেন।মেঘ ও আলোকচ্ছটা দূর হয়ে এবার  ভেসে  এলো, ”তোমার এলম ও তত্ত্বজ্ঞানের জন্য বেঁচে গেলে নইলে এই মরু প্রান্তরে আমি ৭০ জন সাধককে পথভ্রষ্ট করেছি।“

গাউসুল আযম উত্তর দিলেন, ”এলম বা ফিকাহের মাধ্যমে না, আমি রক্ষা পেয়েছি আল্লাহ্‌র দয়া, করুণা, ও তাঁর বিশেষ তত্ত্বাবধানের কারণে।“

কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, সর্বোপরি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াককুল তাঁকে দিয়েছিল আউলিয়া কুল শিরোমণির শ্রেষ্ঠ মুকুট।

হতাশ হওয়ার আগে কি আমরা আমাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট, পরিশ্রম, সাধনা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সততা মিলায়ে দেখেছি তাঁদের সাথে যাদের  মতো সফলতা পেতে আমরা ব্যাকুল ?

বিখ্যাত মানুষদের, শ্রেষ্ঠ মানুষদের অর্জন না দেখে যদি আমরা তাদের সাধনার পথটা দেখি এবং তা থেকে উৎসাহ নিয়ে সে জাতীয় সাধনায় নিজেরদের জীবন উৎসর্গ করি তাহলে ব্যর্থ হওয়ার, হতাশ হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না।  

গাউসুল আজমের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছেঃ

১)গুনিয়াতুততালেবিন

২) আল ফাতহুর রব্বানি

৩) ফুতুহুল গায়ব

৪) বাশায়েরুল খায়রাত

৫) আল ফুয়ুজাতুর রাব্বানিয়াহ ইত্যাদি।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *