চাকুরী জীবনে মেন্টর বা গুরুর ভুমিকাঃ ০২

আমার অনেক ট্রেনিং সেশানে একটা চিত্রকল্প বলেছি এমনঃ

রৌদ্র দগ্ধ তপ্ত দুপুরে এক বৎসরের বাচ্চকে কোলের মধ্যে নিয়ে এক ঘর্মাক্ত জননী রান্না করছেন । টকটকে আগুনের লেলিহান শিখা সাপের জিহ্বার মতো লকলক করে অসহনীয় তাপ ছড়াচ্ছে । মায়ের কপাল থেকে ফুটন্ত ঘাম দরদর করে নামছে। কচি বাচ্চার গায়ে মুখে পড়ছে ফুটন্ত ঘাম। অবিরত কেঁদে চলছে বাচ্চাটা ।  

অদুরে দাঁড়ানো ৫ বৎসরের মেয়ে মায়ের কাছে আবদার করছে, “মা, বাবুকে আমার কোলে দাও।“ ওর কোলে দিলে মা এবং বাচ্চা দুইজনই নিস্তার পায়। কিন্তু মা বাচ্চাকে ঐ ৫ বৎসরের মেয়ের কোলে এইটুকুন বাচ্চা দিতে নারাজ।

কেন?

কারণ ৫ বৎসরের মেয়ে নিজেই ভালো করে দাঁড়াতে বা ঝোঁক সামাল দিতে শিখে নাই এখনও। ও কি করে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সামাল দেবে? ওর কোলে দিলে দুইজনই আছাড় খেয়ে ভাঙবে বা মচকাবে । তাই মা কষ্ট করে হোলেও বাচ্চাকে কোলের মধ্যে রেখেই রান্না শেষ করলেন ।

এই চিত্রকল্পের অবতারণার কারণ একটাই , আমরা প্রোমোশনের জন্য অস্থির হয়ে যাই। প্রোমোশন হলেতো কম করে হোলেও  ৫-৬টা বাচ্চার (সহকর্মীর) দায়িত্ব নিতে হবে। তুমি কি সেই যোগ্যতা অর্জন করেছো ?  ওদেরকে কিন্তু তোমার পথ দেখাতে হবে, কাজ শেখতে হবে, কোথায়ও আটকে গেলে তোমাকে তার সমাধান করতে হবে। আর তা না পারলে ওদের কাছে তুমি হাসির পাত্র হয়ে যাবে। আর কোনদিনও ওদের শ্রদ্ধামিস্রিত ভালোবাসা পাবে না । অপাঙতেয় হয়ে, হ্যাংলা হয়ে দলের মধ্যে ঘোরা ফেরা করতে হবে। দাপট দেখানোর চেষ্টা করলে ওরা হাসবে। কথা শুনতে চাইবে না ।

তোমার মেজাজ খারাপ হবে । তুমি Authority of Power এক্সারসাইজ করতে চাইবে কারণ তোমার হাতে ঐ একটাই অস্ত্র আছে। ঐ অস্ত্র ব্যাবহার করে কোন সুফল পাওয়া যাবে না । কারণ ঐ অস্ত্র সব সময় ব্যাবহারের জন্য না। ঐ অস্ত্রেরও ব্যাবহার শিখতে হবে। তোমার বিরুদ্ধে নানা কথা উঠবে। ওদের বিরুদ্ধে বসের কাছে নালিশ করে লাভ হবে না। বস তো ভাত চিবিয়ে খায়, তাই না । তোষামোদি করেও বেশীদিন বসের অনুগ্রহ পাবে না। কারণ বসেরও বস আছে। তাকেও তো কাজের হিসাব দিতে হয়?

আমি আমার কিছু প্রোমোশন-পিয়াসী সহকর্মীকে প্রোমোশনের পরে জিজ্ঞেস করেছি,” কি, কেমন লাগছে টীম চালানো ?” উত্তরে বলেছে, স্যার, “প্রোমোশন না হলেই ভালো ছিল। বাবুদের কোলে নেওয়ার সময় হয় নি আমার।“ তাদের কেউ এই লেখা পড়লে আমি বিশ্বাস করি তারা আমাকে ফোন করবে। আনন্দে কিছুক্ষণ গল্প করবো আমরা।   

এমন ম্যানেজারের হাতে পড়লে জুনিওর সহকর্মী কি শিখবে আর কেমন আচরণ পাবে তা সহজেই অনুমেয় ।

তাহলে উপায়???

উপায় একটাই, Entry Level বা Executive Level থেকে সমুদ্র মন্থনের মতো মন্থন করে কাজের অমৃত আর গরল বের করে ফেলতে হবে। তোমার কাজ এমন নিপুণ ভাবে করবে যে চরম শত্রুও যেন,তোমার না হোক, তোমার কাজের প্রসংশা করতে বাধ্য হয় ।  তোমার Industry বা  Segment ছাড়াও Entire Business  ও অন্যান্য বিষয়ে তোমার জ্ঞানের আলোক শিখা ওদের চোখ ধাঁধায়ে দেবে। বলতে এবং মানতে বাধ্য হবে Yes, He is a true Professional.

তাহোলে লেগে যাও তোমার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দায়িত্ব চুলচেরা শিখতে । আরও শেখো মানুষ চালানোর নানা কৌশোল গুলো ।

মনে রেখো, “Authority flows to him/her who knows”। এর কোন বিকল্প আমি আজো পাইনি।

(আগের কিস্তিতে আপনাদের অনেক সুন্দর কমেন্ট দেখেছি। এর পরের কিস্তিতে কি লিখবো আপনারাও বলতে পারেন।)

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *