আমাদের শিক্ষায় মেধা, সময় ও অর্থের অপচয় সবচেয়ে বেশী।

আমাদেরকে এম এ পাশ করতে হবে। এম বি এ করতে হবে। কেন করতে হবে তার সুস্পষ্ট ধারনা  অনেকেরই নেই। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলছি। বই, গুগল, ইউটিউব  থেকে না। 

আমাদের গার্ডিয়ানরা আমাদেরকে শিক্ষিত করতে চান কিন্তু কি শিখলে পেশাজীবনে সাফল হওয়া যাবে তা অনেকেই জানেন না ও বলতে পারেন না। তাঁরা শুধু সন্তানদেরকে টাকা পয়সা ও অন্যান্য সহযোগিতা করে যান। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম লেখাপড়ার বেলায় চারটা  বিষয় সস্পষ্ট করে বলে দিয়েছে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য। এর বাইরে শিক্ষকতা, গবেষণার জন্য অন্য বিষয় থাকতে পারে তবে তা সবার পড়ার দরকার নাই।

সেই ৪ টা বিষয় হচ্ছেঃ  STEM. Science, Technology, Engineering and Mathematics. অর্থাৎ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিক্স। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের বিরাট অংশের ছেলে মেয়েরা এই বিষয় গুলোয় ভয় পায়। তারা তাড়াতাড়ি  ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা সাহিত্য, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করেন যাতে সহজে সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন। 

আমার কর্পোরেট জীবনে দেখা অনেক ছেলেমেয়েরা তাদের পঠিত বিষয়ের একেবারে ব্যাসিক বা প্রাথমিক বিষয়েও কথা বলতে পারে না।  

এই যদি হয় শিক্ষার মান তাহলে সেই শিক্ষা দিয়ে কি বৈতরণী পার হওয়া যাবে? বাধ্য হয়েই তারা বলেন চাচা মামা না হলে চাকরি হয় না। ঘুষ না দিলে চাকরি হয়না।

এমনকি ব্যবসা করতে গেলেও কিছু ধারণা দরকার। ব্যবসা না বুঝে ব্যবসা করতে যাওয়া আর টাকা নিয়ে ম্যাকাউ’এর জুয়ার আসরে বসা একই জিনিস। 

এবার যদি পাশের দেশ ভারতের লেখাপড়ার বর্তমান হালত নিয়ে আলোচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে তারা আমাদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে। হিংসা করে তো প্রতিযোগিতায় যেটা যাবে না। নিজেকদেরকে তৈরি করতে হবে।   

বিশ্বে সব চেয়ে বেশী সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পাঠাচ্ছে ভারত। ৫০ লাখেরও বেশী সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছে ভারতে। গত ৬ মাসে ১০,০০০ এরও বেশী স্টার্ট আপ নিবন্ধন হয়েছে ভারতে। 

ইঞ্জিনারিং পড়ার ক্ষেত্রে ভারতিয়রা অনেক এগিয়ে। ১৬-১৭ বয়সী ভারতীয়দের মধ্যে ৮০% ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় অথচ এই বয়সী ব্রিটিশদের ২০% মাত্র ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। আর এই বয়সী মার্কিনীদের ৩০% ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। 

ভারতে ২০১৩-১৪ সালে ৪০০০ হাজার পেটেন্টের যায়গায় গত বৎসর ২৮০০০ পেটেন্ট অনুমদন পেয়েছে। ২০১৩-১৪ সালের ৭০,০০০ হাজার ট্রেড মার্ক রেজিস্ত্রেশানের যায়গায় গত বৎসর আড়াই লক্ষ ট্রেড মার্ক রেজিস্ত্রেশান হয়েছে। 

এই সংখ্যার উল্লম্ফনের চিত্র বলে দেয় ভারত কোন পথে হাঁটছে। 

আমাদের এখনও সময় আছে শিক্ষার গতিপথ পরিবর্তন  করার। যারা আলরেডি শিক্ষার মাঝপথে বা শিক্ষা শেষ করে ফেলেছেন, তারাও একটু চেষ্টা ও কষ্ট করে যদি এই  STEM জাতীয় শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত  করে তুলতে পারেন তাহলে আগামী দিনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ সামাল দেওয়া অনেক কঠিন হবে না।

প্রয়োজন একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে সামনের দিনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া। সবই সম্ভব যদি নাকি আপনি বোঝেন ও সে অনুযায়ী আমল করেন।

If it is to be, it is up to me. অর্থাৎ যদি এটা হতেই হয় তবে তা আমিই পারবো। 

Categories: Career Growth

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *