দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার স্নানের জন্য ১০ প্রকারের জলের প্রয়োজন।
১. শঙ্খ জল ২.গঙ্গা জল ৩.উষ্ণ জল ৪.গন্ধ জল ৫.রজত জল ৬.স্বর্ণ জল ৭.মুক্তা জল ৮.শর্করা জল ৯. বৃষ্টি জল ১০. শিশির জল।

সনাতন ধর্মমতে পুরাণ অনুযায়ী পবিত্র জল ও রাগসঙ্গীত:
দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পূজায় যে পাত্রে পবিত্র জল রাখা হয় সেই পাত্রের জলের সাথে এক একটি রাগ সংযুক্ত থাকে।

প্রথম পাত্রে গঙ্গার পবিত্র জল থাকে যার সঙ্গী হয় মালব রাগ। দ্বিতীয় পাত্রে থাকে বৃষ্টির জল আর সঙ্গী হয় ললিত রাগ।
তৃতীয় পাত্রে থাকে স্বরস্বতী নদীর জল, সঙ্গী হয় বিভাস রাগ। চতুর্থ পাত্রে থাকে সমুদ্রের জল সাথে তরঙ্গায়িত ভৈরবী রাগ।
পঞ্চম পাত্রে থাকে পদ্ম-পরাগ মিশ্রিত পবিত্র জল সাথে গৌর রাগ। ষষ্ঠ পাত্রে থাকে ঝর্ণার জল সাথে বরারি রাগ। সপ্তম পাত্রে থাকে সমস্ত পবিত্র স্থানের জল সাথে থাকে বসন্ত রাগ। অষ্টম পাত্রে থাকে পবিত্র জল সাথে থাকে ধানসি রাগ।

পূজায় জল ও রাগ সংগীতের (দ্রুপদী সংগীতের) ইতিবৃত্ত:
৩০০০ বৎসর আগের মহেঞ্জোদাড়ো, হরপ্পার সংস্কৃতিতে সংগীত ও নৃত্যের প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। সংগীত মূলতঃ খাদ্য, বৃষ্টি, বিপদ থেকে পরিত্রাণ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে চর্চা করা হতো। তখনকার লোকেরা মাতৃরূপিণী এক দেবীর উপাসনা করতো যা উর্বরা শক্তির প্রতীক। সেখানকার সীলমোহরে ”স্বস্তিকা” চিহ্নের উপস্থিতি ভারতীয় বিভিন্ন ধর্মের যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের অনুষঙ্গের সাথে সুক্ষ সম্পর্কে সম্পর্কিত।
পরবর্তীতে বৈদিক যুগে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা ও অধ্যাত্বিকতা চর্চায় রাগ সংগীত প্রচলিত ছিল। নারোদিও শিক্ষায়ও সংগীতের প্রসঙ্গ আছে।

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সংগীত ও নাট্য বিষয়ের শাস্ত্র “নাট্যশাস্ত্র” ২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রচিত। এক্ষেত্রে ভরত মুনির অবদান অশেষ। জয়দেবের “গীতগোবিন্দ”,দেবগিরী রাজ্ দরবারের পন্ডিত শার্ঙ্গদেব,হযরত আমীর খস্রু (দাদরা টপ্পা ঠুমরী কাওয়ালী খেয়াল ইত্যাদির স্রষ্টা), বিজয় নগরের গোপাল নায়ক ভারতীয় সংগীতে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন।

গুপ্ত যুগকে সংগীতের স্বর্ণালী যুগ থাকে। পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দে পুরন্ধর দাশ কর্ণাটকী সংগীতকে অনেক উঁচুতে নিয়ে আসেন। সংগীত চর্চার জন্য “গান্ধর্ব্যশাস্ত্র”রচিত হয়। রামচন্দ্র গান্ধর্ব্য শাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন। এঁরা সংগীতকে উপাসনায় ব্যবহার করতেন, আনন্দ ফুর্তির জন্য না।

পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দে জৌনপুরের সুলতান হোসাইন শর্কী (জৌনপুরী, সিন্ধু ভৈরবী, গৌড় শ্যাম ইত্যাদি রাগ সৃষ্টি করেন ), ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের সময়ে তানসেন,নায়ক বৈজু, রামদাস, তান তরঙ্গ খান। তানসেন দরবারী কানাড়া,মিয়াকী মল্লার প্রভৃতি রাগ সৃষ্টি করেন।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে পন্ডিত দামোদর মিশ্র “সংগীতদর্পণ” পুস্তকে রাগমালার “ধ্যানরূপ” রচনা করেন। শাজাহানের সময়ে লাল খাঁ, দৈরঙ্গ খাঁ সংগীতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন। আওরঙ্গজেব সংগীত সমাহিত করলে দাক্ষিণাত্যের পন্ডিত ভেঙ্কটমুখী সপ্তকের শুদ্ধ ও বিকৃত স্বরের সাহায্যে ৭২টি ঠাট তৈরী করেন। মোহাম্মদ শাহের সময়ে তানসেনের দৌহিত্র নিয়ামত খাঁ (সদারঙ্গ উপাধি) বিলম্বিত খেয়াল রচনা করেন।

পন্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডে সমস্ত রাগকে ১০ ঠাটের অন্তর্গত করে যে অবদান রাখেন তার জন্য তাঁকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের জনক বলা হয়।

বড়ে গোলাম আলী,আলী আকবর খান, হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া,শুভলক্ষী,বিসমিল্লা খাঁ,রবি শংকর, জাকির হোসেন,শিব কুমার শর্মা, অজয় চক্রবর্তী সহ অগণিত প্রবাদ প্রতিম উচ্চাঙ্গ সংগীত ব্যাক্তিত্ব ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

যে সংগীত ছিল প্রার্থনার তা ক্রমে ক্রমে উপাসনা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। সংগীত ছিল অতীন্দ্রীয়ের সাথে তন্ময় সংযোগের মাধ্যম।

যেহেতু সনাতন ধর্মে সংগীতকে আরাধনার অংশ হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হতো তাই আজও দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পূজায় জলের সাথে উচ্চাঙ্গ সংগীতের বিভিন্ন রাগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *