ব্যক্তিত্তের সাথে আত্মসম্মানবোধের সম্পর্ক নিবিড়। হংস-মিথুনের মতো।
ব্যক্তিত্ববান মানুষের আত্মসন্মানবোধ তার-সপ্তকের চড়া সুরে বাঁধা থাকে। আবার আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষের ব্যক্তিত্ব গিরিরাজ হিমালয়ের মতো স্তব্ধ, অটল। তারা কোন অবস্থায়ই অন্যায়, অনিয়মের সাথে আপোস বা সমঝোতা করতে রাজী না।
এ কারণে তাদেরকে সমাজে অনেক ঠগতে হয়। ‘ঠগে যাচ্ছে’ এ টুকু বোঝার ঘিলু তাদের থাকা সত্ত্বেও ঐ যে আত্মসন্মানবোধের জটিল যন্ত্রণায় ‘রা’ করে না। মেনে নেয়।
সমস্যা হচ্ছে, এই জাতীয় মানুষের সংখ্যা ক্রম-বিলীয়মান। বিরল প্রজাতির মতো এরা ঘরের কোণে, সমাজের কোণে, দৃষ্টির আড়ালে দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে, তবে একলা।
এরা নিরীহ। এরা নির্ঝঞ্ঝাট। এরা নির্বাকও।
এদের মানসিকতা ও নীতি নীচের রাবিন্দ্রীক চরণগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছেঃ
“আমারে না যেন করি প্রচার আমার আপন কাজে,
তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ আমার জীবনমাঝে।
যাচি হে তোমার চরম শান্তি, পরানে তোমার পরম কান্তি,
আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও হৃদয়পদ্মদলে।
সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে।”
এদের মতোই দেখতে একটা জটিল কপি বাজারে পাওয়া যায়, মুখোশ পরা। কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডার বা নাটোরের সন্দেশের মতো চেনা বড় কষ্টের। এই কপিগুলোয় সমাজ সংসার ভরা। মুখোশ দেখে ভুলে গেলে, সহজভাবে নিলে আখেরে পস্তাতে হয়।
ভোগবাদী সমাজের লোভ, লালসা এদেরকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে তাদের তথাকথিত ব্যক্তিত্ব বা আত্মসন্মানবোধ তাদের দৈনন্দিন আচরণের ঘষায় ‘মেকী-মেকআপ’-এর মতো উড়ে যায়।
সত্যিকারের আত্মসন্মানবোধ সম্পন্ন মানুষের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে অন্যের সাথে মিশতে যেয়ে এরা কেউ কেউ কখনো কখনো নিজেকে অন্যের স্তরে নামায়ে নিয়ে আসে। এটা তার বদান্যতা, উদারতা, নিরহঙ্কার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। জটিলতা হচ্ছে, অন্য ব্যক্তি এই উদারতাকে ভুল বোঝে। তাকে হেলায় হিসেব করে। যথাযোগ্য মর্যাদায় না।
কোথায় এই বদান্যতার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, তা না করে উল্টো তাঁকে হাট বাজারের হাস মুরগীর মতো সস্তা মনে করে তার কাঁধে হাত রাখতে চায়, যার যোগ্য সে না। তার বিনয় যে দুর্বলতা না এটা বোঝার ক্ষমতা তার বা তাদের নেই।
সমাজের এই গুটিকয়েক মানুষের মর্মজ্বালা অগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক কিন্তু এদের এ গুমরে মরা কষ্ট বোঝার কেউ নেই।
কিন্তু এই মানুষগুলোর মতো মানুষের সংখ্যা যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকতো তাহলে সমাজ সংসারের এই অস্থির দূষণ কমতে থাকতো। আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এই মূল্যবোধের চর্চায় একটু যত্নবান হতো তাহলে দিল্লী অনেক দূর হতো না!
1 Comment
Mehedi Hasan · March 14, 2022 at 12:16 pm
Thank you, sir, for sharing your thought.