জীবনে অনুতাপ কিভাবে এড়াবে?

জীবনের সংজ্ঞায় সক্রেটিস বলেছিলেন ,”মৃত্যু শয্যায় যদি কোনো অনুতাপ না থাকে তবে সেটাই সফল জীবন।”

আমরা পথিকের মতো কিছু সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে আসি যা মহাকালের বিচারে অতি নগণ্য,  কিন্তু সেই সময়টাকে আমরা অনন্ত বলে ভেবে নেই। যার ফলে কোনো তাড়া বা তাগীদ অনুভব করি না। আমরা পরিবর্তনে ধীরগতি, নিজেদের সমালোচনায় বিলম্বিত লয়, এবং গভীর চিন্তায়ও নেই আগ্রহ। আগামীকাল তো আছে, তখন পরিবর্তন করবো, এখন যেমন চলছে চলুক।

সক্রেটিস আরো বলেছিলেন, “The unexamined life is not worth living.” “অপরীক্ষিত জীবন, যাপনের উপযুক্ত জীবন না। ” অর্থাৎ যে জীবনে ঝড়-ঝঞ্ঝা আসে নাই, প্রলয়ের তান্ডবে তছনছ  হয় নাই সে জীবন আসলে উপভোগ্য জীবন না।

তুমি কি অর্জন করতে চাও সেই প্রশ্ন-না-করা-জীবন উপহাস ছাড়া আর কিছুই না। তার পরও আমরা বারে বারে  একই ভুলের আবর্তে ঘুরে মরি।

অনুতাপ এমন এক অনুভূতি যা আমরা জীবনের কোনো না কোনো এক বাঁকে অনুভব করি। জীবনে অগণিত মুহূর্ত আসে যখন যা করা প্রয়োজন ছিল তা না করে অন্য পথে স্বেচ্ছাচারীর মতো অন্য কিছু করি আর আশানুরূপ ফল না পেয়ে অনুযোগ করি।

এমন সময়ও আসে যখন আমরা আমাদের  স্বপ্নকে অনুসরণ করি না,স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করি না, সহজ পথ ধরি। যতক্ষণ না আমরা এই অভ্যাস পরিবর্তন করবো ততক্ষন ঘ্যান ঘ্যান  অনুযোগ চলতেই থাকবে।

Susie Steiner অনুতাপ না করার জন্য কিছু পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছেন।  পাঁচটি অনুযোগের কথা তিনি বলেছেন যা খুবই সহজ কিন্তু পূর্ণ না হলে অনুযোগের কালো মেঘে সব ঢাকা পড়ে।

১. আমার ইচ্ছা, আমার মতো করে আমার জীবন পরিচালিত করি, অন্যেরা আমার যে জীবন প্রত্যাশা করে সে জীবন না।

২. মনে হয় এতো কঠোর কঠিন পরিশ্রম না করলেও পারতাম।

৩. যদি আমার অনুভূতিগুলো সত্যি সত্যি প্রকাশ করতে পারতাম!

৪. যদি আমি আমার আপনজন, বন্ধুদের সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে পারতাম।

৫. যদি আমার জীবনকে আরো সুখী হতে দিতাম !

আমরা মানুষেরা যত বয়স পার করি, আর ফেলে আশা হারানো সুযোগ (যা আর ফিরে পাওয়া যাবে না) আর সময়ের দিকে করুণ  দৃষ্টিতে তাকায়ে ভাবি, এই দম বন্ধ করা অন্ধ গলিতে কি কোনো পথ খোলা আছে প্রায়শ্চিত্ত করার, সংশোধন করার ?

                                              অনুতাপ ছাড়া কি জীবন সম্ভব ?

জীবনে অনুতাপের যন্ত্রনা থাকবে। এটা এড়ানোর কোনো পথ খোলা নাই। কিন্তু আমরা একটা চিন্তা করতে পারি, সে অনুযায়ী কাজ করতে পারি যাতে অনুতাপে পূর্ণ  জীবনাবসান না হয়।

Cornell University-র  Psychology Department-এর গবেষক  Thomas Gilovich গবেষণায় দেখিয়েছেন যে আমরা যে কাজ করি নাই তার জন্য অনুতপ্ত হই ।  যে কাজ করে চলি তার জন্য অনুতাপ করি না। যদিও কঠোর পরিশ্রম করা ‘একটা কাজ ‘ কিন্তু জীবনের অনেক লক্ষ্য বা স্বপ্ন কঠোর পরিশ্রমের বাইরে থেকে যায় যা পরবর্তীতে গভীর অনুতাপ ও বিষাদের জন্ম দেয়।

গিলভিচ তার গবেষণায় আমাদের দুইটা সত্ত্বার সন্ধান দিয়েছেন : ‘Ideal-Self’ এবং ‘Ought-Self’. “Ideal-Self”-জীবনের সব ইচ্ছা আর সাধ পূর্ণ করলে যে আমি হতাম। “Ought-Self”-অন্যদের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে যে আমি হতাম। 

মানুষ ‘Ideal-Self’-এ ব্যার্থতায় বেশী অনুতপ্ত হয় ‘Ought-Self’-এর ব্যার্থতার চেয়ে। মৃত্যু পথযাত্রী আত্মীয়কে দেখতে যেতে না পারার  চেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ না হওয়াতে মানুষ বেশি  অনুতপ্ত হয় ।

অন্যের প্রতি কর্তব্যে ভুল হয়ে  গেলে বেশি শ্রম দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব কিন্তু নিজের ‘অপূর্ণ স্বপ্ন’ অধরাই থেকে যায়, কালো পর্দার অন্তরালে, আরো মিশমিশে কালো অনুতাপের মেঘের জন্ম দিতে।

এই জন্যে নিজের যা কিছু আছে তাই নিয়ে সুখী থাকা পরবর্তীতে সুখী থাকার পূর্বশর্ত।  কারণ হিসেবে আবারও সক্রেটিসের বাণী: “He who is not contented with what he has, would not be contented with what he would like to have.” – Socrates

অনুতাপ এড়াতে আমাদের কাজ করতে হবে, অলস বসে থাকলে চলবে না। শেষ পর্যন্তু অনুতাপে জারিত হওয়ার জন্য জীবন বড়োই সংক্ষিপ্ত। জীবন বসে থাকে না।  চারিদিকের পৃথিবী বদলে যাচ্ছে।  হঠাৎ একদিন দেখবে মরুতীর্থের শেষ তৃষ্ণার্ত যাত্রীর মতো ভয়াল আর্ত  দৃষ্টিতে চতুর্দিকে তাকাচ্ছ কিন্তু সাথীরা দৃষ্টিসীমার ওপারে। অনুযোগ এড়াতে হলে যে জীবন তুমি যাপন করতে চাও তা শুরু করো।  তবে তা সমাজ সংসারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখায়ে না।

মনে রাখতে হবে সুখী হওয়া ‘পসন্দের ‘ব্যাপার।

জীবনে এমন সময় যদি আসে যখন  বুঝতে পারছো না কাজটা করবে কি করবে না তখন তোমার অন্তরকে প্রশ্ন করো,” আচ্ছা, এই কাজ করলে কি পরবর্তীতে কোনোদিন আমাকে অনুতপ্ত হতে হবে ?”

এর বাইরে অনুতাপ এড়ানোর কোনো সহজ পথ খোলা নাই।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *