ছেলেটা কলেজে যাওয়া আসার পথে শো রুমে চমৎকার স্পোর্টস কার দেখতো আর ভাবতো গ্রাজুয়েশান হলেই সম্পন্ন বাবাকে বলবে এই গাড়িটা কিনে দিতে।

বলেও রেখেছিল বাবাকে।

উদ্যম, উৎসাহ আর উৎকণ্ঠার দিন সহজে শেষ হতে চায় না।

গ্রাজুয়েশানের দিন অস্থির পায়চারী করছিল ছেলেটা কখন বাবা ডেকে গাড়ীর চাবিটা দেবে।
নিদিষ্ট দিনে বাবা তার রিডিং রুমে ছেলেকে ডেকে বল্লেন এমন একটা ছেলের বাবা হিসেবে তিনি কত গর্বিত! এর পর একটা রঙিন কাগজে মোড়ানো বক্স হাতে দিলেন।

উৎকণ্ঠিত, উত্তেজিত ছেলে তাড়াতাড়ি খুলে দেখতে পেল চামড়ায় বাঁধানো একটা বাইবেল। উপরে ছেলের নাম স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত।
বিরক্ত ও হতাশ ছেলে উচ্চ কণ্ঠে বাবাকে বলল যে তোমার এত সম্পদ থাকতে আমাকে দিলে এই বাইবেল!! এবং ঝড়ের বেগে ঘর থেকেই না, বাবার বাড়ি থেকেই বের হয়ে গেলো।

অনেক বছর পর। প্রতিষ্ঠিত, সম্পদশালী ছেলের মনে পড়লো গ্রাজুয়েশানের পর আর বাবার সাথে দেখা করা হয় নাই। বাবা এত দিনে বৃদ্ধ হয়ে গেছে। একবার দেখা করে আসলেই ভালো। তাই বাবার বাড়ির দিকে ছুটল।

যাত্রার মুহূর্তে একটা টেলিগ্রাম এলো বাবার মৃত্যু সংবাদ নিয়ে। এও লিখা ছিল যে বাবা তার সমস্ত সম্পদ এই ছেলের নামে উইল করে গেছেন।

মনে পড়তে লাগলো ছোট বেলার আদর, অভিমান আর ভালবাসার কথা। বাবা বলতেন একদিন তিনি থাকবেন না। তোমাকেই হাল ধরতে হবে। তুমি তৈরি হও।

“আসবে আবার আসিন হাওয়া, শিশির ছেঁচা রাত্রি,

থাকবে সবাই থাকবে না এই, মরণ পথের যাত্রীই।“

ছেলে বাবার মৃত দেহের কাছে পৌঁছালো। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার পর বাবার গুরুত্ব পূর্ণ কাগজপত্র ঘাটতে যেয়ে দেখল সেই বাইবেলটা আজো তেমনই আছে ঝক ঝকে।

ছেলে খুলল বাইবেলটা। পাতা উল্টাতে যেয়ে দেখল “আদর্শ মানুষ হওয়া সম্পর্কিত কিছু বাক্য আন্ডারলাইন করা।“ শেষে ছিল সেই চমক। বাইবেলের পিছনের কভারের সাথে লাগানো ছিল সেই স্পোর্টস কারের চাবিটা।!!

একটা ট্যাগ লাগানো ছিল। ট্যাগে সেই ডিলারের নাম যেখানে ছেলে স্পোর্টস কার দেখতে দেখতে কলেজে যেতো।
লেখা ছিল, “Paid in Full.”

বোকা ছেলেটা সেদিন বোঝে নাই। বোকা ছেলেরা বোঝে না।
বোঝে, তবে বাবা হওয়ার পর।

আমাদের সমাজের অনেক ছেলেকে দেখি “বোবা-কান্না-চাপা-তামাটে-বাবা” কে সামর্থ্যের বাইরের বায়না ধরে আরো পাণ্ডুর করে দেয়। আমার এই লেখায় যদি কোন অবুঝ ছেলের বোধোদয় হয় তবে আমার এ সময় ও শ্রম বিনিয়োগ সার্থক হবে।

আমি ধ্রুপদী সঙ্গীত শোনার মানুষ। পঞ্চ গীতি কবিতেই মুগ্ধ ও মগ্ন। তবে জেমসের এই গানটা মাঝে মাঝে হেড ফোনে একা একা শুনি।

ল্যাপটপের স্ক্রিন, চশমা মোছার পরে বুঝি ঝাপসা ল্যাপটপ বা চশমা না, ঝাপসা আমার চোখ।

“বাবা কতদিন দেখিনা তোমায়, কেউতো বলেনা তোমার মতো
কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়, বাবা কত রাত কত রাত দেখিনা তোমায়।
আজানের ধ্বনি আজো শুনি, ভাঙবে না ভোরে ঘুম জানি
শুধু শুনিনা তোমার সেই দরাজ কণ্ঠে পড়া
পবিত্র কোরানের বাণী।“ – জেমস

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *