“The greatest discovery of my generation is that a human being can alter his life by altering his Attitude.” William James.

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের আমেরিকান দার্শনিক, ঐতিহাসিক এবং মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমসের উপরের কথাগুলো বর্তমানের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক।

মানুষের বিশাল আবিষ্কার এই যে মানুষ তার Attitude পরিবর্তন করে জীবনকে পরিবর্তিত করতে পারে। Attitude বলতে আচরণ, মনভাব, ধারণা ইত্যাদি বুঝায়।

করনাক্রান্ত পৃথিবীতে আমরা শঙ্কা, উদ্বেগ নিয়ে দিনাতিপাত করছি। সমাজের বৃহৎ অংশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। হাত পাততে না পারার দুঃসহ যন্ত্রণায় দিনাতিপাত করছে অগণিত মানুষ। চাকুরীজীবী চাকরী হারাচ্ছে। যে চাকরীতে টিকে আছে তার বেতনে হাত পড়ছে। কিন্তু বাড়িভাড়া, অন্যান্য খরচ উজানমুখী।

লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার হাহাকার করছে। নতুন চাকরী নাই। তাদের স্বপ্নগুলো কয়লা হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত বেকার মেয়েদের সমস্যা আরও প্রকট। ক্যারিয়ার নাই। জীবন ও সমাজের বাঁধা আইনে তার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। এ সমাজ একটা ত্রিশ অতিক্রান্ত ছেলের বিয়ে নিয়ে কেউ কিছু বলবে না কিন্তু একটা মেয়ে এমন হলেই নানা অবরোধ!

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বাচ্চাগুলো দম বন্ধ হয়ে, মানষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে ঘরের মধ্যে, ঘোরের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কেউ কেউ ভুল পথে যাচ্ছে। খবর পাই দুই একজন আত্মহত্যাও করছে।

গোঁয়ার্তুমি করে যারা বলেছিল আমাদের করোনা হবে না, এখন তাদেরও হচ্ছে। গ্রামের ঘরে ঘরে করোনার তাণ্ডব উল্লাস! কৃষিই একমাত্র ক্ষেত্র যা সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। এই কৃষির দরোজায় বিপদ কড়া নাড়ছে। করনার আসল ভোগান্তি শুরু হয় নেগেটিভ হওয়ার পর। গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাদের উৎপাদনশীলতায় ভাটা পড়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।

দুনিয়াভর করোনা আবার অতিথি হয়ে হাজির। দেশে দেশে লকডাউনের জন্য পুলিশি ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

আকস্মিকভাবে কানাডায় প্রচণ্ড গরমে পাঁচ সাত শত লোকের মৃত্যু। জার্মান, বেলজিয়ামের চোখের পলকে বন্যায় শত শত লোকের মৃত্যু। আমেরিকার দাবানল। চীনের ভয়াবহ বন্যা। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিতে অপরাগ। তারা স্বীকার করেছেন যে তাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে এই আচমকা বিপর্যায়ের আগাম সংবাদ দেওয়া সম্ভব না। আমাদের করা পাপের পাওনা পরিশোধ করছি কারণ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে কসুর করে না!

তাহলে কি করার আছে?

সমস্ত অস্বাভাবিকতা থেকে স্বাভাবিক আচরণে ফিরে আসা। অদমনীয় বা অনিয়ন্ত্রনীয় ঘটনাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা। নিজের Attitude পরিবর্তন করার চেষ্টা করা। কারণ অনিয়ন্ত্রনীয় ঘটনার বিপরীতে যুদ্ধ করতে যেয়ে আরও ক্ষতিই হবে, লাভ কিছু হবে না।

সচ্ছল ও ধনীদের বিরল সুযোগ এসেছিল মানুষের জন্য কিছু করার। মহামারী যেমন শতবর্ষে আসে, মহাসুযোগও সব সময় আসে না। এই সুযোগে চাকরী না খেয়ে, বেতন না কেটে যদি তাদেরকে কিছুদিন ‘এহসান’ করতেন সেটাই হতো আপনাদের শ্রেষ্ঠ সি এস আর! লঙ্গরখানা খুলে যদি কিছু অনাহারী   মানুষদেরকে খাওয়াতেন সে খাবার প্রকারন্তরে স্রষ্টার মুখেই যেতো।

কিন্তু আপনারা পায়তারা করছেন আরও কামাই করা যায় কিভাবে! আপনার মহাকাশে যাচ্ছেন! মহাকাশের বানিজ্য নিয়ে হিসাব নিকাশ শুরু হয়ে গেছে!  

আপনাদের অনেকের যে অঢেল সম্পদ তার সবটুকু পৈতৃক সুত্রে পাওয়া না। কিছু পরিবার অবশ্যই আছে যারা উত্তরাধিকার সুত্রে অনেক পেয়েছেন। সেটাও ধরে রাখতে ও বৃদ্ধি করতে এই দেশের আহাম্মক কামলাদেরকেই লেগেছে।  এই দেশ, এই দেশের জানোয়ারের মতো খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অমানুষিক শ্রম, বঞ্চনা আপনাদেরকে চর্বিওয়ালা করেছে। করদাতাদের করের টাকায় পড়াশুনা করে আপনারা সুদ আর লাভ করার শাইলকি গণিত শিখেছেন। করদাতাদের টাকায় গড়া রাস্তায় আপনাদের বি এম ডাব্লিউ ও আপনাদের পণ্যের ট্রাক চলে।

মহাকাল কাউকেই ক্ষমা করে না। ইতিহাসের চাকা ঘুরে ফিরে আসে। কারুন তার সব সম্পদ নিয়েই ডুবেছিল। মুসা (আঃ) আজো মানুষের মনের গভীরে! নিকট অতীতে কবরে চলে যাওয়া কিছু সম্পদশালীদের কথা মনে পড়ে? কতটুকু সফলতা ও শান্তি পেয়ে গেছেন তারা?

ভাঙ্গা রাজবাড়ী দেখলে আমি সবসময় একটু স্থির হয়ে দাঁড়াই। সুদূর অতীতে ফিরে যাই। সেই যৌবন মদমত্ত জমিদাদের রাজমহল, নাচ মহল, বাইজীর ঘুঙ্গুরের নিক্বণ, পায়রা উড়া, ঝিরঝিরে বাতাসে দীঘির ঘাটের সিঁড়িতে বসে মাছেদের খেলা দেখা আরও কত কি??

তখন মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথঃ

“যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,

কাঁটালতা উঠবে ঘরের দারগুলায়, আহা,

ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পড়বে সজ্জা বনবাসের,

শ্যাওলা এসে ঘিরবে দীঘির ধারগুলায়-

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,”

 এইতো জীবন। আপনাদের ধনভাণ্ডারে কত যে মানুষের রক্ত লুকানো! কত যে মানুষের হক কেড়ে নেওয়া! তপস্যা করে কি হবে? হাজার রাতের চেয়ে উত্তম যেমন লায়লাতুল কদর তেমনই শত বছরের চেয়ে উত্তম এই নিদানের বছরগুলো আপনাদের জন্য যদি কিছু পুন্য অর্জন করতে চান।

“তোমরা রহিবে তে’তলার পরে আমরা রহিব নীচে,

অথচ তোমাদের দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!”

আপনাদের প্রতি সাধারণ মানুষের এমনই ধারণা। বিশেষ হয়ে, বিচ্ছিন্ন হয়ে ওঠা যায়, সুখী হওয়া যায় না। শান্তি পাওয়া যায় না। সম্পদশালীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি।

Categories: Uncategorized

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *